ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

164

ফটিকছড়ি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমিজমা সংক্রান্ত কাজ সম্পাদনে গেলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভূমি মালিকরা। জমির রেজিস্ট্রেশন, দলিলের নকল, রের্কড যাচাইসহ বিভিন্ন কাজে যেতে হয় ভূমি মালিকদের সংশ্লিষ্ট অফিসে। সেখানে গিয়ে বাড়তি অর্থ ব্যয় ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কোন কাজই আদায় করা যাচ্ছে না। সমগ্র উপজেলায় রয়েছে মোট ৩টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। দীর্ঘ দিন যাবৎ দুটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রারের পদ শূণ্য রয়েছে। বর্তমান নানুপুর সাব-রেজিস্ট্রার অন্য দুটি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া ও উক্ত অফিসের এক অফিস সহকারির বিরুদ্ধে অসৈাজন্য মূলক আচরনসহ নানা অভিযোগ করেছেন সেবা গ্রহীতারা। জানা যায়, ভূমি হস্তান্তরের জন্য দলিল সম্পাদন করতে দাতা গ্রহীতা উভয়কে যেতে হয় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। সেখানে গিয়ে দ্বারস্থ হতে হয় অনুমোদিত দলিল লেখকদের। তিনি স্টাস্প বা কার্টিজে দলিল লিখে তাহা উপস্থাপন করেন সাব-রেজিস্ট্রারের সামনে। এসময় ক্রেতা বিক্রেতার উপস্থিত থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কর প্রাপ্তির রশিদ দেখার পর রেজিস্ট্রেশন কাজ সমাপ্ত হয়। অতপর একটি বইয়ে দলিল দাতার আঙ্গুলের ছাপ কিংবা স্বাক্ষর নিয়ে বালামে লিপিবদ্ধের জন্য প্রেরণ করা হয়। আর এসব কাজে ভূমির ক্রেতা বিক্রেতাকে পদে পদে গুনতে হয় সরকরী ফি’র নামে কয়েক গুণ বাড়তি অর্থ। অভিযোগ রয়েছে এসব বাড়তি অর্থের জন্য কোন রশিদ প্রদান করা হয় না। সূত্রে জানা যায়, জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে ও চলছে সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে চলছে সর্বদা শুভঙ্করের ফাঁকি। সূত্রে জানা যায়, জমি রেজিস্ট্রির পর তা হুবহু বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধের জন্য দলিলটি পাটানো হয় নকল বিন্যাস শাখায়। এরপর তিন মাস থেকে এক বছরের মধ্যে রশিদ জমা দিয়ে মূল দলিল তুলে নিতে হয় সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে। রফিকুল ইসলাম নামে এক গ্রহীতার অভিযোগ গত ছয় বছর আগে তিনি একটি ঘর তৈরির জন্য জমি ক্রয় করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি তার কবলাটি অফিস থেকে উত্তোলন করতে পারেন নি। তার চেয়ে বেশী হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয় স্বত্ব যাচাইয়ের জন্য তল্লাশি বা পুরাতন দলিলের নকল উত্তোলনের ক্ষেত্রে। কেউ এ কাজে গেলেই বলা হয় ভলিউমের পাতা নেই, কাল আসুন বা পরশু আসুন। শুরু হয় নানা ধরনের বাহানা। তবে মোটা অংকের বখশ্সি ধরিয়ে দিলেই কাঙ্খিত কাগজ খানা নিয়ে অনায়াসে বাড়ি ফেরা যায় অনায়াসে। সূত্রে আরো জানা যায়, রেকর্ড তল্লাশির জন্য যেখানে নির্ধারিত বাৎসরিক ফি ৫টাকা পরবর্তী বছরে হারে নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু সেখানে থেকে ১৫০০ টাকার ও অধিক দাবি করার অভিযোগ রয়েছে। স¤প্রতি সরেজমিন ফটিকছড়ি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে দলিল গ্রহীতা মো. ছোলেমান চরম দুর্ভোগের কথা বলেন এভাবে- দলিলের নকল তুলতে বাচাই করার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে গত ১লা জানুয়ারি। কিন্তু আজ অবধি দলিলের নকলটি পায়নি। বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে অফিসের সহকারীরা বলেন, খুব শীগ্রই পাওয়া যাবে। আবদুল নাঈম নামে আরেক ভূক্তভোগী জানালেন দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে আসলে প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিতে হয় অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘূষ। এ ছাড়া ও বর্তমান অফিস সহকারী মোহাম্মদ হারুনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। সেবা গ্রহীতা নাঈম নিয়মিত ফি দাখিলের পর ও অতিরিক্ত উৎকোচ দাবি করেন অফিস সহকারী হারুন। নাঈম টাকা দিতে অস্বীকার করলে উক্ত সহকারী তার সাথে অসৈাজন্য মূলক আচরন করার অভিযোগ করেছেন। সাব-রেজিস্ট্রেরি অফিসের জনৈক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানকার দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয় জমির মালিকদের। তাদের জমির প্রকৃত মূল্য এবং এলাকায় সরকার নির্ধারিত জমির প্রকৃত মূল্য গরমিল করে এক শ্রেণির কতিপয় অসাধু দলিল লিখকরা মুনাফা হাসিলে ব্যস্ত সবসময়। তাদের কথার বাইরে কিছু করা হলে বিভিন্ন ফন্দিতে আটকিয়ে সাধারণ দাতা ও গ্রহীতাকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আমিনুল হক মুন্সি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাগজপত্র এবং রেকর্ড যাচাই করার পর সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা দেখে দলিল রেজিস্ট্রার করার জন্য ফাইল আকারে তৈরী করা হয়। এখানে কর ফাঁকি কিংবা বাড়তি মুনাফা অর্জনের প্রশ্নই আসেনা। অফিস সহকারী মোহাম্মদ হারুনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার অমিত মঙ্গল চাকমা জানান, তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া অফিসের কোন অনিয়মের অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।