ক্রেতা কম, দর্শনার্থী বেশি

143

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে নগরীর প্রতিটি পশুর হাটে বাড়ছে লোক সমাগম। বাজারে যত গরু, ছাগল উঠেছে তার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল নিতান্তই কম। তবে দর্শনার্থী ছিল অনেক বেশি। অনেকে শুধু বাজার এবং দাম যাচাই করার জন্য পশুর হাটে এসেছেন। তবে একদম বেচাকেনা হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে দাম নাগলেই রয়েছেন বলে মনে করছেন ক্রেতারা। গতকাল সোমবার নগরীর কয়েকটি পশুরহাট ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর নুর হাউজিং সোসাইটি মাঠ, মুরাদপুর বিবিরহাট বাজার, সাগরিকা গরু বাজার ও মইজ্জারটেক বাজারে ক্রেতাদের তুলনায় দর্শনার্থী ছিল তুলনামূলক বেশি। কেউ এসেছেন মূল্য যাচাই করতে, কেউ এসেছেন পরিবারের সাথে গরু দেখতে, আবার কেউ এসেছেন সেলফি তুলতে। তবে বাজারের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানতে কাউকে দেখা যায়নি। ঘেষাঘেষি করে বাজারের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
ক্রেতারা জানান, এখন গরু কিনে কি হবে? গরুটা কেনার পর সেটা রাখবো কোথায়, খাওয়াবো কি? আর ওটা দেখাশোনা করার জন্য একজন মানুষের প্রয়োজন আছে। তাই এখন দেখে যাচ্ছি, কোরবানির ঈদের আগের দিন কিনে সেটি কোরবানি দিয়ে দিবো।
সাগরিকা বাজারে আসা দর্শনার্থী মিজানুর রহমান বলেন, এখন গরু কিনবো না, কোরবানির একদিন আগে কিনবো। তবে বাজারে গরু-ছাগলের মূল্য কেমন, তা যাচাই করতে এসেছি।
জানা গেছে, সরকার অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে লকডাউন তুলে নিলেও চলাচলে রেখেছেন এখনও সীমাবদ্ধতা। কারণ, করোনার প্রভাব বিস্তার করছে এখনও। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে শুরু থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে জনসমাগম হয় এমন সব ধরনের আয়োজন।
গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ থাকাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বিয়ে, মেজবানসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। যার প্রভাব পড়েছে এবারের কোরবানির বাজারে। এসব অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিনিয়ত গরু ও ছাগলের প্রয়োজন হলেও গত ৪ মাসে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিক্রি হয়নি কোন পশু। যার কারণে খামারিদের গরু রয়ে গেছে। তাই বাজারে উঠেছে প্রচুর কোরবানির পশু। ব্যবসায়ীরা এবার গরু বিক্রিতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে গরুর দাম হাতের নাগালে বলে মন্তব্য করছেন ক্রেতারা।
আব্দুল আওয়াল নামে এক ব্যবসায়ী ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় একটি গরু ক্রয় করেন। তিনি বলেন, এবারে প্রচুর গরু হাটে উঠেছে। দামও হাতের নাগালে। যে গরুটি এবার আমি কিনলাম সেটাতে কম করে হলেও ১৭ মণ মাংস হবে। গতবার একই ওজনের গরু কিনেছি ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। বিয়ে, মেজবানসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাজারে প্রচুর গরু উঠেছে। আর খরচ পোষাতে না পেরে গরু বেপারীরা সামান্য কিছু লাভ করেই গরু ছেড়ে দিচ্ছেন।
মুরাদপুর বিবিরহাটের ক্রেতা হাজী শফি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারে গরুর দাম কম রয়েছে। যেমন- গত বছর যে গরুটি দুই লাখ টাকা দিয়ে নিয়েছিলাম, এ বছর সে গরুর দাম ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। তাই দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
সাগরিকা পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু এসেছে বাজারটিতে। এখনও ঢুকছে ট্রাকে ট্রাকে গরু। সব মিলিয়ে গতবারের তুলনায় অনেক বেশি গরু এসেছে এ হাটে। কিছু ক্রেতাকে গরু ক্রয় করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
হাট ইজারাদারদের পক্ষ থেকে জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল সোমবার ক্রেতা সমাগম কিছুটা বেড়েছে। যারা ক্রয় করেছেন তারা সকলেই বলেছেন এবারের বাজারে গরুর দাম হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
সাগরিকা পশু হাটের ইজারাদার পক্ষের পরিচালক মো. জামশেদ খান পূর্বদেশকে বলেন, গত চার মাসে একটি গরুও এ হাটে বিক্রি হয়নি। গরু ব্যবসায়ীরা অনেক ঝুঁকি ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন। এবারের কোরবানিই আমাদের আশা-প্রত্যাশা। আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে বাজার পরিচালনা করছি। সাগরিকা বাজারসহ আশপাশের সব মাঠ আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সরকারের পক্ষ থেকে পাচ্ছি। এছাড়া আমাদের ৩০০ এর মত ভোলান্টিয়ার ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।
মইজ্জারটেক পশুরহাটের ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার এখানে পশুর ধারণক্ষমতা প্রায় ২০ হাজার। এরইমধ্যে ৭ থেকে ৮ হাজার গরু এসেছে। তবে এবারে অন্যান্য বারের মত বেচাকেনা হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান। সরকার থেকে আমাদের ইজারা বাবদ হাসিল ৫% নিতে বলা হলেও আমরা ৪% এর বেশি নিচ্ছি না।