ছক কষে মাঠ গোছাতে চান আবু সুফিয়ান

22

তিনমাস সময় নির্ধারণ করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্র। সাতটি উপজেলার তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে এই সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করা অনেকটা কষ্টসাধ্যও বটে। বিএনপি ভক্তদের কাছে দূরদর্শী নেতা হিসাবে পরিচিত আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে এ দুঃসাধ্য কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করার দৃঢ়তা দেখানো হচ্ছে। আর কেন্দ্রের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের জন্য ইতোমধ্যে ছক এঁকেছেন আবু সুফিয়ান। ত্যাগী নেতাদের খোঁজ যেমন করছেন, তেমনি সবার সহযোগিতাও আশা করছেন তিনি।
গত কয়েকমাস ধরেই গুঞ্জন চলছিল, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকেও আবু সুফিয়ানকে আহবায়ক হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু দক্ষিণ জেলার দায়িত্ব নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন আবু সুফিয়ান। দলটির কেন্দ্রিয় নেতৃত্ব তার প্রতি আস্থার বিষয়টি সামনে আনলে রাজি হন সুফিয়ান। এরপর গত ২ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবু সুফিয়ানকে আহবায়ক করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেন। তিনমাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে দেওয়া হয় এতে। কষ্টসাধ্য এ কাজটি সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য সুফিয়ান দক্ষিণ জেলার ত্যাগী নেতাদের খোঁজ নিতে শুরু করেছেন। তৃণমূল থেকে কিভাবে নেতাদের তুলে আনবেন সেটার জন্য নিয়মিত নানান ছক আঁকছেন তিনি।
আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বাধীন আহবায়ক কমিটি আজ বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন। নবগঠিত কমিটির সদস্যদের এটি হবে প্রথম বৈঠক। এরপর আগামিকাল শুক্রবার সভা করবে আহবায়ক কমিটি। সভা থেকে ভেঙে দেওয়া হবে প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভাসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কমিটি। সবগুলো কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর উপজেলা ও পৌরসভায় করা হবে আহবায়ক কমিটি। একমাসের সময় দিয়ে উপজেলা আহবায়ক কমিটিকে ইউনিয়ন কমিটি ও উপজেলার কমিটি গঠন করতে হবে। একইভাবে পৌরসভা আহবায়ক কমিটি একমাসের মধ্যে ওয়ার্ড ও পৌরসভা কমিটি গঠন করবে। সম্মেলন করে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে উপজেলা ও পৌরসভার নেতৃত্ব নির্বাচনের শর্ত দিচ্ছেন তিনি। এরপর জেলা পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠন করা হবে। পুরো কার্যক্রম নির্ধারিত তিনমাসের আগেই শেষ করার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, বৃহস্পতিবার মিট দ্যা প্রেস করবো। এতে আহবায়ক কমিটির ৬৫ সদস্যরা পরিচিত হবেন। এরপর শুক্রবার আমরা কমিটির মিটিং করবো। ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা-পৌরসভার সব কমিটি ভেঙে দেয়া হবে। আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে। উপজেলার আহবায়ক কমিটি ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করে দিতে হবে। আমাদের তিনমাস সময় আছে। আমরা আশা করছি তিনমাসের আগেই কমিটি গঠন করার।
এক প্রশ্নের জবাবে আবু সুফিয়ান বলেন, ইতোমধ্যে আমি আনোয়ারায় মাজার জেয়ারতে গিয়েছি। সাতকানিয়াতে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। বেশ কয়েকটি জায়গায় যাওয়া হয়েছে। তবে সাংগঠনিক কাজ নিয়ে এখনো কোথাও যাইনি। শুক্রবার সভার পর থেকে আমরা একযোগে কাজ শুরু করবো। এরমধ্যে আমরা বিভিন্ন স্থানের রিপোর্ট নিচ্ছি। সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেয়ার পর শুক্রবার আনোয়ারায় শাহ মোহছেন আউলিয়ার মাজার জেয়ারত করেন আবু সুফিয়ান। এরপর রবিবার নিউ মার্কেট দোস্ত বিল্ডিং দলীয় কার্যালয়ে কর্মসূচিতে উপস্থিত হন তিনি। এরই মধ্যে সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়ও অংশ নেন। দীর্ঘসময় পর দায়িত্বশীল এমন নেতা পেয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কর্মীরা প্রাণ ফিয়ে পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
২০১০ সালের ২০ মার্চ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনের পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তখন দক্ষিণ জেলার বিএনপির একটি অংশ এ কমিটি মেনে নিতে পারেনি। পরে পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আহমদ খলিল খানকে সভাপতি এবং ইফতেখার মহসিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ফলে কমিটি-পাল্টা কমিটির কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিধাবিভক্ত দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে একত্রিত করতে উদ্যোগ নেয় দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। ১৫১ সদস্যের পুনর্গঠিত কমিটিতে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি বহাল রাখা হলেও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদের স্থলে পটিয়ার সাবেক এমপি গাজী শাহাজাহান জুয়েলকে নতুন সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমদকে পুনর্গঠিত কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়।