গাম্বিয়ার করা মামলায় আইসিজে’র রায় আজ

56

মিয়ানমারের সরকারি তদন্ত কমিটি প্রমাণ না পেলেও রাখাইনে গণহত্যার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের কাছে এমন দাবি রোহিঙ্গা সংগঠনের নেতাদের। যা বিভিন্ন সময় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসসহ (আইসিজে) জাতিসংঘের একাধিক দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে।
রাখাইনে গণহত্যার বিচার চেয়ে গাম্বিয়ার করা মামলায় ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডের হেগে আইসিজে-এ শুনানি হয়েছে। আজ ২৩ জানুয়ারি মামলায় রায় ঘোষণা হওয়ার কথা। এ লক্ষ্যে রায় পক্ষে আসবে- এমন প্রত্যাশায় হেগের দিকে তাকিয়ে আছেন রোহিঙ্গারা।
ক্যাম্পভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন, আইসিজে’র রায়ে রোহিঙ্গাদের জয় আশা করছি আমরা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যার যথেষ্ট প্রমাণ আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারে আমাদের উপর গণহত্যা চালিয়ে আসছিল বর্মীসেনারা। যা ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টে বড় আকারে জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সৈয়দ উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারে গণহত্যার কোন প্রমাণ পায়নি বলে সেদেশে একটি তদন্ত প্যানেল রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা প্রকাশিত ১৪০ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্ট আমি পড়েছি। সেখানে তারা আমাদের মা-বোনদের উপর ধর্ষণ ঘটনার কোন চিত্র উল্লেখ নেই। এটি শুধু নামে স্বাধীন তদন্ত প্যানেল। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার সরকারের কথা মতে এই রির্পোট প্রকাশ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাস্টারপ্ল্যান করে মিয়ানমার থেকে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা ঘটনা অনেক আগে থেকে গণহত্যা ঘটিয়ে আসছিল। মিয়ানমার সরকার গণহত্যার ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করছে। যাতে করে সেনাবাহিনীকে রক্ষা করা যায়। এমনকি সরকার সেদেশে শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা আইন তৈরি করেছে। তাতে প্রমাণ হয় রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে সেদেশের সরকার আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল। তাছাড়া আইসিজে-এ গাম্বিয়ার করা মামলা এইটি প্রমাণ করে যে সেদেশে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, আইসিজে’র রায় ঘোষণা নিয়ে যাতে ক্যাম্পের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকে, সেদিকে সর্তক রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ চালায় মিয়ানমার। সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধদের দ্বারা হত্যা, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এই নৃশংসতাকে গণহত্য আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত যাতে আর না হয়- এজন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহŸান জানিয়েছে দেশটি। আদালতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করা দেশটির স্টেট কাউন্সিলর ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার দাবি, এ বিষয়ে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার জাতিসংঘের আদালতের নেই। তিনি গণহত্যার অভিযোগ খারিজের আহŸান জানান।