করোনা দুর্যোগে গতিহারা শিক্ষা সংসদ টেলিভিশন ছাড়াও আরো বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে

84

নোভেল কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও গতিহারা হয়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অধ্যয়ন তথা বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি। এ অবস্থার মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকদিন আগে ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্স-এ বক্তব্য রাখার সময় তিনি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে আরো দীর্ঘায়িত করার সরকারি সিদ্ধান্ত পুরোপুরি যৌক্তিক বলে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের ভাষায়, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অভিভাবকদের মনোযোগী হতে হবে। ঘরে বসে অভিভাকরা নিজেদের সন্তানকে লেখাপড়ার প্রতি যত্ন নিলে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তবে তারা দূরদর্শনে পাঠ দেয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তার কথাও বলছেন। এমতাবস্থায় নতুন করে ভাবতে হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে। ইতোমধ্যে সরকার পরিচালিত সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ নামে এ পাঠদান গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে দুই পর্বে ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণি এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক পাঠদান কর্মসূচি চালাচ্ছে। তবে সংসদ টেলিভিশন যেহেতু পুরোপুরি ডিসের ক্যাবল নির্ভর সেহেতু দেশের প্রান্তিক জনপদে যেখানে ডিসের লাইন নেই সেখানে এ সংসদ টেলিভিশন দেখা যাচ্ছে না, অপরদিকে সম্প্রতি বিদ্যুতের লোডসেডিংও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় শিক্ষা অধিদপ্তরের নেয়া এ উদ্যোগের সুফল দেশের সকল শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছছে কিনা তা নিয়ে সংময়ের যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা অনলাইন সাপোর্ট আরো কিভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে ভাবছেন বলে আমরা জানতে পারি। একই সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সিলেবাস কাটছাঁট করার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনাধীন বলে জানা গেছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরফলে এলোমেলো হয়ে পড়েছে দেশের ৫ কোটি শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন শিক্ষাসূচি। পিছিয়ে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা। রয়েছে সেশনজটের আশঙ্কা। করোনা ভাইরাস শিক্ষাকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তার মুখে! গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার ফলও প্রকাশ করা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেমিস্টার ফাইনাল আটকে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপাকে রয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। গত ১ এপ্রিল থেকে এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরে পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হলে, এর ১৫ দিন পর এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। এতে করে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা আশ্বস্ত হতে পারেন। বর্তমানে লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে নিয়মিত চলছে পাঠদান। বিষয়টি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন নয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠদান করে আসছে। এ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ টেলিভিশনেরও আছে। বিটিভিতে সেরা স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের পাঠদান সম্প্রচার শুরু করা হয়েছিল ২০১১ সালের ১৪ জুন থেকে। তবে সংসদ টেলিভিশনে বিকল্প পাঠদানের বিষয়টি এখন অনেকে জানেন না, বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদের শিক্ষার্থীরা। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভাবতে হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনেসহ বেসরকারি কয়েকটি টেলিভিশনকে পাঠদান কার্যক্রমের আওতায় আনা যায় কিনা। একইসাথে অনলাইন, টেলিভিশনের পাশাপাশি বেতারের এফএম ব্যান্ড ও কমিউনিটি রেডিওতে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। এ ছাড়া এ পাঠদানের বিষয়ে আরো বেশি করে প্রচারণা চালানোও প্রয়োজন। দেশের সব টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে এ কার্যক্রমটি সবাইকে জানাতে হবে। তবেই টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাস ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক সবার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে এবং এর সুফল পাবে সারাদেশের ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। আমরা মনে করি, শিক্ষার আগে জীবনের মূল্য বড়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি অধিক যত্ন ও ঘরে বসে লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের এগিয়ে আসা জরুরি।