গ্রহাণুর ‘মৃত্যু’ দেখছে নাসা!

49

মহাকাশের অতল অন্ধকারে কীভাবে ধীরে ধীরে কোনো অ্যাস্টারয়েড বা গ্রহাণু মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় তা ধরা পড়েছে হাম্বল স্পেস টেলিস্কোপের চোখে। গ্রহাণুটির নাম ‘অ্যাস্টারয়েড ৬৪৭৮ গল্ট’, সূর্য থেকে ২১ কোটি ৪০ লাখ মাইল দূরে এর অবস্থান। টেলিস্কোপের চোখে ধরা পড়েছে, মৃত্যুপথযাত্রী ওই গ্রহাণুটির শরীর ভেঙে পড়ার দৃশ্য। তার শরীর ছেড়ে বেরিয়ে আসা অংশগুলো মহাকাশে তৈরি করছে লেজ। একেবারে ধূমকেতুর মতোই। হাম্বলের চোখে ধরা পড়া সেই ‘মৃত্যু দৃশ্যের’ খুঁটিনাটি প্রকাশিত হবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ব্রহ্মান্ডে গ্রহাণু ‘গল্ট’ অবশ্য পৃথিবী থেকে অনেক দূরে। গ্রহাণুটির অবস্থান মঙ্গল আর বৃহস্পতির মধ্যে থাকা অ্যাস্টারয়েড বেল্ট বা গ্রহাণুপুঞ্জে। সেখানে গল্টের মতোই রয়েছে ৮ লাখেরও বেশি গ্রহাণু। গ্রহাণুটি ভেঙে গিয়ে দুটি লেজের সৃষ্টি হয়েছে যার একটি লম্বায় ৮ লাখ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার। আর ছোট লেজটি লম্বায় ২ লাখ কিলোমিটার লম্বা। এখন থেকে ৩১ বছর আগে ১৯৮৮ সালে প্রথম জানা গিয়েছিল গ্রহাণু গল্টের কথা। তখন এটিকে আর পাঁচটা সাধারণ গ্রহাণুর মতোই একটা পাথুরে মহাজাগতিক বস্তু হিসেবে মনে করেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তবে কোনো লেজের কথা তখনো তারা জানতেন না।
গ্রহাণু গল্টকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে সূর্য। প্রদক্ষিণের সময় সূর্যের কাছাকাছি এসে পড়লেই সূর্যের রোষানলে পড়তে হয় গ্রহাণুকে। সূর্যের প্রচন্ড তাপে যখন তেতে-পুড়ে যায় গ্রহাণুর শরীর। গ্রহাণুটির যে জায়গাটা সবচেয়ে বেশি গরম হয় সেখান থেকে বেরিয়ে আসে ইনফ্রারেড রেডিয়েশন বা অবলোহিত বিকিরণ। অবলোহিত বিকিরণের কিছুটা গতিশক্তির জন্ম দেয়। বাকিটা তাপশক্তিই থেকে যায়। বাড়তি গতিশক্তির জন্য গ্রহাণুটির ঘূর্ণনের গতিবেগ অত্যন্ত বেড়ে যায়। আর উত্তরোত্তর সেই গতিবেগ বাড়িয়ে চলে। তার ফলে গ্রহাণুর শরীরের অংশগুলো বেরিয়ে আসতে চায় গ্রহাণুটি থেকে। গ্রহাণুর সেই অংশগুলোর গতিবেগ তার নিজস্ব অভিকর্ষ বলকে ছাপিয়ে গেলে ভেঙে যাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায় বহুগুণ। গ্রহাণু গল্টের শরীর ভাঙতে থাকলেও এর পূর্ণ মৃত্যুর দৃশ্যের জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এই কিছুদিন অবশ্য মাত্র ১০ কোটি বছর!