কোটি টাকার সম্পদের মালিক যাত্রী কল্যাণ সমিতির মোজাম্মেল!

80

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। দীর্ঘ একযুগ ধরে যাত্রী অধিকার ও পরিবহন খাতের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা নিয়ে সোচ্চার তিনি গণমাধ্যমে। এ কারণে যেমন তিনি আলোচনায় আছেন, তেমনই নানা মহলের সমালোচনাও আছে তাকে নিয়ে। এক পরিবহন শ্রমিকের মামলায় জেলও খেটেছেন তিনি।
তবে যাত্রী অধিকার নিয়ে ‘আন্দোলনকারী’ এই মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধেও আছে নিয়ম ভেঙে সুবিধা আদায়ের নানা অভিযোগ। নামসর্বস্ব পত্রিকায় সাংবাদিকতার নাম করে সরকারি বিজ্ঞাপন আদায়ের ব্যবসায় জড়ানো থেকে লাইসেন্সবিহীন সিএনজি অটোরিকশার ব্যবসা করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। কোনও স্বীকৃত আয়ের উৎস না থাকলেও ‘অজ্ঞাত উপায়ে’ কোটি টাকার ভূমির মালিক বনে গেছেন তিনি। একাধিক দলিলপত্রে সেসব তথ্য উঠে এসেছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রাম হলেও বর্তমানে তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ে ভাড়া বাড়িতে। বাসাভাড়া দেন ৬ হাজার টাকা। তিনি ও তার স্বজনদের দাবি, টাকার অভাবে মাঝে মধ্যেই বাসাভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খান। ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় মোজাম্মেল গ্রেপ্তার হলে ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার স্ত্রী রিজু আক্তার চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তার স্বামী একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে অল্প টাকা বেতনে কাজ করেন। সেই টাকা দিয়ে সংসার চালানো বেশ কষ্টকর।
দেড় কোটি টাকার জমি : অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চন্দনাইশে দেড় কোটি টাকায় ৩৪৫ শতক জমি কিনেছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এছাড়া তার রয়েছে পরিবহন ব্যবসা। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, টানাটানির সংসারে জমি কেনার জন্য এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন? এর জবাবে মোজাম্মেল দাবি করেছেন, তিনি সাংবাদিকতা করে যে অর্থ সঞ্চয় করেছেন, তা দিয়েই এই জমি কিনেছেন। জানা গেছে, মোজাম্মেলের অর্থ, সম্পদ ও ব্যবসার বিষয়ে এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে।
মোজাম্মেল হকের নামে রেজিস্ট্রি হওয়া জমির দলিলে দেখা গেছে, তিনি চার দফায় চারটি দলিলের মাধ্যমে চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর মৌজায় বিভিন্ন দাগে মোট ৩৪৫ শতক (সাড়ে ৮ কানির বেশি) জমি কিনেছেন। রেজিস্ট্রি দলিলে ওই জমির মোট মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে এক কোটি ৪৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। তবে স্থানীয়দের দাবি, মোজাম্মেলের কেনা জমির প্রকৃত বাজার দাম আরও বেশি হবে।
দেখা যাচ্ছে, গত ২৩ জুন চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মোজাম্মেলের নামে প্রথম দলিলটি রেজিস্ট্রেশন (নম্বর ১৬৬২) করা হয়। ওই দলিলে এক একর ৬০ শতাংশ (চার কানি) জমির দাম দেখানো হয়েছে এক কোটি ৯ লাখ টাকা।
এরপর গত বছরের ২৩ জুলাই ১৫ শতক জমির দ্বিতীয় দলিলটি রেজিস্ট্রি (দলিল নং ১৯০৮) করা হয়। দলিলে এই জমির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তৃতীয় দলিলটি রেজিস্ট্রেশন (নম্বর ২৪৪১) করা হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর। জমির পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৫০ শতক। দলিলে এই জমির দাম দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
চতুর্থ দফায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি জমি কিনেছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ওইদিন রেজিস্ট্রেশন (রেজি. নম্বর ২৫৩৮) হওয়া জমির পরিমাণ ১৩২ দশমিক ৫০ শতক। জমিটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
