দিল্লি রণক্ষেত্র, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩

87

১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। রাস্তার দখল নিয়েছে পুলিশ-আধাসেনা। উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবু প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে কার্যত জ্বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। গুলি, কাঁদানে গ্যাস, ইট-পাটকেল ছোড়া থেকে শুরু করে একাধিক জায়গায় অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে মঙ্গলবারও অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। গতকাল হাসপাতালে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এক পুলিশ কর্মী-সহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩। আহত দেড় শতাধিক। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে জারি হয়েছে কার্ফু।
সিএএ-কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে গত তিন দিন ধরে উত্তাল দিল্লি। সোমবার এক পুলিশ কর্মী-সহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল হতেই ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায়। লাঠি, রড, ইট-পাটকেল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে অনেককে। বেলা বাড়তেই উত্তেজনা আরও বাড়ে। একাধিক দোকানপাট, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভজনপুরা, চাঁদ বাগ, করাবল নগরের মতো এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক জায়গায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভজনপুরা, চান্দ বাগ ও কারাওয়াল নগরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় রাস্তায় লাঠিসোঁটায় সজ্জিত লোকেদের দেখা গেছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দোকান। এদিকে এমন সংঘাত সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করার আরজি খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দিল্লিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৬ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকায় সেনা নামানোর প্রয়োজন হবে না।
এদিকে গত সোমবারই ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্যেই দিল্লিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। গত সোমবার প্রায় সারা দিনই উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক জায়গায় একের পর এক সংঘর্ষ ঘটতে থাকে। আহতদের মধ্যে অনেকেই পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে ৩৫ কোম্পানি আধা সেনা। ঘটনার পরেই উত্তর-পূর্ব দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, উপদ্রæত এলাকাগুলোয় বন্ধ থাকবে সরকারি স্কুল।
এনআরসি বিরোধী প্রস্তাব বিহারে পাস : বিহারে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বিরোধী প্রস্তাব বিধানসভায় পাস হয়েছে। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জির (এপিআর) সঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বিরোধী প্রস্তাব বিধানসভায় পাস করেছে নীতীশ কুমারের সরকার। প্রস্তাবের মূল বিষয়, রাজ্যে এনআরসি কার্যকর করা হবে না এবং বিহার সরকারের শর্ত মানলে তবেই এনপিআর কার্যকর করা হবে।
বিধানসভায় নীতীশ কুমার জানিয়েছেন, এনপিআর-এর ফর্ম থেকে আপত্তিকর অংশগুলি বাদ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নীতীশ কুমার অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন যে, তার রাজ্যে এনআরসি কার্যকর করতে দেবেন না। এর সঙ্গে এনপিআর-এর আপত্তিকর অংশগুলি বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সেই দুই প্রস্তাবই পাস হয়েছে বিধানসভায়।
এর আগে ভারতের পাঞ্জাব, তামিলনাডু ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় এনপিআর বিরোধী প্রস্তাব পাস করেছে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি। বিহারে এর পাশাপাশি এনআরসি-ও যোগ করে দেওয়া হয়েছে।