পবিত্র শবে বরাত মহামারী থেকে মুক্তি কামনায় অশ্রুনয়নে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হই

170

আজ পবিত্র শবে বরাত। হিজরি সালের মধ্যশাবানে উদ্যাপিত হয় পুণ্যময় এ শবে বরাত। শবে বরাত মুসলিম জাতির পাঁচ পুণ্যময় রজনীর একটি। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পালন করবে আজকের শবে বরাত। আরবি শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে মুসলমান সমাজ নফল ইবাদাত বন্দেগী, জিকির-আজকার ও দোয়া দরুদ পড়ে রাতটি অতিবাহিত করে থাকে। ওইদিন মসজিদে মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়। এশা নামাজের পর অতিরিক্ত নফল নামাজ এবং তাহাজ্জুদ আদায় করে থাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। মসজিদের ইমামরা বিশেষ ওয়াজ নসিহতও করে থাকেন। কিন্তু এবার এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে লায়লাতুল বরাত উদ্যাপন করবেন মুসলিম সমাজ। কারণ এবার বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, যা এতো বেশি অদৃশ্য ও ছোঁয়াচে মানুষের সাথে সংক্রমিত মানুষের সাক্ষাত হলেই, বা পাশাপাশি থাকলেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। প্রানঘাতি এ ভাইরাস এ পর্যন্ত পৃথিবীর আশি হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সংক্রমিত হয়েছে প্রায় চৌদ্দ লাখ মানুষ। বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। সংক্রমিত হয়েছে ২১৮ জন। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের এদেশের বেশ কয়েকটি জেলা লকডাউনের কবলে। গত ২৬ মার্চ থেকে চলছে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি। মহামারী এ করোনাভাইরাস অধিক সংক্রমণের কারণে ধর্মমন্ত্রণালয় দেশের ওলামা-মাশায়েখদের সাথে বৈঠক করে ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুসারে এ পর্যায়ে মসজিদে ব্যাপক জমায়াতের মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজ না পড়ে, সর্বোচ্চ ৫জন ও ১০জন নিয়ে জামাত চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। একইসাথে শবে বরাতের নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগি বাসায় বা ঘরে বসে করার আহবান জানানো হয়। আমরা আশা করি, যেকোন মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষকালীন ইসলামের যে হুকুম সেই অনুসারে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঘরে বসে লায়লাতুল বরাতের এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের করুণা কামনায় অশ্রসজল নয়নে প্রার্থনায় ব্রত হবেন। কেউ ঘর থেকে বের হবেন না, প্রয়োজনে কবর যেয়ারতও বাসায় ফাতেহাকানি তেলাওয়াতের মাধ্যমে করা যাবে।
এই কল্যাণময় রজনীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের ডাকে সাড়া দেন এবং দোয়া কবুল করেন। আমাদের দেশে ধর্মীয় বিশেষ দিন-রাতসমূহকে কেন্দ্র করে যে লৌকিক আচার-উৎসব হয়ে থাকে, বলতে দ্বিধা নেই অবশ্যই তা বাহুল্য। এতে কোন ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক কল্যাণ নেই। এবার আমাদের সেই অভ্যাস গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। আসুন, আমরা আজকের পবিত্র রাতে ঘরে বসে নামাজ আদায়, কুরআন শরিফ তেলাওয়াত, জিকির আজকার, দরুদ শরিফ পাঠ করে নিজ নিজ মা-বাবা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ সকল অসহায় মানুষের কল্যাণ কামনায় ও মহামারী করোনা থেকে রক্ষায় রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের প্রার্থনা করি।
দেশ থেকে মহামারী করোনা ভাইরাসসহ সকল প্রকার অমানবিকতা, হিংসা- বিদ্বেষ, হত্যা-রাহাজানি, অপরাধ প্রবণতা দূরীভূত হোক এ কামনায় আমরা সবাই মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে কোনরকম অধর্মের কাজ থেকে দেশবাসী মুক্ত থাকুক এ প্রতিজ্ঞা আমাদের সঠিক ধর্মীয় অনুভ‚তিকে শানিত করবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে আজকের শবে বরাত জাতীয় জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক এ কামনাই হোক দেশের সর্বস্তরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য।