চালক-হেলপারদের কাছে জিম্মি যাত্রীরা

33

পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয় গত সোমবার। কিন্তু এখনও বাস হেলপার-চালকদের কাছে এর রেশ কাটেনি। তারা যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছেমত ভাড়া নিচ্ছে। আদায় করছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া- এমন অভিযোগ শাহ আমানত সেতু এলাকার অসংখ্য যাত্রীর। পরিবহন নেতারা বলছেন, বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো ফলাফল শূন্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, শাহ আমানত সেতু এলাকায় টিকেট কাউন্টার ব্যতিত কয়েকটি গাড়ি রাস্তা থেকে যাত্রী উঠাচ্ছে। যাত্রীরা নিয়মিত ভাড়া নেওয়া হবে মনে করে উঠে পড়ছেন গাড়িতে। কিছুদূর যাওয়ার পর বাস হেলপার বলে উঠেন ঈদ উপলক্ষে ভাড়া ডাবল। বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারছেন না যাত্রীরা। বরাবরের মতই বাকবিতÐায় জড়াচ্ছেন সবাই। যাত্রীদের প্রশ্ন, পরিবহনের এমন নৈরাজ্য থেকে রেহাই পাবো কবে?
দেখা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের ভাড়া ২০০ থেকে ২২০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকার বেশি। প্রতিবাদ করলে কয়েকজন হেলপার জড়ো হয়ে উল্টো অপমান করে বসছে যাত্রীদের। এতে যাত্রীরা তাদের কাছে জিম্মি।
চট্টগ্রাম থেকে রওশনহাটের যাত্রী মো. মহিউদ্দিন মুঠোফোনে জানান, আমরা নিয়মিত চট্টগ্রাম থেকে যেতাম ২৫ টাকায় কিন্তু ঈদের বাহানা দিয়ে বললো ৫০ টাকা দিতে হবে। আমি ৫০ টাকা দিতে অস্বীকার করলে বাস হেলপার আমাকে হেঁটে বাড়ি যেতে বলেন। পরে বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠলাম।
দোহাজারীর যাত্রী মো. আজাদ হোসেন বলেন, নিয়মিত ভাড়া যেখানে ৫০ টাকা, সেখানে আজকে (বৃহস্পতিবার) নিচ্ছে ১০০ টাকা। তাদের কথা একটা, যেখানেই নামেন ১০০ টাকা। যাত্রীর সংখ্যা বেশি এবং গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ার কারণে তারা এমন আচরণ করছে।
দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে নিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে চলছে কক্সবাজার এবং বান্দরবান পর্যটন এলাকায়। কিন্তুঅতিরিক্ত ভাড়া আদায় থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। পরিবহন সংকটকে কাজে লাগিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করেই নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া। তেমনি সাতকানিয়ার কেরানিহাট থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বান্দরবানের রেইছা গোয়ালিয়া খোলা এলাকার মো. ফোরকান বলেন, কেরানিহাট থেকে চকরিয়ার বাস ভাড়া ৫০ টাকা, কিন্তু আমার থেকে নিচ্ছে ১২০ টাকা। ঈদকে উপলক্ষ করে পরিবহন শ্রমিকরা সুযোগ বুঝে যাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করছে।
তিনি আরও জানান, প্রকাশ্যে এই ডাকাতি চললেও দেখার কেউ নেই। দেশে কোন আইন-কানুন নেই? যার কারণে সাধারণ যাত্রীরা অসহায় হয়ে এই ডাকাতি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। পরিবহনে এমন নৈরাজ্য রুখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোড় আওয়াজ তুললেও বাস্তবতায় সবাই নীরব দর্শক।
আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট গাড়িগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। বাইরের গাড়িও এসে আমাদের এখান থেকে যাত্রী তুলছে। আমি লক্ষ্য করেছি, চট্টগ্রাম মহানগরের অভ্যন্তরীণ যে হিউম্যান হলার পরিবহনগুলো আছে, সেগুলো আমাদের রুটে এসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাত্রী নিচ্ছে। গাড়ির সংকটকে কাজে লাগিয়ে তারা এ সুবিধাটি গ্রহণ করে আমাদের সংগঠনের সুনাম ক্ষুণœ করছে।
তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের সকলকে বলে দেওয়া আছে, কেউ যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়। যদি আমাদের আদেশ অমান্য করে, তাহলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক পূর্বদেশকে বলেন, শাহ আমানত সেতু এলাকায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন যাবত চালক-হেলপারদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার এবং যেকোন বন্ধের আগের দিন এসব রুটে নৈরাজ্য নেমে আসে, আর এখন নতুন মাত্রা দিয়েছে ঈদের ছুটি। এ সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। আমি যাত্রী সাধারণকে অনুরোধ করবো, কোন গাড়ি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে, ওই গাড়ির নম্বরটি আমাকে জানান, আমি ওই গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির ঈদের আগেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ ছিলো, সাথে সাথেই আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। সাধারণ যাত্রীদেরকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কখনো কাম্য নয়।