চলতি মাসেই পুরো অর্থ ছাড় করছে মন্ত্রণালয়

39

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গুরুত্বপ‚র্ণ ‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী’ পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয় ২০১৪ সালের ২৪ জুন। কিন্তু ভ‚মি অধিগ্রহণে অর্থ সংকটের কারণে যথাসময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। ফলে তৃতীয়বারের মতো প্রকল্প সংশোধনে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চারগুণ। গত বছরের ৭ নভেম্বর একনেক সভায় সংশোধিত ব্যয় অনুমোদনের সময় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। গত ফেব্রæয়ারিতে সিটি কর্পোরেশনের চাহিদাপত্রের ভিত্তিকে চলতি মাসেই একসাথে পুরো অর্থছাড় করছে মন্ত্রণালয়। তবে অধিগ্রহণ শেষে প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফা আবারও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে খালটি খনন হলে নগরীর বড় একটি অংশের পানি সরাসরি গিয়ে পড়বে কর্ণফুলী নদীতে। ফলে নগরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করেন নগরবাসী।
গত ফেব্রæয়ারিতে ভ‚মি অধিগ্রহণ জটিলতা থেকে বাঁচতে একসাথে পুরো অর্থছাড় চেয়ে চাহিদাপত্র দিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন । চসিকের আবেদনে দেরিতে হলেও সাড়া দিয়েছে মন্ত্রণালয়। চলতি মাসেই এই প্রকল্পের ভ‚মি অধিগ্রহণের সব টাকা একসঙ্গেই পাচ্ছে চসিক। অন্যদিকে ভ‚মি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির (প্রথম সংশোধিত) মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের এক হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মধ্যে সরকার দেবে ৯৪২ কোটি ১১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এবং চসিক বহন করবে ৩১৪ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এরমধ্যে শুধুমাত্র ভূমি ক্রয়, অধিগ্রহণ ও ভবন ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় হবে ১ হাজার ১১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এতে সরকার দেবে ৮৩৯ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং চসিককে বহন করতে হবে ২৭৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে প্রকল্পে সরকার বা মন্ত্রণালয় থেকে মোট প্রাপ্য সব অর্থই ভ‚মি অধিগ্রহণে ব্যয় করবে চসিক। এ প্রকল্পে এর আগে ৬৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ছাড় করেছিল মন্ত্রণালয়। এর ফলে মন্ত্রণালয় থেকে মোট প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৮৭৮ কোটি ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) একসঙ্গে ৮৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার জন্য গত ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা।
তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ নেই। তাই আমরা সংশোধিত বাজেটে প্রকল্পের জন্য সরকার থেকে প্রাপ্য সব টাকা একসঙ্গে বরাদ্দ রাখার জন্য চাহিদাপত্র দিয়েছিলাম। ওই টাকা ভ‚মি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে। সংশোধিত বাজেটে ভ‚মি অধিগ্রহণের জন্য ৮৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ওই অর্থ ছাড়ের জন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পর অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি চলতি মাসেই সেই অর্থ সিটি কর্পোরেশন পেতে যাচ্ছে। অর্থ পেলে আমরা তা জেলা প্রশাসনে জমা দেবো। জেলা প্রশাসন জায়গা বুঝিয়ে দিলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়তে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় আছে আর এক বছর। এই সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে হবে। বিষয়টা জেলা প্রশাসনের উপর নির্ভর করছে। তারপরও আমরা আপাতত ধরে নিচ্ছি, এই প্রকল্পের সময় আরও বাড়াতে হতে পারে। সেটা মেয়াদ শেষ হওয়ার তিনমাস আগে আবেদন করা হবে।
প্রকল্পের ভ‚মি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে চসিকের এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ভ‚মি অধিগ্রহণের সম্পূর্ণ জায়গাকে আমরা পাঁচ ভাগে ভাগ করে পাঁচটি মামলা করেছি। ভ‚মি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা গত ২ মে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে গেছে। প্রস্তাবনা দ্রæত অনুমোদনের জন্য ভ‚মিমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন চসিক মেয়র।
তিনি আরও বলেন, গত মে মাসে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের কাজ মূল্যায়ন সভা হয়। সেখানে মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।