দেখা যাচ্ছে, চার দফায় চারটি দলিলে মোট ৩৪৫ শতক জমি কিনেছেন মোজাম্মেল হক এবং দলিলে এই জমির মোট মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে এক কোটি ৪৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এই চারটি দলিলের মধ্যে প্রথম দলিলে উল্লিখিত জমির প্রতি কানি এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করে কিনেছেন তিনি। চার কানি জমির দাম পড়েছে মাত্র ৬ লাখ টাকা।’ তার দাবি, ‘এই জমিটির রেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক প্রকাশিত মৌজা দর হচ্ছে এক কোটি ৯ লাখ টাকা। সে কারণে ওই মূল্যেই জমি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়েছে।’
মোজাম্মেল বলেন, ‘দ্বিতীয় দলিলে উল্লিখিত জমি কিনেছি দুই লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এই জমিরও মৌজাদর ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তাই রেজিস্ট্রেশনে ওই দামেই দলিল করতে হয়েছে। তৃতীয় দলিলে উল্লিখিত জমিটি কিনেছি ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকায়। ওই জমিটির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত কোনও মৌজা দর নেই। সে কারণে সেটি কেনা দামেই দলিল করতে পেরেছি। আর চতুর্থ দলিলে উল্লিখিত জমিটি কিনেছি এক লাখ ৮০ হাজার টাকায়। আর সেই জমিটির মৌজা দর হচ্ছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ কারণে জমিগুলোর দাম অনেক বেশি দেখাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সবক’টি জমি কিনেছি ১৫ লাখ ৭ হাজার টাকায়।’
চন্দনাইশের হাশিমপুরে জমির মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে হাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জায়গার অবস্থানভেদে মূল্য ভিন্ন হয়। রাস্তার পাশে জমি গন্ডা (২ শতক) ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়। আর বিলের জমি গন্ডা ৫০ থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়।’
এ বিষয়ে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সাবেক (বদলি হয়ে বর্তমানে অন্য উপজেলায়) সাব রেজিস্ট্রার সুমন ঘোষ বলেন, ‘মৌজা মূল্যের কম দামে কোনও জমি রেজিস্ট্রি হয় না।’ তিনি বলেন, ‘বাস্তবে বেশির ভাগ জায়গাই মৌজা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। কম হওয়ার কোনও কারণ নেই ‘
বহদ্দারহাটে অটোরিকশার শোরুম : এদিকে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় ফাতেমা মোটরস নামে সিএনজি অটোরিকশার একটি শোরুম খুলেছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এটি তার ছোট ভাই মনির চৌধুরী দেখাশোনা করেন। সেখানে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাম্মেল বলেন, ‘আমার সিএনজির একটি শোরুম রয়েছে এটা সত্য। সেখানে আমার ১০ লাখ টাকা চালান রয়েছে। আমার এক আত্মীয় চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ব্যবসা করেন। তার কাছ থেকে আমি সিএনজিগুলো কিনে সেখানে (শোরুম) সেল দিই। প্রতিমাসে ৪-৫টি সিএনজি সেল হয়। সেখান থেকে আমি কিছু আয় করি।’
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামে রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্লেট ছাড়া বেশকিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এগুলোর গায়ে লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন সাংবাদিক সমিতি’র নাম। ওই ব্যানারে ‘সাংবাদিক’ মোজাম্মেল হক চৌধুরীর নাম ও ফোন নম্বর দেওয়া আছে । তবে তিনি কোন পত্রিকার বা অনলাইনের সাংবাদিক সে পরিচয় এতে উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া বোয়ালখালী এলাকার স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, বোয়ালখালীর রাস্তায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব লেখা কয়েকটা সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এগুলোর মধ্যে মোজাম্মেল হকের নাম লেখা রয়েছে। কিন্তু এসব সিএনজির কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, যিনি পরিবহনের শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলে গণমাধ্যমের মধ্যমণি হয়েছেন, তিনি কীভাবে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া পরিবহন চালান?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাম্মেল বলেন, ‘ভাড়ায় চালিত আমার মাত্র একটি সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। আগে সেটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল না। আমার এই জমিজমা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা কথাবার্তা ওঠার পর আমি রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়েছি।’
