নগরজুড়ে সাজ সাজ রব, বর্ণাঢ্য কর্মসূচি

84

আগামীকাল রবিবার ১২ রবিউল আওয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে সারাদেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদ্যাপিত হবে। মানবতার মুক্তির কান্ডারী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর পৃথিবীতে শুভাগমনের এ দিনটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কুরআনখানী, খতমে বুখারী, মিলাদ মাহ্ফিল, ওয়াজ-নছিহত, নবীজির জীবন চরিত্রের উপর আলোচনা, গরীব-মিসকিনদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও জশনে জুলুসসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে কাটাবেন। এদিন বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজেও মিলাদ, আলোচনা সভা এবং বিশেষ দোয়া মাহ্ফিলের আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এসব অনুষ্ঠানে নবীজির ওছিলা দিয়ে নিজের পাপ মার্জনা চেয়ে ও দেশ-জাতির কল্যাণ কামনা করা হবে।
পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন উপলক্ষে দেশের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুছ (ধর্মীয় র‌্যালি) অনুষ্ঠিত হয় বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টগ্রামে। আন্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এ জুলুছটি বের করা হবে। আওলাদে রাসূল, রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিকত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)’র জুলুসের নেতৃত্ব দিবেন। শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ, শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ শাহ জুলুছের অগ্রভাগে থাকবেন। আগামিকাল রবিবার সকাল ৯ টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ হতে এ জুলুছ বের হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, চকবাজার, প্যারেড কর্নার, চন্দনপুরা, সিরাজুদৌলাহ রোড, আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, জামালখান, আসকারদিঘীর পাড়, কাজির দেউড়ী, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, ২নং গেইট, মুরাদপুর হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার জুলুছ ময়দানে গিয়ে শেষ হবে। এখানে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ ছাহেব (মজিআ)’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহ্ফিল। এতে দেশবরেণ্য ওলামায়েক্বেরামসহ মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বাদে জোহর আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে জশনে জুলুছের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
সাজ সাজ রব নগরজুড়ে :আকাশে রবিউল আওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সাথে সাথে যেন সাজ সাজ রব উঠেছে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ নানা রঙের বাতির ঝলকে নগরীর রাজপথ, উড়াল সড়ক, অলিগলি সবখানে ঝলমল করছে। সাথে উড়ছে চাঁদ-তারকাখচিত বিভিন্ন রঙের পতাকা। মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সুসজ্জিত-সুদৃশ্য তোরণ। যেখানে লেখা রয়েছে ‘আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ ‘আহলান সাহলান ইয়া মাহে রবিউল আউয়াল’। এর সাথে নগরীর প্রতিটি মোড়ে আনজুমান লোগোখচিত চতুর্ভুজ ডিজাইনের ফেস্টুন নজর কাড়ছে। এতে কুরআন-হাদিসের বাণী, জশনে জুলুছের প্রবর্তক গাউস জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.) এর বাণী শোভা পাচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রবিউল আউয়াল এলেই তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। ঐতিহাসিক জশনে জুলুণকে ঘিরে সর্বস্তরের সুন্নি মুসলমানদের মাঝে নেমে আসে ঈদের আনন্দ। ১২ রবিউল আউয়াল জুলুছ উদ্যাপনে নেয়া হয় সর্বাত্মক প্রস্তুতি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট, আবার একই স্থান থেকে চাকতাই-কোতোয়ালি, নিউ মার্কেট, লালদিঘি, জামাল খান, বিমানবন্দর সড়ক হয়ে ইপিজেড-বারিক বিল্ডিং-আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, ইস্পাহানি, ওয়াসা হয়ে ২নং গেইট, মুরাদপুর হয়ে বিবিরহাট, অক্সিজেন সর্বত্রই লেগেছে আলোর ছোঁয়া। এর পাশাপাশি জামেয়া সংলগ্ন জুলুছ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল, মঞ্চ। আনজুমান-এ রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এবং তাদের সহযোগী সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রায় দুইমাস ধরে এ জুলুছের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জুলুছ প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আনজুমানের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি জেনারেল সামশুদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জুলুছ উপলক্ষে একটি কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটি এবং এর অধীনে ১৪টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রত্যেক সদস্য নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে জশনে জুলুছের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আনজুমান, গাউসিয়া কমিটির পাশাপাশি আনজুমানের নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স (এএসএফ), সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাবসহ সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা জুলুছের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি জুলুছে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আনজুমান ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনা মেনে সুশৃঙ্খলভাবে জুলুছে উপস্থিত হওয়ার আহবান জানান।
