চাঁদ-সূর্য

144

সাঁঝের বেলায় পূব আকাশে চাঁদটা দিলে উঁকি,
মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করে খুকি-
এই দেখো না তাকিয়ে মাগো চাঁদটা কত ভালো,
সারাটা রাত অকাতরে বিলিয়ে চলে আলো।

আলোর ছটায় খুশির চোটে ফুলকলিরা হাসে,
চিক চিক চিক শিশির তাকায় নরম কচি ঘাসে।
কাজলকালো পদ্মদিঘির কূল ছাপানো জল,
আলোর নাচন ঠিকরে পড়ে রূপ করে টলমল।

রূপালি চাঁদ থালার মতো আকাশ জুড়ে ঘোরে,
রাতটা কাটায় জেগে জেগে যায় হারিয়ে ভোরে।
দিনের বেলায় যায় না দেখা,লুকিয়ে কোথায় থাকে?
জড়োসড়ো হয়ে পালায়,ভয় করে সে কাকে ?

খুকির কথা শেষ না হতেই মা ডেকে কন-শোনো,
চাঁদ-সূর্য দু’ভাইবোনে শত্রæতা নেই কোনো।
অঢেল আলো সূর্যের তাই বোনকে জোগায় কিছু,
ভাইয়ের কাছে ধার নিলে চাঁদ হয় না মোটেই নিচু।

সূর্য দিয়ে প্রখর আলো মাতিয়ে রাখে দিন,
রাতে যখন সূর্য ঘুমায় চাঁদ আলো নেয় ঋণ।
ওদের সাথে মিত্রতা খুব আছে মনের মিল,
ধার করলেও নেয় না ফেরৎ, হয় না দিতে বিল।

হেমন্তের ভোর
আবদুল হামিদ মাহবুব

সারারাত শিশিরেরা
ঝরে পড়ে ঘাসে
ভোর বেলা আলো পেয়ে
চিক্ চিক্ হাসে।

মাঠ জুড়ে ধান গাছে
ফোটা ধরে ঝুলে
হাওয়া লেগে ধান পাতা
মৃদু মৃদু দুলে।

শিউলীর গাছ তলে
ছড়ানো যে ফুল
ফুলগুলো ডেকে বলে
হাত দিয়ে তোল।

ফোটা ধরা শিশিরেরা
পাতা থেকে ঝরে
কি যে ভালো লাগে আজ
মন কি যে করে!

হেমন্তে ভোর বেলা
এতো ভালো লাগে
তারা শুধু বুঝে এটা
যারা ভোরে জাগে।

যদি হতাম কোন উদাস ভবঘুরে
রেবেকা ইসলাম

যদি আমি হতাম কোন উদাস ভবঘুরে
শব্দমাখা জীবন ছেড়ে চলে যেতাম দূরে
ধূসর সাদা মেঘের সাথি সবুজ পাহাড় চূড়ে
মনের যত দুঃখ ব্যথা হাওয়ায় যেত উড়ে।

দুচোখ বুঁজে টেনে নিতাম ধ‚লিকণার ঘ্রাণ
শান্ত হয়ে শুনে যেতাম নীলাকাশের গান
দ‚রে কোন ঝরনাধারার মিষ্টি কলতান
হালকা হয়ে মলিন হতো বুকের যত মান ?

দুহাত ভরে মেখে নিতাম আলতো রোদের রেশ
রঙধনুর ওই মিঠে রঙে রঙিন হতো বেশ
পাখির সুরে পাগল হতো আকুল হৃদয়দেশ
উধাও হতো মনের যত নিকষ কালো ক্লেশ।

দুপায় পাতার ন‚পুর পরে হেঁটে যেতাম সুখে
শিরিশিরি পাতার আওয়াজ মনে রাখতাম টুকে
পাতায় ভরা গাছের শাখা দেখত আমায় ঝুঁকে
মান-অভিমান কষ্টের বোধ যেত চুকেবুকে।

রঙতুলি
সনজিত দে

আঁকব আকাশ তুলি হাতে
কিন্তু যে রঙ কোথায় পাই
রঙগুলো হায় শুকিয়ে যায়
ছবি আঁকা বন্ধ তাই ।

