ট্রেনের ৬৪ শতাংশ ইঞ্জিনের ‘লাইফ টাইম’ উত্তীর্ণ

118

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্রেন পরিচালনায় আছে ১৫০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। এসব ইঞ্জিনের ৯৪টির বয়স ২০ বছরের উর্ধ্বে। বাকি ৫৬টির বয়স ২০ বছরের কম। সে হিসেবে রেলের বহরে থাকা ৬৪ শতাংশ ইঞ্জিনের ‘লাইফ টাইম’ উত্তীর্ণ হয়েছে। আয়ুষ্কাল পার হওয়া ইঞ্জিনগুলো দিয়েই এবারের ঈদে যাত্রী পরিবহন করবে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে অতিরিক্ত কোচ নিয়ে ট্রেন চালানো যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হবে তেমনি নির্ধারিত সময়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়েও থাকবে শঙ্কা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যন্ত্র প্রকৌশলী (সদর) মো. রফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইঞ্জিনের জন্য আমাদের ট্রেন চালনায় অসুবিধা নাই। আমাদের এমনিতে ৬৪ শতাংশ ইঞ্জিন লাইফ টাইম উত্তীর্ণ। যে কারণে আমরা কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেই ট্রেন চালাচ্ছি। আরো দুই থেকে তিন বছর পর নতুন ইঞ্জিন আসলে তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে সিএমই স্যার বিষয়গুলো ভালো বলতে পারবেন। উনি এখন বিদেশে আছেন।’
পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রেলওয়েতে প্রয়োজনের তুলনায় ইঞ্জিন কম। যে কারণে যান্ত্রিক বিভাগ থেকে আমাদের সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বলা হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেন চালনায় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এসব ইঞ্জিনে অতিরিক্ত কোচ নিয়ে ট্রেন চালনা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে অতিরিক্ত কোচ লাগানোর প্রয়োজন না হলেও ছুটির দিনগুলোতে রেলে যাত্রীদের চাপ থাকে। এসময় অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের প্রয়োজন হয়।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেন চালনায় প্রতিদিন ইঞ্জিনের গড় প্রাপ্যতা ৬৮ শতাংশ। প্রয়োজনের তুলনায় প্রাপ্যতা কম থাকায় ট্রেন পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো সময়ে সময় সল্পতার কারণে ম্যানুয়াল অনুযায়ী মেরামত ছাড়াই ইঞ্জিন সরবরাহ করছে যান্ত্রিক বিভাগ। টাইম টেবিল-৫১ অনুযায়ী ট্রেন ভেদে ইঞ্জিনের গতি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার নির্ধারিত আছে। কিন্তু অনেক সময় পুরাতন ও ক্রুটিযুক্ত রেললাইন, ব্রিজ কালভার্ট, এসিপি ইত্যাদি কারণে নির্ধারিত গতি কমিয়ে দেয়া হয়। পরে সময়ের প্রয়োজনে গতি বাড়িয়ে ট্রেন চালানো হলে ইঞ্জিন ট্রাকশন মোটরসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ছে। টাইম টেবিল মানতে গিয়ে নির্ধারিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত লোড ও সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেন চালানোয় মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনগুলোর বিকলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবহন বিভাগকে অতিরিক্ত কোচ লাগানো পরিহার করতে অনুরোধ জানিয়েছেন যান্ত্রিক বিভাগ। এরপরেও যাত্রীর চাহিদা, ছুটির দিন ও আয় বাড়ানো বিবেচনায় নিয়ে পরিবহন বিভাগ অতিরিক্ত কোচ লাগালে যান্ত্রিক বিভাগ আপত্তি তোলে। সম্প্রতি অতিরিক্ত কোচ লাগানো নিয়ন্ত্রণে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি)’র অনুমতির নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে রেলওয়েতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও নতুন ইঞ্জিন না আসা পর্যন্ত এমন জটিলতা সহসা কাটানো সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে নতুন ইঞ্জিন আনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও আগামী ছয় মাসেও এ ইঞ্জিন আসা নিয়ে সন্দিহান রেল সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ইঞ্জিন সংকটের কারণে এবার ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য সময়ে ইঞ্জিন সংকটের কারণে ভোগান্তি না হলেও এবার অতিরিক্ত কোচ লাগানো নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় যাত্রীদের টিকিট পাওয়া দুষ্কর হবে। টিকিট পেলেও আয়ুষ্কাল পেরানো ইঞ্জিন নিয়ে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে যাওয়া নিয়ে যাত্রীদের উদ্বেগ থাকবে। যদিও ঈদে রেলযাত্রা নিরাপদ করতে রেলওয়ে পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চার হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে একই সাথে ১৪০টি ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে। চলতি বছরেই এসব ইঞ্জিন আসার কথা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানি প্রথম ধাপে ১০টি ইঞ্জিন সরবরাহ করবে। দ্বিতীয় ধাপে ৭০টি ইঞ্জিন কেনার প্রক্রিয়া চলছে। বাকি ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন ও ২০টি মিটার গেজ ইঞ্জিন আনা হবে। নতুন ১৪০টি ইঞ্জিন আনতে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এসব ইঞ্জিন আসলেই সংকট কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।