দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরাও মাঠে

40

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দক্ষিণ চট্টগ্রামে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ছয় উপজেলার মধ্যে চার উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া প্রার্থী হিসেবে আছেন বিএনপি, জামায়াত, জাপা, জাসদ ও ইসলামী ফ্রন্ট সমর্থিতরাও। তবে আনোয়ারা উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। পটিয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী।
তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। এদিন দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় উপজেলায় মোট ১৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরা। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করা প্রার্থীরা মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত নন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী ও বাঁশখালীতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করার কথা জানিয়েছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিবেন বলে আশা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রত্যাহার পর্যন্ত সময় আছে। যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাঁদের সাথে আমরা আলোচনা করবো। আমরা সবধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা প্রচার-প্রচারণাতেও অংশ নিব। এর বাইরে কেউ বিরোধিতা করলে আমরা দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নিব।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, প্রত্যাহারের আগেই আশা করি প্রত্যেকটি উপজেলায় ঐক্য হবে। দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করা কাম্য নয়। আমরা আলোচনা করবো। কেন্দ্র থেকেও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দলীয় মানুষ হলে অবশ্যই দলীয় প্রতীকের পক্ষে অবস্থান থাকতে হবে। নয়তো সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্ধৃতি দিয়ে জিতে আসলেই নিজেদের প্রার্থী বলে যে প্রচারণা চলছে এ বিষয়ে মফিজুর রহমান বলেন, ‘এটা সঠিক নয়। আমি জেনেছি, কাদের ভাই এমন কোনও কথা বলেননি।’
জানা গেছে, চন্দনাইশে তিন জন, আনোয়ারায় এক জন, বোয়ালখালীতে পাঁচ জন, বাঁশখালীতে তিন জন, পটিয়ায় দুই জন, লোহাগাড়ায় চার জনসহ মোট ১৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আনোয়ারায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। এ উপজেলায় অন্য কোনও প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তিনি।
লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী। তিনি ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এলডিপি নেতা (সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী) জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল, বিএনপি একাংশের সাধারণ সম্পাদক এসএম সলিম উদ্দিন খোকন চৌধুরী ও জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক পেয়ারু। চন্দনাইশে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম নাজিম উদ্দিন। তিনি ছাড়াও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এলডিপি নেতা (আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন) মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্ট প্রার্থী মৌলানা ফেরদৌস আল কাদেরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এড. সুলতান উল কবির চৌধুরী বড় ছেলে চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলী। তিনি ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন। পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী ও বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা বেগম জলি। বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম। তিনি ছাড়া এ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন, জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম ফজু, জাসদ সহ-সভাপতি সৈয়দুল আলম ও নগর শ্রমিক লীগ নেতা নুরুল ইসলাম।