করোনার ক্ষতি কাটিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে রেল

44

করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে লকডাউনের শুরুতেই রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এতে ধারাবাহিকতা থাকা রেলের আয় হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে। পণ্য ও পার্সেল ট্রেন কাটিয়ে লোকসান কমানোর কৌশল নিলেও তাতে খুব একটা সফলতা আসেনি। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে করোনা ভরা সময় পার করে। এ তিন মাসেই পূর্বাঞ্চল রেলে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে রেল যোগাযোগ পুরোপুরি চালু হওয়ায় আবারো আয় খাতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রেল।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বানিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) মো. নাজমুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আয় বাড়াতে আমরা পূর্বের মতো সকল সেক্টরে গুরুত্ব দিচ্ছি। পরিবহন খাতে আপাতত লক্ষ্য অর্জন আমাদের উদ্দেশ্য। আরো কয়েক মাস গেলেই আয় খাতে স্থিতিবস্থা ফিরবে বলে ধারণা করছি।’
জানা যায়, করোনার কারণে গত ২৪ মার্চ অফিস-আদালত বন্ধের ঘোষনা দিলে ২৬মার্চ থেকে রেল যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। করোনা সংক্রমণ রোধের অংশ হিসেবে প্রায় দুই মাস বন্ধ রাখার পরে গত ৩১মে আবারও সীমিত আকারে যাত্রী পরিবহন শুরু করে রেল। আগস্টের পর থেকে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তঃনগর, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছাড়ার সিদ্ধান্তের ঘোষনা দেয় মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, করোনাকালীন সময়ে পূর্বাঞ্চল রেলে এপ্রিল মাসে যাত্রী ও পার্সেল খাতে আয় ছিল শূন্য। অথচ ২০১৯ সালের এপ্রিলে যাত্রী খাতে রেলের আয় হয় ৫৩ কোটি টাকা। এসময় পণ্য পরিবহন করে রেলের আয় হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। মে মাসের শেষদিন ট্রেন সীমিত আকারে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। একদিনে রেলে যাত্রী পরিবহনে আয় হয় ৪৯ লক্ষ টাকা, পার্সেল খাতে ১১ লক্ষ পণ্য পরিবহনে আট কোটি ৬২ লক্ষ টাকা আয় হয়। অথচ গত বছর মে মাসে যাত্রী পরিবহনে ৫২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা পার্সেলে ১ কোটি ১০ লক্ষ ও পণ্য পরিবহনে ১২ কোটি টাকা আয় করে রেল। জুন মাসে ধীরে ধীরে রেলের আয় বাড়তে থাকে। গত জুন মাসে যাত্রী পরিবহনে রেলের আয় হয় ৫ কোটি ৮৯লক্ষ টাকা। একই মাসে পার্সেলে ৪৯ লক্ষ ও পরিবহনে আয় হয় ১৪ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। গত বছরের জুন মাসে যাত্রী পরিবহনে ৫২ কোটি ২২ লক্ষ টাকা, পার্সেলে ৮৩ লক্ষ টাকা ও পণ্য পরিবহনে ১১ কোটি ৩৫ কোটি টাকা আয় করে রেল।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রথম দুই মাসে মোটেও রেল চলাচল করেনি। জুন মাস থেকে সীমিত আকারে ট্রেন চালু হয়। এ সময়ে পরিবহন খাতে আয় কমে যায় রেলের। এই সময়টাতে পণ্য পরিবহন করেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়েছিল। এখন পুরোদমে সকল ধরনের ট্রেন চালু হওয়ায় রেলের আয় ধীরে ধীরে বাড়ছে। এতে লোকসানে ক্ষতির মুখে থাকা ট্রেন আবারো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনাকালীন সময়ে এপ্রিল, মে ও জুন মাসেই পূর্ব রেলের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আয় কমেছে। এগুলো রেলের লোকসান। জুন থেকে আয় বাড়ছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এই সময় পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনে আনুমানিক আয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অক্টোবর মাস থেকেই লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে যাত্রী পরিবহনে ৫০ কোটি টাকার উপরে আয় হবে। একইভাবে পার্সেল ও পরিবহন খাতেও আয় হবে আগের মতো।
রেলওয়ের বানিজ্যিক বিভাগ সূত্র জানায়, করোনার কারণে এতদিন রেলসেবা বন্ধ থাকায় রাজস্ব আদায় কমে যায় রেলে। যে কারণে পণ্য পরিবহন ও কনটেইনার পরিবহনেই জোর দেয়া হয়। লোকসান কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েই যাত্রী পরিবহন থেকে বিরত থাকে রেল কর্তৃপক্ষ। এবার পুরোদমে রেলের যাত্রী সেবা চালু হওয়ায় সিদ্ধান্তে আবারো রেলঅঙ্গনে চাঞ্চল্য ফিরেছে। বিশেষ করে রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ায় মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রী কম থাকলেও তা ধীরে ধীরে বাড়ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষে চলতি অর্থবছর আট কোটি যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা করেছিল রেলওয়ে। পাশপাশি মালামাল পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছিল ৩২ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যাত্রী, মালামালসহ রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ। যাত্রী পরিবহন বাবদ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪.৯ শতাংশ। একইভাবে মালামাল পরিবহনে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৬.৭৭ শতাংশ। অর্থবছরে নতুন ট্রেন চালু ও নতুন কোচ সংযোজনের কারণে রাজস্ব আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির আশা করেছিল রেল। কিন্তু করোনার কারণে সে আয় ও প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়েছে রেলের। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় আয় বাড়ানোর নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।