টার্গেট ছিল মফিজ ভুলে রাজুকে খুন

70

ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ হাজীপাড়া এলাকায় রিকশাচালক মো. রাজু হত্যাকান্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এক মাদক ব্যবসায়ীর কারাগারে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। জেলে থাকা কথিত ‘বড় ভাই’ ছগির এ হত্যার নির্দেশ দেন। আর হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে একটি মাদকাসক্ত কিশোর গ্যাং। তারা মফিজকে মারতে গিয়ে ভুলে খুন করে রাজুকে। হত্যাকান্ডে জড়িত সাত কিশোরসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চার কিশোর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে ভোরে ডবলমুরিং থানাধীন হাজীপাড়া এলাকায় রিকশাচালক মো. রাজুকে বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজু।
এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- শিমুল দাশ (২০), তানভির হোসেন প্রকাশ সিফাত (১৮), মো. সুজন প্রকাশ মধু (১৮), মো. রাকিব হোসেন প্রকাশ শাহ রাকিব (১৮), মো. নুর নবী (১৮), মেহেদী হাসান রুবেল (১৮), ওসমান হায়দার কিরন (১৮) ও সেলিনা আক্তার সেলি (৪৫)।
সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম জানান, গত ২৭ এপ্রিল ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান মাদক ব্যবসায়ী ছগির হোসেন। তাকে গ্রেপ্তারের নেপথ্যে সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী মফিজকে সন্দেহ করেন। পরে কারাগারে বসে মফিজকে খুনের পরিকল্পনা করেন।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার ৫ দিন পর কারাগারে দেখা করতে যান ছগিরের স্ত্রী ও ছেলে কিরনসহ কয়েকজন। সাক্ষাৎকালে মফিজকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন ছগির হোসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৩ মে খুনের খরচ বাবদ ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলী শুক্কুর নামে একজনকে ১ হাজার টাকা ও ছগিরের ছেলে ওসমান হায়দার কিরন একটি কিরিচ দেয়।
পরদিন হাড্ডি কোম্পানির মোড়ে রুবেলের টং দোকানের সামনে জড়ো হয় ছগিরের অনুসারী কিশোর গ্যাংয়ের কিরন, শুক্কুর, শিমুল, রাকিব ও সিফাত। সেখারে খুনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়। এ সময় কিরন ব্যাগে করে নিয়ে আসা চাইনিজ কুড়াল রাকিবকে ও সিফাতকে ছুরি দেয়। পরে রাত ১১টার দিকে কিরন বাসায় চলে যায়। অন্যরা ওখানে অবস্থান নেয়। ভোরে ফজরের নামাজের পর হত্যায় অংশ নিতে শিমুল, শুক্কুর, রাকিব, সিফাত, সুজন প্রকাশ মধু মফিজের ভাড়া ঘরে প্রবেশ করে। পাহারা দেওয়ার জন্য বাইরে থাকে নুর নবী ও রুবেল।
ভাড়া ঘরে প্রবেশের পর মফিজের রুম মনে করে পাশের রুমে অর্থাৎ রিকশাচালক রাজুর রুমে প্রবেশ করে হত্যাকান্ডে জড়িতরা। ঘুমন্ত অবস্থায় রাজুকে মফিজ মনে করে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে আহত করে তারা। পরে লোকজনের চিৎকার করে এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। ওই সময় টার্গেট হওয়া মফিজ তার রুমে ছিলেন।
আমেনা বেগম জানান, ছগির হোসেন একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছগিরের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মোট সাতটি মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) কামরুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) আশিকুর রহমান, ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেনসহ অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ বলেন, ছগির একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার নির্দেশেই এ খুন। এসব কিশোর ছগিরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক অর্নব বড়ুয়া জানান, ছগিরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেলি (৪৫) ও শিমুল দাশের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ডবলমুরিং থানায় মামলা রয়েছে। শিমুল, সিফাত, সুজন, রাকিব, নুর নবী, রুবেলসহ একটি কিশোর গ্যাংকে নিয়ন্ত্রণ করে ছগির হোসেন। তাদেরকে ছগির সেবন করার জন্য ইয়াবা সরবরাহ করেন বলে তারা সবাই ছগিরের অনুগত।
এদিকে রিকশাচালক মো. রাজু হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আট জনের মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানান ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ।
এ কিশোরেরা হল, শিমুল দাশ (২০), তানভির হোসেন প্রকাশ সিফাত (১৮), মো. সুজন প্রকাশ মধু (১৮) ও মো. রাকিব হোসেন প্রকাশ শাহ রাকিব (১৮)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শিমুল দাশ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খাইরুল আমীনের আদালতে, তানভির হোসেন প্রকাশ সিফাত আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে, মো. সুজন প্রকাশ মধু মো. আল ইমরান খানের আদালতে এবং মো. রাকিব হোসেন প্রকাশ শাহ রাকিব সারোয়ার জাহানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ জানান, আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে চারজনই। খুনের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কিলিং মিশনের বিস্তারিত জানিয়েছে তারা।
এছাড়া মো. নুর নবী, মেহেদী হাসান রুবেল, ওসমান হায়দার কিরন ও সেলিনা আক্তার সেলি প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অর্নব বড়ুয়া।