ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ মার্কিন সেনা নিহত

65

ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যস্থলগুলোতে ছোড়া ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৮০ ‘মার্কিন স সেনা’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইরান। নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটিকেও প্রতিহত করা হয়নি বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভশন গতকাল বুধবার জানিয়েছে।
দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডের এক ঊর্ধ্বতন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আরও বলেছে, যদি ওয়াশিংটন কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরও ১০০টি লক্ষ্যস্থল ইরানের নজরদারির মধ্যে আছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মার্কিন হেলিকপ্টার ও সামরিক সরঞ্জামের ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছে গণমাধ্যমটি। খবর বিডিনিউজের
বুধবার ভোররাতে ইরান ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলোর অবস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। বলা হচ্ছে, ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে যে সময় হত্যা করেছিল মার্কিন বাহিনী ঠিক ওই একই সময় ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ড বাহিনী।
এদিকে ইরাকে দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে কাসেম সোলেমানি হত্যার বদলায় আমেরিকার গালে চপেটাঘাত বলে অভিহিত করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলাহ আলি খামেনি।
গতকাল বুধবার এক টেলিভিশন ভাষণে এ মন্তব্য করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা যায়।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আগ্রাসন হটাতে তাদের স্থাপনায় এ ধরনের সামরিক হামলা যথেষ্ঠ নয় উল্লেখ করে খামেনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এ অঞ্চল থেকে মার্কিন সেনাদের অশ্লীল উপস্থিতির সমাপ্তি ঘটানো।
আমেরিকাকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহারের আহŸান জানান আয়াতুলাহ খামেনি। খামেনি আরও বলেন, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো ধরনের সুযোগ নেই।
গত মঙ্গলবার খামেনি আরও বলেন, কোনো মিত্র বা ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে নয় সরাসরি ইরানকেই সোলেমানি হত্যার বদলা নিতে হবে। তার পরপরই বুধবার স্থানীয় সময় সকালে ইরাকে মার্কিনিদের আরবিল ও আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার পাল্টা জবাব দিলে আরও কঠিন হামলার শিকার হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছে ইরান।
শুক্রবার ভোররাতে ইরাকে রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে সোলেমানিকে হত্যা করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে হামলাটি চালানো হয়। এ হত্যার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ব্যাপক একটি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইরাকে মার্কিন সেনাদের অবস্থানে ইরানের হামলার ঘণ্ট দুয়েক পর এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে ‘অল ইজ ওয়েল’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বলেছে, এই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হওয়া ক্ষয়ক্ষতি হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
বুধবার ইরাকের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় আনবার প্রদেশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সেনা ঘাঁটি আইন আল আসাদ ও ইরাকি কুর্দিদের রাজধানী ইরবিলের আরেকটি ঘাঁটিতে ইরান ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, তাতে ইরাকের সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্য হতাহত হয়নি।
এক বিবৃতিতে ইরাকি বাহিনী জানিয়েছে, আইন আল আসাদ লক্ষ্য করে ১৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে যার মধ্যে দুটি বিস্ফোরিত হয়নি। ইরবিল লক্ষ্য করে ছোড়া পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্রের সবগুলো জোট বাহিনীর সদরদপ্তরে গিয়ে আঘাত হেনেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণে ইরাকি বাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে তারা।
নরওয়ের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আইন আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে অবস্থানরত তাদের কোনো সৈন্য ইরাকি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহত হয়নি। এই ঘাঁটিতে নরওয়ের প্রায় ৭০ জন সৈন্য আছে বলে জানিয়েছে নরওয়ের সামরিক বাহিনী। আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদেরও কোনো সৈন্য হতাহত হয়নি বলে বুধবার এক টুইটে জানিয়েছে ডেনমার্কের সশস্ত্র বাহিনী।
ইরাক ও সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইরত জোট বাহিনীতে ডেনমার্কের প্রায় ১৩০ জন সৈন্য অংশ নিচ্ছে। ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলায় সেখানে অবস্থানরত তাদেরও কোনো সেনা হতাহত হয়নি বলে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।