পাউবোর বাঁধে বদলে যাবে কর্ণফুলীর তীর

87

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নেয়া মেগাপ্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে কর্ণফুলীর ডান তীর। জলাবদ্ধতা নিরসন ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পর্যটনে এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে এ প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হবে। সরকারি আদেশ পাওয়ার পর এখন পুরোদমে চলছে রেগুলেটরের নকশা তৈরির কাজ। গত ২৭ ফেব্রæয়ারি এক কোটি ৬২০ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পটি একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। দীর্ঘ তিন বছর ধরে প্রকল্পটি বিভিন্নভাবে কাটছাট করা হয়েছে। এ প্রকল্পে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এর পাস হওয়া প্রকল্পগুলোর অংশ বাদ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর জলাবদ্ধতা রোধে সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি কর্ণফুলীর ডান তীরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করবে। এ বাঁধকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে।’
পাউবো সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও হাটহাজারী অংশে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের অধীনে নেভী থেকে ১৫নং ঘাট পর্যন্ত ২.৭ কিলোমিটার এলাকা প্রতিরক্ষা দেয়াল, ১৫নং ঘাট থেকে বন্দর সীমানা পর্যন্ত ৮.০৬৫ কিলোমিটার এলাকা, কোস্টগার্ড এলাকা থেকে নতুন ব্রিজ (বন্দর সীমানা) পর্যন্ত ৪.৪০ কিলোমিটার, কালুরঘাট ব্রিজ থেকে মদুনাঘাটের কাটাখালী পর্যন্ত ৬.৫০ কিলোমিটার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেয়া হবে। এছাড়াও ২৩টি খালের উপর বসানো হবে ৬৯টি পাম্প ও ২৩টি রেগুলেটর। ২০২২ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি, পাম্প হাউস স্থাপনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি দ্রæত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, জমে থাকা বৃষ্টির পানির যথাযথ ব্যবহার, জনদুর্ভোগ কমাতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, ব্যবসা কেন্দ্র, শিল্পাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জলাবদ্ধতামুক্ত করা, রেগুলেটর নির্মাণ করে শহরে লবণাক্ত পানি অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা, প্রতিরক্ষা দেয়ালের মাধ্যমে জোয়ার-ঝড়, বন্যা থেকে শহরকে রক্ষায় সহায়ক হবে।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট মেগাপ্রকল্পটি প্রথমবার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়। সেসময় প্রকল্পটি তিন হাজার ১৬১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। একই বছরের অক্টোবর মাসে প্রকল্পটি আরেকদফা কাটছাট করে চার হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে পুনরায় প্রস্তাব করা হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুটি প্রকল্প পাস হলে অগ্রগতির দিক থেকে প্রকল্পটি পিছিয়ে পড়ে। ২০১৭ সালের মে মাসে দুই হাজার ৫৯৪ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার বরাদ্দ চেয়ে তৃতীয় ধাপে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও পুনরায় সংশোধনের জন্য ফেরত দেয়া হয়। সর্বশেষ গতবছরের আগস্ট মাসে এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার প্রকল্পটি পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। দীর্ঘ ৯মাস ধরে দাপ্তরিক সব ধাপ পার হয়ে প্রকল্পটি একনেক সভায় পাস হলে মেগাপ্রকল্পটির কাজে গতি আসে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সিজেন চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরে বসবাসকারী ৬০ লক্ষ মানুষ এবং হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ও তৎসলগ্ন এলাকার এক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রকল্পটি থেকে উপকৃত হবে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হলে ব্যবসা বানিজ্যের উন্নতি হবে। বাড়বে আমদানি-রপ্তানি। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জিও হয়ে গেছে। রেগুলেটরের নকশার কাজ চলমান আছে। নকশার কাজ শেষ হলেই সে অনুযায়ী প্রাক্কলন করে টেন্ডার আহবান করা হবে।’