চালক-হেলপাররাই বাড়িয়ে দিল ভাড়া!

74

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কোন নির্দেশনা না মেনে চালক-হেলপাররা মিলে নিজেরাই বাড়িয়ে দিয়েছেন গণপরিবহন ভাড়া। লাইনচার্জ আর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে বলে জানান তারা। আর এদিকে বিআরটিএ বলছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত নিলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতি ইউনিটে তিন টাকা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নগরীর সব রুটের প্রায় সব ধরনের যানবাহনে দুই থেকে পাঁচ টাকা বাড়িয়েছে টেম্পু, বোরাক (সিএনজিচালিত টমটম) ও বাসসমূহ। যাত্রীরা প্রতিবাদ করতে গেলেই পাল্টা তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন চালক-হেলপাররা।
সরেজমিনে চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত টেম্পু যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ করেই কোন সিদ্ধান্ত বা নিয়ম না মেনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
সিএনজিচালিত টমটম যেটিকে স্থানীয় ভাষায় বোরাক বলে সেটি চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত যাতায়াত করে। ওই গাড়িতে যাত্রী পরিবহন করে ছয়জন। যার মধ্যে ভেতরে চারজন আর চালকের দুইপাশে দুইজন। চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লা আসতেই দিতে হবে ১০ টাকা। কেন ১০ টাকা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন, লাইনম্যানকে টাকা বেশি দিতে হয় বিধায় প্রতিজন ১০ টাকা করে নিই। এখানে শুধু আমি একা নিচ্ছি না, সবাই নিচ্ছে।
চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লার উদ্দেশ্যে টিকটিকিতে উঠেছে আব্দুল্লাহ হক। তিনি ওই রুটের নিয়মিত যাত্রী। ছয় টাকার ভাড়া গত এক সপ্তাহ ধরে আট টাকায় দিয়ে আসছে বলে জানান তিনি। মাঝে মাঝে ১০ টাকাও দিতে হয়। সবাই দিচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে তাকেও দিতে হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদককে জানালেন আব্দুল্লাহ হক।
কোতোয়ালী মোড়ে অনুপযুক্ত (১৬ বছর বয়স) এক টেম্পু চালক নাঈমুদ্দিন বলেন, এখন গ্যাসের দাম আর লাইন খরচ বেশি। তাই আমরা মূল ভাড়ার সাথে অতিরিক্ত দুই-তিন টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছি। লাইন খরচের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন- লাইনম্যান জমায় আগে আমাদের কাছ থেকে নিতো ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এখন ১০০ টাকার নিচে নেয় না। তাহলে সারাদিনে যদি ১০০ টাকা দিয়ে দিতে হয় তাহলে হাত খরচার কোন টাকাই তো থাকে না। তাই দু’এক টাকা বাড়িয়ে নিয়ে পুষিয়ে নিতে হয়।
বাস হেলপারদের দাবি, গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খরচ বেড়েছে। এ কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে। মালিকের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোর কারণে বাড়তি ভাড়া না নিলে এ লোকসান তাদেরই বহন করতে হবে বলেও জানান।
বাস কন্ট্রাক্টর কামাল উদ্দিন বলেন, গ্যাসের দাম যখন বাড়িয়েছে তখন সরকারের উচিত ভাড়া বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া, উনারা যদি ভাড়া না বাড়ায় তাহলে আমাদের পথে বসতে হচ্ছে। তাই আমরা দু’এক টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছি। যাত্রী সোহেল রানার অভিযোগ, ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তাই গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এখনই বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারেন না। অথচ প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এ নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতি লাগাম টানা না গেলে ভিন্নরূপ নিতে পারে। যাত্রী ও গণপরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষও ঘটতে পারে।
বোরাক চালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনতে হচ্ছে ৪৫ টাকা করে। বেশি দামে গ্যাস কিনে যাত্রীদের কাছ থেকে কেউ কম ভাড়া নেবে না, তাই আমিও নিচ্ছি না। কবে সরকার বাড়তি ভাড়ার রেট নির্ধারণ করবে তার জন্যতো আমরা বসে থাকতে পারি না।
কয়েকজন চালক রাস্তার দোষ দিয়ে বলেন, মহানগরীর প্রায় কয়েকটা রুটে ওয়াসার কাজ চলছে। যার কারণে ওইসব রুটে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কোন প্রকারের যান চলাচল করতে পারছে না। এক রুটের গাড়ি অন্য রুট দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে বিধায় অতিরিক্ত জ্বালানির প্রয়োজন হচ্ছে। তাই বরাবরের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন তারা।
ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হকের সাথে কথা বললে তিনি পূর্বদেশকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ভাড়া এবং অন্যান্য অসংগতিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। কোন গাড়ির বিরুদ্ধে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে অবশ্যই সে গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। এর আগেও জনসাধারণের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
জনসাধারণের কাছে অনুরোধ করে তিনি আরও বলেন, আপনারা আমাদের জানান। আপনারা একটু সচেতন হলে আমরাও আরো আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে পারবো। এ বিষয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টদেরও ভূমিকা রয়েছে। মোটকথা হলো সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।