দুই-তিনগুণ অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ পেল দুদক

55

নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ, নবায়ন, জন্মনিবন্ধন সনদসহ বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তি মানেই ঘুষ লেনদেন। গত কয়েকদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (১০৬) এমন হয়রানির অভিযোগ এলে কমিশন সারা দেশে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। তারই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগে অভিযান চালিয়েছে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয় -১ এর একটি দল। এ অভিযানে নথিপত্রে অসঙ্গতি ও গ্রাহকদের সাথে কথা বলে নির্ধারিত ফি-এর দুই-তিনগুণ অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
ট্রেড লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করতে গতকাল সকালে দুদকের একটি দল প্রথমে নগর ভবনে প্রধান রাজস্ব কার্যালয়ে যায়। সেখানে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুদক কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। সুনির্দিষ্ট বেশ কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে কথাও বলেন তারা। যাচাই করা হয় নথিপত্র। এরপর বেলা ১২টার দিকে দুদক টিমের সদস্যরা নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় চসিকের রাজস্ব সার্কেল-৪ এর কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেন। সেখান থেকে বেশকিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে।
তবে অভিযানের সময় রাজস্ব শাখার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয়ে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয় -১ এর উপ-পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন পূর্বদেশকে বলেন, আমরা সার্কেল অফিসে গিয়ে কয়েকটি ট্রেড লাইসেন্স থেকে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর নিয়ে এলোমেলোভাবে কল দিই। জানতে চাই তারা কত টাকা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করেছেন। প্রত্যেকটি কলে উত্তর এসেছে তারা সবাই দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করেছেন। একজন গ্রাহকও নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স করার কথা জানাননি। তিনি আরও বলেন, আমরা এ বিষয়ে কমিশনের প্রধান অফিসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।
অনুমতি পেলে পূর্ণ তদন্তে নামবো। পরিদর্শকরা নগদ টাকা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সুনির্দিষ্টভাবে নিবন্ধন করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি অর্থ নেয়া হচ্ছে। কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের সাথে সার্কেল অফিসের সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারি কোষাগারে ঠিকমত রাজস্ব জমা হচ্ছে না।
সেবা প্রার্থীরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য শাখায় একই ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধেও দুদকের তদন্ত হওয়া উচিত।
জানা গেছে, নানা অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগে দেশের ৮ সিটি কর্পোরেশন অফিসে একযোগে আকস্মিক অভিযান চালানো হয়। দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। গত কয়েকদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (১০৬) ট্রেড লাইসেন্স সেবায় হয়রানির অভিযোগ এলে কমিশন অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গতকাল সকাল থেকে একযোগে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনে একযোগে অভিযান চালানো হয়।