এবিষয়ে গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম নগর সদস্য সচিব ও আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান সাদেক হোসেন পাপ্পুর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও এএসএফ-এর সাড়ে তিনশ ফোর্স এবং গাউসিয়া কমিটির সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক জুলুছের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন। নগরীর প্রতিটি মোড়সহ জামেয়ার আশেপাশে জুলুছে আগত মুসল্লিদের যাতে কোােন রকম কষ্ট না হয় সেদিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখা হবে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও গিনেসবুকে জুলুছ : পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (দ.)উদ্যাপনের ইতিহাস দীর্ঘ হলেও এ উপলক্ষে জশনে জুলুছের আয়োজন খুব বেশিদিনের ইতিহাস নয়। ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম এ জুলুছের সূচনা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। আন্জুমানের প্রকাশনা বিভাগের বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.)-এর নির্দেশে তাঁরই প্রধান খলিফা আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ আলকাদেরী (রহ.)-এর নেতৃত্বে নগরীর কোরবানীগঞ্জস্থ বলুয়ারদিঘী খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়া থেকে ১২ রবিউল আউয়াল জশনে জুলুছ বের করা হয়। সেই হিসাবে দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছে এ জুলুছের ইতিহাস। কোনোরকম বিরতি ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে এ জুলুছ আয়োজন করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক সংস্থা আনজুমান ও সহযোগী সংগঠন গাউসিয়া কমিটি। বছরে বছরে এ আয়োজন আরো সম্প্রসারণ হচ্ছে, হচ্ছে বর্ণাঢ্য, বাড়ছে ভক্তসমাগম। গত কয়েক বছর ধরে আনজুমান সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করে আসছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে তাদের আয়োজিত জশ্নে জুলুছ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় র‌্যালি। তারা এ জুলুছকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যাপনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে সর্ববৃহৎ ধর্মীয় র‌্যালি হিসাবে এর স্বীকৃতিও দাবি করে আসছিলেন। এবার এ দাবি আরো জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত আনজুমানের সাংবাদিক সম্মেলনে জুলুছে ৬০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণের প্রত্যাশা করা হয়। বিশ্বের বৃহৎ এই জুলুছকে গিনেস বুকে স্থান দেয়ার উদ্যোগও নিয়েছে উদযাপন কমিটি। বিশ্বের অদ্বিতীয় এ জুলুছ গিনেস বুকে স্থান দিতে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা সরকার, ইউনেস্কো ও আন্তর্জাতিক লবিস্টের সাথে যোগাযোগ করে গিনেজ বুকে এই জুলুছকে স্থান দিতে জোর তৎপরতা চালাবেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) আগামীকাল
নগরজুড়ে সাজ সাজ
রব, বর্ণাঢ্য কর্মসূচি
জুলুসের নেতৃত্ব দেবেন আল্লামা তাহের শাহ (ম.জি.আ.)
আবু তালেব বেলাল
আগামীকাল রবিবার ১২ রবিউল আওয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে সারাদেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদ্যাপিত হবে। মানবতার মুক্তির কান্ডারী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর পৃথিবীতে শুভাগমনের এ দিনটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কুরআনখানী, খতমে বুখারী, মিলাদ মাহ্ফিল, ওয়াজ-নছিহত, নবীজির জীবন চরিত্রের উপর আলোচনা, গরীব-মিসকিনদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও জশনে জুলুসসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে কাটাবেন। এদিন বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজেও মিলাদ, আলোচনা সভা এবং বিশেষ দোয়া মাহ্ফিলের আয়োজনের ষ পৃষ্ঠা ১১, কলাম ৪.
ষ প্রথম পৃষ্ঠার পর
উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এসব অনুষ্ঠানে নবীজির ওছিলা দিয়ে নিজের পাপ মার্জনা চেয়ে ও দেশ-জাতির কল্যাণ কামনা করা হবে।
পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন উপলক্ষে দেশের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুছ (ধর্মীয় র‌্যালি) অনুষ্ঠিত হয় বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টগ্রামে। আন্জুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এ জুলুছটি বের করা হবে। আওলাদে রাসূল, রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিকত আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)’র জুলুসের নেতৃত্ব দিবেন। শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ, শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ হামেদ শাহ জুলুছের অগ্রভাগে থাকবেন। আগামিকাল রবিবার সকাল ৯ টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ হতে এ জুলুছ বের হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, চকবাজার, প্যারেড কর্নার, চন্দনপুরা, সিরাজুদৌলাহ রোড, আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, জামালখান, আসকারদিঘীর পাড়, কাজির দেউড়ী, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, ২নং গেইট, মুরাদপুর হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার জুলুছ ময়দানে গিয়ে শেষ হবে। এখানে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ ছাহেব (মজিআ)’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহ্ফিল। এতে দেশবরেণ্য ওলামায়েক্বেরামসহ মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বাদে জোহর আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে জশনে জুলুছের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
