দুঃখ ভুলে ঐক্য

80

পান থেকে চুন খসলেই সভা-সমাবেশে উত্তপ্ত কথামালা। কখনো কখনো সংঘর্ষ-সংঘাত। নানা কারণে বিতর্ক, বিরোধ ও ভুল বুঝাবুঝিতে মজে ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সে বিরোধ কেটেছে। উল্টো বিরোধীয় পক্ষগুলো একে-অপরকে বুকে টেনে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। অতীতের দুঃখ ভুলে নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েই দলীয় ও মহাজোট প্রার্থীদের জয়ী করতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বিরোধ জিঁইয়ে থাকলেও নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকেই দেখা যাচ্ছে। নৌকা, নৌকা স্লোগান গ্রাম-শহর মুখরিত করছেন সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বেজে ওঠা ঐক্যের সুর যেন নির্বাচনের পরেও টিকে থাকে-এমনটাই আশা করছেন নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় সংগঠন। বড় সংগঠনে একটু আধটু ভুল বুঝাবুঝি থাকবে। তবে নির্বাচনী প্রচারণা দেখেই বুঝা যাচ্ছে নেতাদের মধ্যে এখন কোনও বিরোধ নেই। সবাই এক কাতারে এসে নৌকার পক্ষে মাঠে ভোট চাইছেন। আশা করি এমন ঐক্য নির্বাচনের পরেও থাকবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহানগরের তিনটি আসনে এতদিন ধরে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়া সকল নেতাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা। সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ইতোমধ্যে নওফেলের প্রচারণা চালিয়েছেন। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রয়াত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পৃথক বলয় ছিল। বিভিন্ন ইস্যুতেই দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে ছিল সাপে-নেউলে সম্পর্ক। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নওফেলকে ঘিরেই সক্রিয় ছিল পক্ষটি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর সকল কর্মকান্ডে নওফেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বড় দৃষ্টান্ত এই আসনেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পিতার বয়সী কিংবা পিতার সহকর্মী নেতাদের মাঠে নামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নওফেল নিজেই।
চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আফসারুল আমিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী অপরাপর প্রার্থীরা। নৌকা প্রার্থীর পক্ষে নগর যুবলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু ও ফরিদ মাহমুদ মাঠে রয়েছেন।
সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর সাথে গত পাঁচ বছরে বিরোধে জড়িয়ে ছিলো স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ। লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন হিরু এবং সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মোতালেব ও সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদ একসময় নদভীর বিপক্ষে অবস্থান নিলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
চন্দনাইশে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরোধ ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই নেতার অনুসারীরা মিলেমিশে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
পটিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও মনোনয়ন প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর সাথে বিরোধ ছিল বড় একটি অংশের সাথে। মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চেমন আরা তৈয়ব, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নাছির উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাশেদ মনোয়ারের সাথে সাংসদের দ্ব›দ্ব নিরসন হয়েছে। নির্বাচনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি সভায় একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ঐক্যমতে আসা নেতারা।
বোয়ালখালীতে মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খান বাদল। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। মনোনীত প্রার্থী নাম ঘোষণার আগে পর্যন্ত দুই নেতার মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকলেও মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে দুই নেতা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী কর্মকান্ডে সামিল আছেন। নৌকার প্রার্থী বাদলকে জয়ী করতে আওয়ামী লীগের বাদলবিরোধী বৃহৎ অংশটিও এখন একই কাতারে এসেছে।
সীতাকুন্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলমের পক্ষে ভোট চাইছেন মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া অপর দুই নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন।
ফটিকছড়িতে মহাজোট প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী। উপজেলা আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে মহাজোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। গত শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির সাথে পেয়ারুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের দুরত্ব কেটেছে। সকল নেতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করার ঘোষণা দিয়েছেন।
হাটহাজারী আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল আওয়ামী লীগের বৃহৎ অংশের। নির্বাচনে এ আসন থেকে অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালামের বাড়ি এ আসনে। ইতোমধ্যে এমএ সালামসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রার্থী মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সামিল হয়েছেন।
স›দ্বীপে মাহফুজর রহমান মিতার সাথে আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশের দ্ব›দ্ব থাকলেও তা অনেকাংশে কমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে এমপির বিরোধীয় পক্ষ হয়ে থাকা বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রচারণায়