কর প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন এনে অর্থবিল পাস

62

২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কর প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে সংসদে পাস হয়েছে অর্থবিল। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে বাজেট বক্তৃতা পড়ে দেওয়ার পর গতকাল শনিবার অর্থবিলও সংসদে উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১৩ জুন সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮.১ শতাংশের সমান। আজ সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে। তার আগের দিন বাজেটের রাজস্ব অংশের আলোচিত-সমালোচিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে পাস হয় অর্থ বিল। বিভিন্ন বিষয়ে করারোপের বিষয়গুলো অর্থবিলে থাকে।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল অধিবেশনে উপস্থিত থাকলেও তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করলে সংশোধিত প্রস্তাবসহ অর্থবিল কণ্ঠভোটে পাস হয়। তার আগে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের আনা কিছু সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। আবার গৃহীত হয় কিছু সংশোধনী প্রস্তাব। খবর বিডিনিউজের
যে সব পরিবর্তন এসেছে
স্টক লভ্যাংশের সমান নগদ লভ্যাংশ : প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিগুলোকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে উৎসাহিত করতে স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। অর্থবিলে সেই প্রস্তাব সংশোধন করে স্টক ডিভিডেন্ডের সঙ্গে সমান হারে নগদ লভ্যাংশও দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করবে, কমপক্ষে তার সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোম্পানির ঘোষিত স্টক লভ্যাংশের পরিমাণ নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে স্টক লভ্যাংশে উপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।
অবণ্টিত মুনাফায় কর ১০ শতাংশ : প্রস্তাবিত বাজেটে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস বা অবণ্টিত মুনাফার উপর কর আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, কোনো আয় বছরে কোনো কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস ও রিজার্ভের সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে বাড়তি অংশের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই প্রস্তাবের আংশিক সংশোধন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে কর পরবর্তী নিট লাভের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভে স্থানান্তর করতে পারবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি কোনো কোম্পানি এরূপ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে প্রতিবছরে রিটেইন আর্নিং, ফান্ড, রিজার্ভের মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে।
ভ্যাটের হারে পরিবর্তন : ভ্যাটের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ১৫ শতাংশের নিম্নহারের উপকরণ কর রেয়াত দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছিল। সে দাবির পরিপেক্ষিতে হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ কর দিয়ে রেয়াত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে, অর্থবিলে সেই বিধান আনা হয়েছে।
প্রতি কেজি সুতায় ৪ টাকা কর : বাজেট প্রস্তাবে তাঁত শিল্পে ব্যবহৃত সুতা শিল্পের উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে তাঁত শিল্পে ব্যবহৃত সুতা শিল্পের উপর ৫ শতাংশ ভাটের পরিবর্তে প্রতি কেজি সুতায় ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট কর ধার্য করা হয়েছে।
এছাড়া আমদানি পর্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে শুল্কহার পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
নিজের প্রণীত প্রথম জাতীয় বাজেটকে ২০৪১ সালের বাজেটের ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল; যে সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে আওয়ামী লীগ।
অসুস্থতা নিয়েই গতকাল শনিবার সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাজেটের উপর সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, এই বাজেট শুধু একটি বছরের জন্য নয়। এই বাজেটটির ফাউন্ডেশন এই বছর, কিন্তু বাজেটের সুফল ২০৪১ সাল পর্যন্ত অর্জন করতে পারব। সেইভাবে আমরা বাজেটটি প্রণয়ন করেছি।
মুস্তফা কামাল বলেন, মানুষের জীবনে যেমনি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি দেশের ক্ষেত্রেও সেটা সম্ভব হয়। দেশের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় বলেই আমরা আমাদের এই বাজেটের টাইটেল রেখেছি ‘সময় এবার আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের।’ এটা ইচ্ছাকৃতভাবে লেখা হয়েছে।
আমরা কী দেখতে পাই? আমরা যদি মালয়েশিয়ার দিকে তাকাই, ৩০ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়া চলে গেছে তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে, কাক্সিক্ষত জায়গায়। চায়নার অবস্থা কী ছিল? চায়না সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ছিল। চায়নায় কোনো খাবার ছিল না। চায়না আজকে পৃথিবীর এক নম্বর দেশ।
যদি চায়না পারে, মালয়েশিয়া পারে, সাউথ কোরিয়া পারে, তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই পারবে, বলেন মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, ঋণের পরিমাণ হিসেব করা হয় জিডিপি দিয়ে। আমাদের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৪ শতাংশ। মালয়েশিয়ার এর চেয়ে বেশি। চায়নার ঋণের পরিমাণ জিডিপির ২৮৪ শতাংশ।
২০৪১ সাল নাগাদ আমরা আর ঋণ নেব না। আমরা ঋণ দেব ইনশাল্লাহ। সারা বিশ্বের মানুষকে ঋণ দেব আমরা।