চট্টগ্রামে এবার সম্মিলিত একুশের বইমেলা

107

ইতিহাস বলে, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে সাহিত্য চর্চায় অনন্য অবদান রেখেছিল চট্টগ্রাম। এমনকি ভারতের কলকাতা শহরের বড় বড় লেখকরাও চট্টগ্রাম থেকে বই প্রকাশ করেছেন। সময়ের পরিক্রমায় রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে যায় সবকিছু। চট্টগ্রামে সাহিত্য চর্চার স্থানগুলোও ছোট ছোট আকারে ভাগ হতে থাকে। এরই মধ্যে ঢাকায় বাংলা একাডেমির বইমেলা তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
চট্টগ্রামেও অনেক বছর ধরে বইমেলা হয়ে আসছিল। কিন্তু নানা অসঙ্গতি, বিভক্তি ও নির্ধারিত সময় না থাকায় এখানকার বইমেলাগুলো পাঠকের মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। সাহিত্য চর্চার কঠিন এ সময়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পৃষ্ঠপোষকতায় এ বছর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বৃহৎ আকারে সম্মিলিত বইমেলা।
বাংলা একাডেমির আদলে চলতি বছর থেকে একুশে বইমেলা হবে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে, যা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে দেড় শতাধিক স্টল নিয়ে হবে এ মেলা। এবার চট্টগ্রাম থেকে এক হাজারের অধিক বই প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একুশে বইমেলা উদযাপন কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে অনেকগুলো বইমেলা হয়। সবার মাঝে প্রত্যাশা আছে বড় আকারের একটি বইমেলার। তাছাড়া চট্টগ্রামে মানসম্পন্ন
বইমেলা ছিলো না। যার কারণে পাঠক, ক্রেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট, ক্ষোভ, অভিমান ছিল। আমি আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় সবাইকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করেছি। চট্টগ্রামবাসী বইমেলাকে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যেই দেখতে চায়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার আয়োজন করে। মেয়র আ জ ম নাছির দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বছরেই সম্মিলিত বইমেলা করার ঘোষণা দেন। দ্বিতীয় বছর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে আবারও তিনি একই ঘোষণা দেন। চতুর্থ বছরে এসে মেয়রের সে ঘোষণার বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরই মধ্যে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের পক্ষ থেকে সম্মিলিত বইমেলা করার জন্য মেয়রের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়। পরিষদের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন লেখক, প্রকাশক ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সম্মিলিত বইমেলা করার জন্য মেয়র একাধিক বৈঠকও করেন। অবশেষে পুরো বইমেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব নিয়ে মেয়র সম্মিলিত বইমেলা করার সিদ্ধান্ত নেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতরা সম্মিলিতভাবে এ মেলায় অংশগ্রহণ করবেন।
অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ এর যুগ্ম সদস্য সচিব জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিসরে যে মেলাগুলো হয় সেগুলো বাদ দিয়ে সম্মিলিত একটি বইমেলা চেয়েছিলাম। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাত ধরে সেটা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এখন প্রতিবছর চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট জায়গায় ও নির্দিষ্ট তারিখে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই বইমেলা একটি উৎসবে পরিণত হবে, এটা আমাদের বিশ্বাস।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত সম্মিলিত বইমেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের শতাধিক প্রকাশক, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক স্টল বরাদ্দ চেয়েছেন। মেলায় স্টল সংখ্যা দেড় শতাধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মেলায় এক হাজারের অধিক বই প্রকাশিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেলায় বইয়ের স্টল ছাড়াও সাহিত্য আড্ডা, আলোচনা মঞ্চ, সেলিব্রেটি মঞ্চ, ফুড কর্ণার, প্রধান মঞ্চসহ নানান সুযোগ সুবিধার সমন্বয় ঘটানো হবে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলার স্টল বসানোর কাজ শুরু করবে আয়োজক কমিটি। ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরো আয়োজন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা আছে। বইমেলাতে বেশ কয়েকজন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সম্মিলিত বইমেলা লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হবে।
অমর একুশে বইমেলা-২০১৯ এ ইতোমধ্যে ঢাকার ৫০জন প্রকাশক ও চট্টগ্রামের ৪৭জন প্রকাশক অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যেসব খ্যাতনামা প্রকাশক তাদের স্টল নিশ্চিত করেছেন সেগুলো হলো-অনন্যা, অন্যপ্রকাশ, সময় প্রকাশন, অনুপম প্রকাশনী, আগামী প্রকাশনী, কাকলী প্রকাশনী, নওরোজ কিতাবিস্থান, মওলা ব্রাদার্স, অনিন্দ্য প্রকাশ, রিদম প্রকাশনী সংস্থা, প্রতিভা প্রকাশ, বেহুলা বাংলা, বইপত্র প্রকাশন, টাঙ্গণ, বাবুই, চারুলিপি, কথা প্রকাশ, স্বরবৃত্ত প্রকাশন, প্রতিভা প্রকাশ, মূর্ধন্য, সপ্তডিঙ্গা, বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড, কিশোর কলম, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন, হাওলাদার প্রকাশন, ঝিঙেফুল প্রকাশন, আহমদ পাবলিশিং হাউস, প্রথমা প্রকাশন, বাতিঘর, নালন্দা, অয়ন প্রকাশন, দারুস সালাম বাংলাদেশ, রিমঝিম প্রকাশনী, হরিতপত্র প্রকাশনী, বাতিঘর-চট্টগ্রাম, পাপড়ি প্রকাশন-সিলেট, অ্যাডন প্রকাশন-ঢাকা, বলাকা প্রকাশন-চট্টগ্রাম। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে চার শতাধিক বই প্রকাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে শুধু বলাকা প্রকাশন-চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হবে ৭২টি বই। তাছাড়া শব্দশিল্প থেকে ২৫-৩০টি, শৈলী থেকে ৩০-৪০টি, অক্ষরবৃত্ত থেকে প্রায় ৩০টি বই প্রকাশ হবে। সবমিলিয়ে এবার এক হাজারেরও বেশি বই প্রকাশিত হবে।
উল্লেখ্য, দশটি সিদ্ধান্তের আলোকে সম্মিলিতভাবে একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সিদ্ধান্তগুলো হলো-প্রতিবছর ১০ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারি সম্মিলিত বইমেলা করা, স্থান হিসেবে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম সংলগ্ন মাঠ ও প্রয়োজনে জিমনেসিয়াম ব্যবহার, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে মেলা পরিচালনা, সকল অবকাঠামো ও আর্থিক বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন ব্যবস্থা করা, লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষকদের নিয়ে উপকমিটি গঠন, প্রকৃত প্রকাশকদের মেলার স্টল বরাদ্দ, মানসম্পন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, বিজ্ঞাপন দিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রকাশকদের অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো এবং ঢাকা ও বিভিন্ন জেলার অবস্থানরত চট্টগ্রামের গুণীজনদের আমন্ত্রণ জানানো।