সাংবাদিক না বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি : মোজাম্মেল দাবি করেন, তিনি শিক্ষাজীবন থেকেই চট্টগ্রাম ও বান্দরবান থেকে প্রকাশিত ডিএফপিভুক্ত ডেইলি লাইফ, দেশের কথা, দেশের বাণী ও নতুন বাংলাদেশ নামের পত্রিকাগুলোতে কাজ করেছেন। এগুলোতে প্রতিমাসে প্রায় তিন লাখ টাকার সরকারি ক্রোড়পত্র তিনি সংগ্রহ করে দেন। এ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন পান তিনি। ওই টাকা দিয়েই সংগঠন ও নিজের পরিবার চালান। আর যে টাকা সঞ্চয় করেছেন তা দিয়েই জমি কিনেছেন। জমি কেনার অর্থের সংস্থান সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আগে কম দামে নারায়ণগঞ্জে একটি জায়গা কিনেছি। সেটা বিক্রি করে ও পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়েই জমি কিনেছি।’
তবে মোজাম্মেল যেসব পত্রিকার নাম বলেছেন স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে সেসব পত্রিকার কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও এই পত্রিকাগুলোর সঙ্গে পরিচিত নন। পত্রিকার অফিসের ঠিকানাও জানাতে পারেননি মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তারপরও তিনি নিজের পরিচয় দেন ‘সাংবাদিক’ হিসেবে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমি শুধু ডেইলি লাইফের সঙ্গে কাজ করি। পত্রিকার সম্পাদক দেশের বাইরে। তার নম্বর আমার কাছে নেই।’ এই পত্রিকারও বিস্তারিত কোনও তথ্য তিনি হাজির করতে পারেননি।
২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তারের পর ১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান মোজাম্মেল হক। তবে ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কোনও প্রমাণ পায়নি পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে তার কারামুক্তি উপলক্ষে ওই দিনটিকে যাত্রী অধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয় তার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এজন্য নগরীজুড়ে তার গ্রেপ্তারের ছবিসহ পোস্টার লাগানো হয়।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই দাবিটি ছিল সাধারণ যাত্রীদের। কারণ, আমাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় সেটি ছিল সাজানো ও মিথ্যা মামলা। আমি যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করি বলে বিশিষ্ট নাগরিকরা ওই দিনটিকে যাত্রী অধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।’
মোজাম্মেলের এলাকার লোকজন যা বলেন : মোজাম্মেল হকের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের ইমামুল্লাহ চরের পূর্ব পাড়ায়। বাড়িতে দুটি ঘর আছে। এরমধ্যে বড় ঘরটির চারপাশে মাটির দেয়াল, ওপরে টিন। তার সামনে ছোট দুই কক্ষের একটি ঘর আছে। যেই ঘরের চারপাশে কাঠ দিয়ে ফিটিং করা টুলি বাঁশের বেড়া। ওপরে টিন।
স্থানীয় সারোয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, ‘আগে ওরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতো। মোজাম্মেল যখন এলাকায় ছিল, তখন তার কাছে অনেকে টাকা পেতেন।’ এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ঘরগুলো আমার বাবার তৈরি। অর্থের কারণে সেগুলো এখনও মেরামত করতে পারিনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সারোয়াতলীর এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের দিকে তৎকালীন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাকারিয়া পাওনা টাকা না দেওয়ায় মোজাম্মেলকে উপজেলায় আটকে রাখেন। পরে স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। এরপর থেকে মোজাম্মেল আর এলাকায় আসতেন না। বিষয়টি সম্পর্কে মোজাম্মেল বলেন, ‘জাকারিয়া নামের কারও সঙ্গে আমার কোনও লেনদেন নেই এবং এ নামে আমি কাউকে চিনিও না।’
