নিজের সম্পত্তির হিসাব নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার

105

প্রকল্প বাস্তবায়নও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা অনেক সম্পত্তি অধিগ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নও করেছে। আরো কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। তাছাড়া ওয়াসার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্থানে আছে বিপুল সম্পত্তি। কিন্তু কোথায় কি পরিমাণ সম্পত্তি আছে তার কোনো হিসাব নেই ওয়াসার কাছে। নেই তদারকিও। এ সুযোগে অসাধু দখলদাররা দখলে নিচ্ছে ওয়াসার সম্পত্তি। আর এ দখলদারদের মধ্যে আছেন ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তাও।
দামপাড়ায় বিশাল জায়গাজুড়ে ওয়াসার প্রধান কার্যালয়। এ জায়গাটিতে পুরাতন ভবনের পাশাপশি নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় রয়েছে ওয়াসার বিশাল সম্পত্তি। সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন আগেই এ সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে ওয়াসা। সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের পাশ ঘেঁষে এই জায়গার অধিকাংশই এখন স্থানীয়দের দখলে চলে গেছে। চাষাবাদ ছাড়াও স্থানীয়রা ওয়াসার জায়গা দখলে নিয়ে করেছেন দোকানপাটও। একইভাবে ফতেয়াবাদেও রয়েছে ওয়াসার বিপুল সম্পত্তি। যার অধিকাংশই স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
তাছাড়া ওয়াসার পাম্পহাউসের জায়গা দখলে নিয়েছে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। একের পর এক জায়গা বেদখল হলেও তা উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেই চট্টগ্রাম ওয়াসার। আবার কোথায় কি পরিমাণ সম্পত্তি আছে তাও জানে না ওয়াসা। অভিযোগ রয়েছে, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটকে জায়গা দখলে নেয়ার সুযোগ করে দিতে ওয়াসার কতিপয় কর্মকর্তা সম্পত্তির হিসেব গোপন রাখছেন। বিনিময়ে পকেট ভারী হচ্ছে এসব কর্মকর্তার।
কথা হলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, সম্পত্তির হিসাব বোর্ডও চেয়েছে। আগামী বোর্ড সভায় বিষয়টি তোলা হবে। দু’য়েকটা জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। মামলার রায়ের আগে এসব সম্পত্তির বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। বোর্ড সভার পরে কোন সম্পত্তির কি অবস্থা সব তথ্য পাবেন। আমরা সম্পত্তিগুলোর বিস্তারিত একটা তালিকা তৈরি করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোথায় কোথায় সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে সেটা আপনারা লিখেন। যদি এসব সম্পত্তি বেহাত হয় তাহলে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন পারবো না। জাতীয় স্বার্থে এসব বিষয় তুলে আনা দরকার। আপনারা লিখলে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারি।
দুইমাস আগে ওয়াসার কোথায় কি পরিমাণ সম্পত্তি আছে তার হিসেব জানতে চাওয়া হলে ওয়াসার ভ‚-সম্পত্তি কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম এ সংক্রান্ত তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে লিখিতভাবে তথ্য (আরটিআই ফরমেটে) চেয়ে আবেদন করতে বলেন। গত ৩১ মার্চ সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে লিখিত আবেদন করা হয় ওয়াসায়। আবেদনে কোথায় কি পরিমাণ সম্পত্তি আছে এবং কোন সম্পত্তির কি অবস্থা, দখল-বেদখলের তথ্যও জানতে চাওয়া হয়। তথ্য প্রাপ্তির আবেদনের পর ২১ এপ্রিল ওয়াসা থেকে জানানো হয় মামলা সংক্রান্ত জঠিলতা থাকায় এ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা সম্ভব নয়। মামলার অজুহাত দেখিয়ে তথ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকে ওয়াসা। অথচ ওয়াসার কোন সম্পত্তি নিয়ে মামলা আছে সেটাও জানানো হয়নি।
কথা হলে ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক ও ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. পীযুষ দত্ত বলেন, তথ্যগুলো তো না থাকার কথা নয়। কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা জেনে বলবো। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে আমাকে সচিবালয় দেখতে হচ্ছে। খুব জরুরি বিষয় ছাড়া বাকিগুলো তেমন জানা থাকে না। বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দেখবো।
সূত্র জানায়, ওয়াসার সম্পত্তি অবৈধ দখলে চলে গেলেও উদ্ধারে তেমন কোনো তৎপরতা নেই প্রতিষ্ঠানটির। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে হালিশহর আনন্দ বাজার ও ফিরোজশাহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিলেন তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিল্লোল বিশ্বাস। সে সময় তিনি এ ধরনের বেআইনি কাজ থেকে বিরত থাকবেন বলে দখলদারদের কাছ থেকে মুচলেকাও নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ ধারা অব্যাহত না থাকায় দিন দিন ওয়াসার জায়গা বেদখলে চলে যাচ্ছে।
এদিকে ওয়াসার সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বোর্ড সদস্যরাও অবগত আছেন বলে জানা গেছে। গত জানুয়ারি মাসে সম্পত্তি বেহাত হওয়ার বিষয়টি বোর্ড সভায় তোলেন এক সদস্য। পরবর্তী সভায়ও একই বিষয়ে আলোচনা হয়। সম্পত্তির হিসেব তৈরি করে তা বোর্ড সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় তখন। একই সাথে সম্পত্তিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও উপস্থাপন করতে বলা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বোর্ড সদস্য বলেন, জানুয়ারি মাসের বোর্ড সভায় ওয়াসার সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরের সভাতেও একই বিষয়ে আলোচনা হয়। ফতেয়াবাদে ওয়াসাও জায়গা একটি সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। তাছাড়া অন্যান্য জায়গাতেও কিছু কিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ওয়াসার পুরো সম্পত্তির কি অবস্থা সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য নেই। আমরা তথ্যগুলো জানতে চেয়েছি। আগামী বোর্ড সভায় তথ্যগুলো উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।