গুজবে কেটে গেল দুই যুগ

445

কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষেই আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কর্ণফুলী আবাসিক নামের বৃহত্তম এই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৫১৭টি। দুই যুগ আগে প্লট বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনো কোনো স্থাপনা গড়ে উঠেনি প্রকল্প এলাকায়। এমনকি স্থাপনা নির্মাণের জন্য সিডিএ’র কাছে কোনো আবেদনও জমা পড়েনি। শুধু নিছক একটি গুজবেই পুরো দুই যুগ পার হয়েছে। এখনো সেই গুজবের মধ্যেই আটকে আছেন প্লট গ্রহিতারা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, কর্ণফুলী আবাসিকে ঘর করতে কোনো বাধা নেই। প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া আছে। কেউ যদি বিল্ডিং করতে না আসে তাহলে আমরা কি করবো? আমি প্লট মালিকদের সাথে বসেছিলাম। তাদের বলেছি, বিল্ডিং করতে কোনো আপত্তি নেই। এখন তারা কাজ শুরু করবে।
জানা যায়, নিছক একটি গুজবে স্থাপনা নির্মাণ করেননি ৫১৭ প্লট গ্রহিতা। আবাসিক এলাকাটিতে ‘দুই তলার বেশি বাড়ি করা যাবে না’ এমন গুজব উঠে। প্লট বরাদ্দের পর পরই ছড়িয়ে পড়ে এই গুজবটি। এতে প্লট গ্রহিতারা হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে সবাই ছুটেছেন এই গুজবের পেছনেই। প্লট গ্রহিতা থেকে শুরু করে সিডিএ গুজব থেকে রেহাই পায়নি কেউ। দুই যুগ পার হওয়ার পর বর্তমান সিডিএ চেয়ারম্যান জানান এটি একটি গুজব। পরিকল্পিতভাবেই কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। আর এখানে বহুতল ভবন করতে কোনো বাধা নেই। শুরু থেকে সবাই বিমান কর্তৃপক্ষের আপত্তির কথা বলে আসলেও সেটাকে এখন ভিত্তিহীন বলছে সিডিএ।
বিমান কর্তৃপক্ষের আপত্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ’র অথরাইজ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হাসান বলেন, এটি পুরোটাই একটি গুজব। বিমান কর্তৃপক্ষ তো আমাদের এ ধরনের কোনো চিঠি দেয়নি। কর্ণফুলী একটি পরিকল্পিত আবাসিক প্রকল্প। এখানে কোনোধরনের আপত্তি নেই। প্লট গ্রহিতারা নিয়ম অনুযায়ী বিল্ডিং করার অনুমতি পাবেন।
তিনি বলেন, বিমানের আপত্তি থাকলে আমাদের জানানোর কথা। তাছাড়া আমাদের আবাসিকের পাশেই তো পাঁচ-সাত তলা ভবন উঠেছে। স্থাপনা নির্মাণে এখানে কোনো বাধা নেই।
কর্ণফুলী আবাসিক এলাকার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা সিডিএ’র। আবাসিক এ প্রকল্পের নানা সুবিধার মধ্যে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগের সংকুলান প্রাথমিক অবস্থায় করতে পারেনি উন্নয়ন সংস্থা। দীর্ঘসময় পরে এসে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগের ব্যবস্থা করতে পারলেও সিডিএ পানির কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। যার কারণে প্লট গ্রহিতারাও ভবন করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এ অবস্থায় ২০০৬ সালে প্রকল্প এলাকায় একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সিডিএ দরপত্র আহবান করে। সুপেয় পানির জন্য একশ ফুট গভীর পর্যন্ত খননও করা হয়েছিল। কিন্তু পানিতে আয়রন ও লবণাক্ততা থাকায় সে উদ্যোগও ভেস্তে যায়। তবে চট্টগ্রাম ওয়াসা দক্ষিণ চট্টগ্রামে পানি সরবরাহের জন্য ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজে হাত দিয়েছে। এতে আশার আলো দেখছেন প্লট গ্রহিতারা।
কর্ণফুলী সিডিএ প্লট মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে একটি গুজব ছড়ানো হয়েছিল, দুই তলার বেশি ভবন সেখানে করা যাবে না। গুজবের কারণে কেউ ভবন করতে আগ্রহী হননি। তাছাড়া সবধরনের ইউটিলিটি সার্ভিস সিডিএ থেকে করার কথা। কিন্তু পানির ব্যবস্থা এখনো সিডিএ করতে পারেনি। এখন ওয়াসা ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পানি দিচ্ছে। এটি সুখবর। প্রকল্পটিতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষের বসবাস হবে। আবাসন সংকট অনেকাংশে নিরসন হবে। তবে কর্ণফুলী সেতুর টোল প্রকল্পের জন্য বড় বাধা হবে।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায়। তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর (শাহ আমানত সেতু) দক্ষিণ পারে প্রায় ৫০ একর জায়গায় এ প্রকল্প অবস্থিত। নগরের আবাসন-সংকট ও যানজট সমস্যা নিরসনে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে এ প্রকল্প হাতে নেয় সিডিএ। তখন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্প এলাকায় প্রথম প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৯৯৪ সালে। তিন ও চার কাঠা আয়তনের মোট ৫১৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রতি কাঠার দাম ছিল ৮০ হাজার টাকা। পরে কাঠাপ্রতি দাম ছিল দেড় লাখ টাকা।
সিডিএ’র অথরাইজড কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম বলেন, প্রকল্প এলাকায় পানি-সংযোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন ওয়াসা পানি দিচ্ছে। প্লট গ্রহিতারা প্ল্যান নিয়ে কাজ শুরু করতে পারবে। কোনোধরনের বাধা নেই।