স্থানীয় চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন আরও বলেন, ‘দেড় বছর আগে মোজাম্মেল বাড়িতে জিয়াফত দিয়েছেন। ওই জিয়াফতে ৮০০ থেকে এক হাজার জনকে আপ্যায়ন করা হয়। এখন প্রায় সময় প্রাইভেটকারে মোজাম্মেল বাড়িতে আসেন। শুনেছি ২৮ লাখ টাকা দামে ওই কারটি কিনেছেন।’ তবে মোজাম্মেল দাবি করেন তার কোনও ব্যক্তিগত গাড়ি নেই।
নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন মোজাম্মেল ও তার স্ত্রী : মোজাম্মেলের স্ত্রী গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বর পদে প্রার্থী হয়ে ৩০ ভোট পেয়েছিলেন। মোজাম্মেল নিজেও উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। খুব অল্প ভোট পেয়েছিলেন। তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, ‘এত টাকা কোথায় পাবে? তাদের পাঁচ ভাইয়ের কেউ খুব ভালো অবস্থায় নেই। তারা জমি কেনার মতো এত টাকা কোথায় পাবেন?’ এ বিষয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘আমি শখের কারণে নির্বাচন করেছি, এলাকায় যেন আমার একটা পরিচিতি থাকে। তবে এখন রাজনীতি করি না।’
চন্দনাইশ উপজেলায় কর্মরত এক সংবাদকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোজাম্মেল হক বিআরটিএ-তে দালালি করেন। টাকার বিনিময়ে তিনি মানুষকে সিএনজি অটোরিকশার নম্বর পাইয়ে দেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রভাব খাটিয়ে বিআরটিএ-তে দালালি করেই তিনি এত টাকার মালিক হয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে মোজাম্মেল বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা। আমি বিআরটিএ বা অন্য কোনও কিছুর দালালি করি না।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির ব্যয় কীভাবে নির্বাহ করা হয়, জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতির জন্য আমরা কোনও পৃষ্ঠপোষকতা পাই না। আমাদের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের চাঁদায় এই সংগঠন চলে। তবে আগে আমাদের আয়মূলক কর্মসূচি ছিল। এখন নেই। নিজের আয় থেকেই এই সংগঠনটি চালিয়ে নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যেহেতু একটি সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, সেহেতু সরকারের একটি অংশ আমার বিরুদ্ধে এসব নিয়ে অপপ্রচার করছে। আমি বিভিন্ন মহলের প্রতিহিংসার শিকার। আমার কিছু ত্রূটি বের করে প্রতিপক্ষের লোকজন আমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। আমি এক টাকাও অবৈধভাবে উপার্জন করিনি।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির কর্মকর্তাদের বক্তব্য : যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি খায়রুল আমিন বলেন, আমি সংগঠনের সহ-সভাপতি হলেও আমরা প্রকাশ্যে নেই। নিজেরা ব্যবসা বাণিজ্য করে চলি। সংগঠনের কাজ মহাসচিব মোজাম্মেল হক দেখেন। আমাদের সভাপতিও কোনও কাজে থাকেন না। মাঝে মধ্যে আমরা তাকে (মোজাম্মেল হক) টাকা পয়সা দিয়ে হেল্প করি।
মোজাম্মলের আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোজাম্মেল কিছু কাজের দালালি-টালালি করেন। সচিবালয়ে যান, সেখান থেকে কিছু আয় রোজগার হয়। সেই টাকা দিয়ে জমিজমা কিনতে পারেন। যেটুকু জানি এ দিয়ে তিনি চলেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সব কাজ তিনি নিজেই করেন। আমি এর বাইরে আর কিছু জানি না।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হলেন শরীফ রফিকুজ্জামান। একইসঙ্গে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক। তবে কখনও তাকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির কোনও অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। এই শরীফ রফিকুজ্জামান বর্তমানে ভারতে অবস্থান করায় মোজ্জাম্মেলের বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা রিসার্চ সেলের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন শামছুদ্দিন চৌধুরী। জানতে চাইলে শামছুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন যাত্রী কল্যাণে ছিলাম, তখন তার অবস্থা খুবই দুর্বল ছিল। সবকিছু তিনি একাই করতেন। কাউকে সমিতির পদে রাখার সুযোগ দিতেন না। তিনি কীভাবে জমির মালিক হলেন তা জানি না।’