সাজ সাজ রব নগরজুড়ে :আকাশে রবিউল আওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সাথে সাথে যেন সাজ সাজ রব উঠেছে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ নানা রঙের বাতির ঝলকে নগরীর রাজপথ, উড়াল সড়ক, অলিগলি সবখানে ঝলমল করছে। সাথে উড়ছে চাঁদ-তারকাখচিত বিভিন্ন রঙের পতাকা। মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সুসজ্জিত-সুদৃশ্য তোরণ। যেখানে লেখা রয়েছে ‘আস্সালাতু আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ ‘আহলান সাহলান ইয়া মাহে রবিউল আউয়াল’। এর সাথে নগরীর প্রতিটি মোড়ে আনজুমান লোগোখচিত চতুর্ভুজ ডিজাইনের ফেস্টুন নজর কাড়ছে। এতে কুরআন-হাদিসের বাণী, জশনে জুলুছের প্রবর্তক গাউস জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.) এর বাণী শোভা পাচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রবিউল আউয়াল এলেই তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। ঐতিহাসিক জশনে জুলুণকে ঘিরে সর্বস্তরের সুন্নি মুসলমানদের মাঝে নেমে আসে ঈদের আনন্দ। ১২ রবিউল আউয়াল জুলুছ উদ্যাপনে নেয়া হয় সর্বাত্মক প্রস্তুতি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট, আবার একই স্থান থেকে চাকতাই-কোতোয়ালি, নিউ মার্কেট, লালদিঘি, জামাল খান, বিমানবন্দর সড়ক হয়ে ইপিজেড-বারিক বিল্ডিং-আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, ইস্পাহানি, ওয়াসা হয়ে ২নং গেইট, মুরাদপুর হয়ে বিবিরহাট, অক্সিজেন সর্বত্রই লেগেছে আলোর ছোঁয়া। এর পাশাপাশি জামেয়া সংলগ্ন জুলুছ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল, মঞ্চ। আনজুমান-এ রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এবং তাদের সহযোগী সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রায় দুইমাস ধরে এ জুলুছের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জুলুছ প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আনজুমানের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি জেনারেল সামশুদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জুলুছ উপলক্ষে একটি কেন্দ্রীয় প্রস্তুতি কমিটি এবং এর অধীনে ১৪টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রত্যেক সদস্য নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে জশনে জুলুছের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আনজুমান, গাউসিয়া কমিটির পাশাপাশি আনজুমানের নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স (এএসএফ), সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাবসহ সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থা জুলুছের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি জুলুছে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আনজুমান ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া নির্দেশনা মেনে সুশৃঙ্খলভাবে জুলুছে উপস্থিত হওয়ার আহবান জানান।
এবিষয়ে গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম নগর সদস্য সচিব ও আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান সাদেক হোসেন পাপ্পুর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও এএসএফ-এর সাড়ে তিনশ ফোর্স এবং গাউসিয়া কমিটির সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক জুলুছের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন। নগরীর প্রতিটি মোড়সহ জামেয়ার আশেপাশে জুলুছে আগত মুসল্লিদের যাতে কোােন রকম কষ্ট না হয় সেদিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখা হবে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও গিনেসবুকে জুলুছ : পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (দ.)উদ্যাপনের ইতিহাস দীর্ঘ হলেও এ উপলক্ষে জশনে জুলুছের আয়োজন খুব বেশিদিনের ইতিহাস নয়। ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম এ জুলুছের সূচনা বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। আন্জুমানের প্রকাশনা বিভাগের বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে গাউসে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রহ.)-এর নির্দেশে তাঁরই প্রধান খলিফা আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ আলকাদেরী (রহ.)-এর নেতৃত্বে নগরীর কোরবানীগঞ্জস্থ বলুয়ারদিঘী খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়া থেকে ১২ রবিউল আউয়াল জশনে জুলুছ বের করা হয়। সেই হিসাবে দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর অতিক্রম করতে যাচ্ছে এ জুলুছের ইতিহাস। কোনোরকম বিরতি ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে এ জুলুছ আয়োজন করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক সংস্থা আনজুমান ও সহযোগী সংগঠন গাউসিয়া কমিটি। বছরে বছরে এ আয়োজন আরো সম্প্রসারণ হচ্ছে, হচ্ছে বর্ণাঢ্য, বাড়ছে ভক্তসমাগম। গত কয়েক বছর ধরে আনজুমান সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করে আসছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী উপলক্ষে তাদের আয়োজিত জশ্নে জুলুছ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় র‌্যালি। তারা এ জুলুছকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যাপনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে সর্ববৃহৎ ধর্মীয় র‌্যালি হিসাবে এর স্বীকৃতিও দাবি করে আসছিলেন। এবার এ দাবি আরো জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত আনজুমানের সাংবাদিক সম্মেলনে জুলুছে ৬০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অংশগ্রহণের প্রত্যাশা করা হয়। বিশ্বের বৃহৎ এই জুলুছকে গিনেস বুকে স্থান দেয়ার উদ্যোগও নিয়েছে উদযাপন কমিটি। বিশ্বের অদ্বিতীয় এ জুলুছ গিনেস বুকে স্থান দিতে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা সরকার, ইউনেস্কো ও আন্তর্জাতিক লবিস্টের সাথে যোগাযোগ করে গিনেজ বুকে এই জুলুছকে স্থান দিতে জোর তৎপরতা চালাবেন।