কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন ট্রাম্প

49

কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যেই পাকিস্তান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেয় দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় দুনিয়ার ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মির উপত্যকা। ফোনে ট্রাম্পকে সামগ্রিক পরিস্থিতি জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-ও একই ইস্যুতে ট্রাম্পকে ফোন করে আধাঘণ্টা ধরে কথা বলেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপের পর সোমবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এতে কাশ্মিরের বর্তমান অবস্থাকে তিনি ‘একটি কঠিন পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। টুইটারে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, আমার দুই ভালো বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাণিজ্য ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কাশ্মিরে উত্তেজনা হ্রাসে কাজ করার বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে কথা হয়েছে। একটি কঠিন পরিস্থিতি, কিন্তু ভালো আলোচনা হয়েছে!’ ট্রাম্প-মোদি ফোনালাপের পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মিরে ভারতের সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন দুই নেতা। মোদি ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘এই অঞ্চলের কিছু নেতার কার্যকলাপ ও বক্তব্য ভারতবিরোধী। যা শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক নয়।’ নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সহিংসতা ও সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধে আপোষহীনতার কথা জানিয়েছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এর আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে ইমরান খানের বৈঠকের এক মাসের মাথায় গত শুক্রবার ফোনে কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন দুই নেতা।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হোগান গিডলে এক বিবৃতিতে জানান, দ্বিপাক্ষিক সংলাপের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা হ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ফোনালাপে দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক আরও বাড়িয়ে তোলার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কাশ্মির ইস্যু নিয়ে আলোচনার আগ মুহূর্তে ট্রাম্পের সঙ্গে ইমরান খানের এ ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি বলেন, কাশ্মির পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের অবস্থা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন ইমরান খান।

কাশ্মিরজুড়ে রাতভর অভিযান
ধরপাকড় অব্যাহত
ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে ফেলার পর থেকেই সেখানে চলছে ভারতীয় বাহিনীর নির্বিচার ধরপাকড়। এ পর্যন্ত ঠিক কত সংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কর্মকর্তারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের বরাত দিয়ে ১৮ আগস্ট এএফপি জানিয়েছে, আটকের সংখ্যা কোনও অবস্থাতেই চার হাজারের কম নয়। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, উপত্যকার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, সেখানকার কারাগারগুলোতে আর বন্দি ধারণের মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই। ফলে ভারতের অন্যান্য স্থানের কারাগারগুলোতে পাঠানো হচ্ছে ধরপাকড়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার রাতভর উপত্যকায় অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকেও এ অভিযানের কথা স্বীকার করা হয়েছে।সোমবার রাতের অভিযানে ৩০ জনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, গত কয়েক দিনে যেসব স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর নিক্ষেপের তীব্রতা বেড়েছে; সেসব স্থানেই অভিযান চালানো হয়েছে। ওই কর্মকর্তা অবশ্য নিজের নাম প্রকাশে রাজি হননি।
কাশ্মিরের রাজনীতিবিদ শেহলা রশিদ টুইট করে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা রাতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, ‘তারা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করছে, খাবার ফেলে দিচ্ছে বা চালের বস্তায় তেল ঢেলে দিচ্ছে এবং শেষে বাড়ির তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি লিখেছেন, সোপিয়ানের একটি আর্মি ক্যাম্পে চারজন তরুণকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেরা ও নির্যাতনের সময় তাদের সামনে মাইক্রোফোন ধরে রাখা হয়েছিল- যাতে তাদের চিৎকারের আওয়াজ শুনে গোটা এলাকা ভয় পায়।