ঘরে থাকা মানছে না নগরবাসী!

132

করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও জটলা পাকিয়ে অলিগলিতে আড্ডা দেয়া, কাঁচাবাজারে ভিড় করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে ভিড় করা ও অযথাই রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন মানুষ। জনসাধারণের এমন অবাধ বিচরণে ভয়াবহতার হুমকি বহন করছে। যদিও রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি রয়েছে। কোনো কিছুই যেন মানুষকে ঘরে আটকিয়ে রাখতে পারছে না।
মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় বাংলাদেশের জন্য করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিপদজনক হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সরকারের পক্ষ থেকেও এই ভাইরাস প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, সরকারি ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে অতিপ্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। কিন্তু করোনা আতঙ্কের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব না মেনে নগরীর ফুটপাত, মার্কেট ও রাস্তাঘাটে ঘুরছেন হাজারো মানুষ। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এক মিটার দূরত্ব রেখে চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা খুব কম মানুষই মানছেন। জটলা পাকিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়াসহ কাঁচাবাজার, গণপরিবহন, ব্যাংক ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে জনসাধারণের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা বন্ধ না করা গেলে এর ফল খুবই খারাপ হবে।
গত মঙ্গলবার বিকালে বহদ্দারহাট থেকে আন্দরকিল্লায় আসেন মনজুর আহসান। বেসরকারি চাকুরিজীবী এই ব্যক্তি বলেন, একটা জরুরি প্রয়োজনে আমাকে আন্দরকিল্লা আসতে হলো। কিন্তু রাস্তায় নেমে দেখলাম প্রায় মানুষ হাঁটাচলা করছে। রাস্তার পাশে আড্ডা দিতেও দেখলাম। কাঁচাবাজারে তো রীতিমতো ভিড় পড়েছে।
করোনা আতঙ্কের মধ্যে মানুষ ঘরবন্দি থাকাটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও চট্টগ্রামে কোনো রোগীর মৃত্যুর খবর না পাওয়াতে ভীতি দিনে দিনে সরে যাচ্ছে। ভীতি কমার সাথে সাথে মানুষের আনোগোনা বাড়ছে রাস্তায়, বাজারে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনার পিক টাইম সময় আসছে সামনে। এ মুহূর্তে প্রত্যেকের ঘরে অবস্থান করা জরুরি।
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে গতকাল নগরীর বিভিন্ন জায়গায় জটলা বেধে আড্ডা দেয়া, জড়ো হওয়া এবং ভিড় করার চিত্র দেখা গেছে। নগরীর বাকলিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষের ভিড় দেখা যায়। একই অবস্থা দেখা যায় বহদ্দারহাট, ষোলকবহর, রিয়াজউদ্দিনবাজার, মনসুরাবাদ, ঘাটফরহাদবেগ, নতুন ব্রিজ এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে। প্রায় প্রত্যেকটা কাঁচাবাজারেও লোকসমাগম দেখা গেছে।
চকবাজার এলাকায় বাজার করতে আসা আখতারুজ্জামান বলেন, কাঁচাবাজার করতে এসে দেখি মানুষের ভিড়। সবার ঘরে তরিতরকারির প্রয়োজন। এখন বাজার না করে চলে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। মানুষের আনাগোনার মধ্যেই প্রয়োজন সাড়তে হবে। ঝুঁকি থাকলেও করার কিছু নেই।
সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দমিয়ে রাখতে মানুষকে ঘরে রাখা এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারের এই কৌশলের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই বন্ধ বাড়িয়ে এখন ৯ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ খারাপ অবস্থায় যেনো যেতে না পারে সেজন্য সরকার এমন কার্যক্রম হাতে নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে রাস্তায় নামতে না পারে সেজন্য সেনাবাহিনীও নিয়োজিত করা হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারিভাবে ঘোষণা না দিলেও সব মিলিয়ে পুরো দেশ এখন লকডাউনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ যাতে ঘর থেকে বের না হয় সেজন্য তৎপরতা ছালানো হচ্ছে। তবে সরকারের এই তৎপরতার মধ্যেও অপ্রয়োজনে মানুষ ঘর ছাড়ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অতি দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘ। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হরে অত্যন্ত দ্রæতগতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। সংস্থাটি বাধ্যতামূলকভাবে ‘কোয়ারেন্টিন’ ও ‘আইসোলেশন’, এই ভাইরাসটির ঝুঁকির ব্যাপারে ব্যাপকভাবে অবহিত করা, সামাজিক দূরত্ব (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং), সামাজিক সুরক্ষা (সোশ্যাল প্রোটেকশন) এবং বিদ্যালয় ও জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলো বন্ধ করে দেয়ার উপর গুরুত্বরোপ করে। একই সাথে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তার সঙ্গে জাতিসংঘ একমত ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানানো হয়।
এদিকে করোনা আতঙ্কের মধ্যে বাজার মনিটরিং কাজ অব্যাহত রেখেছে তদারক সংস্থাসমূহ। নিত্যপ্রণ্যের দোকানগুলো ও ফার্মেসি এবং কাঁচাবাজার খোলা রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ফার্মেসিগুলোতে জনসমাগম কম হলেও নিত্যপণ্যের দোকানে ও কাঁচাবাজারে মানুষের ভিড় আছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক সেল অব্যাহত রেখেচে টিসিবি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে টিসিবির ট্রাক সেলে মিলছে চিনি, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল।
মনসুরাবাদ এলাকায় টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা নুরুল মোস্তফা বলেন, ঘরে কোনো খাবার নেই। বাধ্য হয়ে চাল-ডাল ও তেল কিনতে টিসিবির গাড়িতে আসলাম। আমার মতো নি¤œ আয়ের মানুষের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ঘরে বসে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তারপরও চেষ্ঠা করছি, যেন কম বের হই।