চট্টগ্রামে পাসের হারে অধঃগতির কারণ খুঁজে বের করতে হবে

45

গত বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তরের মাধ্যমে ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশিত ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। ৭৩.৯৩ শতাংশ পাসের হারকে ‘যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য ও ভালো’ ফল হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিলে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। ছেলে-মেয়েরা যাতে পড়ালেখায় মনোযোগি হয়, সে জন্য নেওয়া উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ফল প্রকাশকালে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বছর সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষা বোর্ডসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডে সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। এদের মধ্যে পাস করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পর সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের ব্যাপারে সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, এবার নির্ধারিত সময়সীমার কয়েকদিন আগেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এজন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাতে হয়। সামগ্রিক বিচারে গতবারের তুলনায় এ বছর পরীক্ষায় পাসের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে শিক্ষার মান আমরা কতটা বাড়াতে পেরেছি, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। মনে রাখতে হবে, পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়েও বেশি জরুরি হল শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা। এজন্য বাস্তব অগ্রগতির নিরীক্ষা হওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফল ক্রমান্বয়ে খারাপ হওয়ার কারণসহ দেশের ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী কেন উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হল, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত।
বেশ কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ফাঁস হলেও এবার এসএসসির পর এইচএসসিতেও প্রশ্ন ফাঁসের কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় নি। আশা করা যায়, নকলের মতই প্রশ্নপত্র ফাঁসের খারাপ ইতিহাস একদিন মুছে যাবে।
বর্তমান সরকার ও নব নিযুক্ত দুই মন্ত্রীর অভিব্যক্তি থেকে অনুমান করা যায়, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগি করার চেষ্টা চলছে। তবে এ চেষ্টা হতে হবে বুনিয়াদি শিক্ষা থেকে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে এ দেশে শতভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। দেশের সবকটি শিক্ষা বোর্ডের তুলনায় গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এইএসসিতে পাসের হার কমে আসছে। যদিও এবার জিপিএ-৫ গতবারের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু এ বোর্ডের সামগ্রিকভাবে ফল বিপর্যয় চট্টগ্রামবাসী হতাশ হয়েছে। বিশেষকরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ যেসব প্রতিষ্ঠান খারাপ ফল করেছে, সেগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ সবকটি বিষয়সহ সকল শূন্যপদে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দান, শিক্ষকদের সমস্যার সমাধানসহ একাদশ সমাপনী ও নির্বাচনী পরীক্ষার সঠিক মূল্যায়ন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মটিভেশন করা গেলে শিক্ষার মান নিশ্চিত করাসহ ফল বিপর্যয়ও রোধ করা যাবে বলে আমাদের ধারণা। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ২০১৮ সালে এসএসসির ফল বিপর্যয়রোধে এজাতীয় একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। তারা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ফল কেন খারাপ হচ্ছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে মটিভেশনসহ বিশেষ কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল বলে আমরা জেনেছি। ফলে এবার মফস্বলের এসএসসির ফল বেশ উন্নত হয়েছিল। আমরা মনে করি, বোর্ড ও চসিক কর্তৃপক্ষ একটু মনোযোগ দিলেই উচ্চ মাধ্যমিকের ফলও ভালো হবে।
শিক্ষার্থীদের জীবনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ স্তর অতিক্রম করে তবেই শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সুযোগ পায়, যা ভবিষ্যৎ জীবন গঠন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে, দৈনিক পূর্বদেশের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর যারা দুর্ভাগ্যবশত পাস করতে পারেনি, তারা যেন হতাশ না হয়। আগামীবার তারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবে, এমনটিই প্রত্যাশা।