তাকওয়া অর্জন রোজার মূল উদ্দেশ্য

43

মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য হলো তাক্ওয়া অর্জন। আত্মশুদ্ধি পরহেজগারী অর্জন করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল- যেন তোমরা তাকওয়া এবং পরহেজগারী অর্জন করতে পার।
তাক্ওয়া বলতে অন্তরের সে অবস্থাকে বুঝায়, যা অর্জনের পর যাবতীয় গুনাহকে সর্বাত্মকভাবে অন্তর ঘৃণা করে
এবং গুনাহের প্রতি বৈরিভাব সৃষ্টি হয়। একই সাথে পুণ্যকাজের প্রতি অন্তরে তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। পাপ কাজের প্রতি তীব্র ঘৃণা ও পুণ্য কাজের প্রতি উৎসাহ জাগ্রত হয়। মুত্তাকী তাকেই বলে যে শুধু আল্লাহর শাস্তির ভয় এবং তার রহমত লাভের আশায় যাবতীয় পাপ কাজ ত্যাগ করে। যে তার কামনা বাসনাকে আল্লাহর ইচ্ছার উপর সমর্পন করে দিয়েছে। সুতরাং রোজার মাধ্যমে এ তাক্ওয়া অর্জিত হয়।
মানুষের অন্তরসমূহ নাফস্ বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় সর্বদা গুনাহ এবং পাপাচারের দিকে ধাবিত থাকে। ফলে গুনাহের দরুণ অন্তরাত্মা অত্যন্ত শক্ত আকার ধারণ করে। এতে অনায়াসে পাপকর্মে লিপ্ত থাকতে থাকতে পশুসুলভ শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
রোজার কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষের এই প্রবৃত্তিকে দমন করা হয়। তাই মহান আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য বাধ্যতামূলক এক মাসের রোজা আদায়ের আদেশ দিয়েছেন। যাতে মাসব্যাপী রোজাদারগণ দিনের বেলায় ওইসব কাজ থেকে বিরত থাকবে; যেগুলো অন্য সময় বৈধ ছিল। আর যেসব অন্য সময়ে অবৈধ বা নিষিদ্ধ ছিল যেমন- মিথ্যা, চুরি, মারামারি, যাবতীয় অপরাধকাজ এসবতো অবশ্যই রোজাদারের জন্য কঠোরভাবে নিষেধ।
এভাবে একমাস সিয়াম-সাধনার মাধ্যমে যাবতীয় অবৈধ অসৎ-অন্যায় পাপকর্মের প্রতি ঘৃণাবোধ জাগ্রত করতেই মূলত এই আয়োজন। মোমিন বান্দারা যাতে এই একমাস সাধনার মাধ্যমে অর্জিত তাক্ওয়ার মহৎগুণে গুনান্বিত হয়ে বাকি ১১মাস অতিবাহিত করা সহজ হয়।
প্রতিবছর আত্মশুদ্ধির এই বাধ্যতামূলক নিবিড় প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো, মানব মনে যেন বছরের ১১টি মাসে হালাল-হারাম পার্থক্যের অভ্যাস ও প্রেরণা এরূপ বৃদ্ধি পায়, যাতে তার বাকী জীবনটা এই রূপরেখার উপর দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়। ফলে যে কোন কার্যকলাপে আল্লাহর নির্দেশ ও বিধি-বিধানের সামনে স্বীয় মস্তক নত করে এবং এভাবে নিষিদ্ধ বস্তুর নাম-গন্ধ থেকেও যেন নিবৃত থাকতে পারে। পবিত্র কোরআনে মুত্তাকীদের জন্য অনেক সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। তাই দয়ালু আল্লাহ মাহে রমজানের মতো একটি বিশেষ নিয়ামত আমাদেরকে দান করেছেন।