ভাবছি যখন বললো আকাশ
ভাবনা এতো কীসে ?
মনের সাথে ভাব করে নাও
নীলটা যাবে মিশে ।

ওম হঠাৎ, ছবি পাতায়
কোত্থেকে নীল মিলিয়ে যায়

আকাশ আঁকা খাতার পাতা
ভরে ওঠে নীলে
ভাবনা জগৎ আলো ছড়ায়
ছবির অন্ত্যমিলে ।

তুতুলের পুতুল পরী
শরীফ সাথী

পাটাচোরার তীর ধরার ছোট্ট মেয়ে তুতুল,
মিষ্টি হেসে পরীর দেশে খেলতে গেল পুতুল।
চাঁদ জোছনায় খেলছে খেলা বিশাল বৃক্ষ তলায়,
নাকেতে ফুল কানেতে দুল সোনার গয়না গলায়।
নিত্য রঙের শাড়ি জামা নানান পরী পরায়,
বৃক্ষ তলে শোভা দিতে পুষ্প সুবাস ছড়ায়।
পুতুল বিয়ে দিয়ে তুতুল আসে ফিরে ভোরে,
মা জননী বললো ওরে ডাকছি আমি তোরে।
হাত মুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে মন দে লেখা পড়ায়,
চাঁদের শেষে আমার দেশে রবির আলো গড়ায়।
স্বপ্ন শেষে দুচোখ মেলে জানালার ওই পাশে,
শীষ দিয়ে যাই দোয়েল পাখি গাছে অনায়াসে।
স্বপ্ন পরী ঘুমের আবেশ তরী বেয়ে আসে,
সবুজ শ্যামল মিষ্টি এদেশ দেখে তুতুল হাসে।

হেমন্তের ছড়া
মুস্তফা মানিক

আকাশের কোলে হাসে জোছনা-তারা,
জোনাকিরা আলো দেয় দৃষ্টিকাড়া
মিটিমিটি জ্বলে আজ রাতের আকাশ
অপরূপ সাজে পরী করে বসবাস।

বিলভরা ধানে হাসে কৃষকের মন,
নবসাজে প্রকৃতি গাছপালা-বন।
কুয়াশার মেলা বসে নামে যেন ঢল
সোনাঝরা রোদে খেলে পাখিদের দল।

নবান্নে জড়ো হয় পড়শিরা সবে,
উঠোনের কোণে বসে মাতে উৎসবে।
ভেদাভেদ ভুলে সব হাত রেখে হাতে,
মুখভরা হাসি দিয়ে চলে একসাথে।

খেজুরের গাছে ভাসে রসভরা হাড়ি,
দাঁড় টেনে মাঝি গায় জারি আর সারি।
পিঠাপুলি ঘরে ঘরে মজাদার স্বাদে,
দলবেঁধে মেতে উঠে খুশি-আহলাদে।

ঘুড়ি
বনশ্রী বড়ুয়া

উড়ছে ঘুড়ি, লালচে ঘুড়ি
আকাশ জুড়ে উড়াউড়ি,
ঘুড়ির মনে লাগলো দোলা
খুশির কোনো নেইকো জুড়ি।

উড়ছে ঘুড়ি নীলচে ঘুড়ি
সবাই দৌঁড়ায় পড়িমরি,
হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে
ছুটছে খোকা নাটাই ধরি।

উড়ছে ঘুড়ি হলদে ঘুড়ি
আকাশ জুড়ে হাজার কুড়ি,
ঘুড়ি খেলায় নাচছে সবাই
খোকা থেকে বুড়ো-বুড়ি।

হলুদ রাঙা হেমন্ত
স্বপন শর্মা

সবুজ পাতার শরষে-ক্ষেতে
ফুল ফোটে হলুদ
মধুর লোভে ভোমরগুলো
হচ্ছে সেথায় বুঁদ!

উঠোনজুড়ে গাঁদার বাগান
ফুটল হলুদ ফুল
মায়ের বারণ ছিঁড়বে না কেউ
করবে না সে ভুল।
ডাশা,কাঁচা সকল কলা
হলুদ রঙের হয়
বাদুড় পাখির আসা-যাওয়া
মালির ভীষণ ভয়।

গাছের পাতাও হিমেল বায়ে
ধরছে হলুদ ভাব,
হলুদ রাঙা হেমন্তে আজ
নেই সূর্যের তাপ।