কঠোর প্রতিরোধ ও সতর্কতা জরুরি প্রতারক চক্রের জালে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ

44

প্রতারণা আর ঠকবাজি দুইটির খপ্পরে পড়ে দেশের অগণিত সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কোন কোন সময় জীবনঝুঁকিতেও পড়তে দেখা যায়। গণমাধ্যমে প্রতারকদের নানা কৌশল ও বৈচিত্র্যময় ফন্দির খবর শুনলে অবাক হতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা কে প্রতারক, আর কে প্রতারক নয়-প্রতারকের চালচলনে তা বুঝা দায়। বিশেষকরে, প্রতারক যখন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার আত্মীয় ও চাকুরীজীবীদের পরিচয় দিয়ে অর্থ আত্মসাতের ফিকিরে থাকে-তখন সাধারণ মানুষ একটু স্বচ্ছল হওয়ার স্বপ্নে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা এদের বিরুদ্ধে ব্যাপক তৎপরতা চালানোর পরও এদের লাগাম টেনে ধরা দুঃসহ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে, সচেতন হতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১১ মাসে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ৪ শতাধিক প্রতারক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, প্রতারকরা এতটাই সক্রিয় রয়েছে যে, অভিনব কৌশলে তাদের জাল বিস্তৃত হচ্ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। এতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেকেই। প্রতারকরা কৌশল পরিবর্তন করায় তাদের ধরতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। প্রতিবেদনটিতে সিআইডি ও সিপিসির সূত্রে উল্লেখ করা হয়, ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) প্রতিদিন গড়ে প্রতারণার ১ হাজার ২০০ অভিযোগ জমা হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান থেকে দেশব্যাপী প্রতারণার প্রকৃত চিত্র সম্যক অনুধাবন করা যাবে বটে, তবে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বাস্তবে ঘটনার আধিক্য আরো অনেক বেশি। প্রতিদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ-প্রতিবেদনগুলো থেকে তা স্পষ্ট হওয়া যায়। সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে দেশে আর্থিক প্রতারণা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম বা সেবায়ও প্রতারণার শেষ নেই। ভুয়া ফেসবুক আইডি তৈরি করে নানারকম হুমকি প্রদানসহ প্রতারণা করা হচ্ছে অহরহ। ই-মেইল হ্যাক করে বড়ধরনের সাইবার ক্রাইম সৃষ্টি করা হচ্ছে, মেইল ও ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য পাচার ও গায়েব করা হচ্ছে। এমনকি প্রতারকরা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বা তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে। আবার ব্যাংক লকার ও এটিএম বুথে প্রতারক চক্রের অভিনব কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন গ্রাহকরা। একশ্রেণির প্রতারক নিজেদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেয়। বিভিন্ন ভুয়া পদক-পুরস্কারও তারা প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সহায়তার নামে প্রতারণায় নেমেছে বেশ কয়েকটি চক্র। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা ব্যবহার করে প্রতারণায় নেমেছে বহু প্রতারক। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া মোহাম্মদ সাহেদ, আরিফ ও ডা. সাবিরনা প্রতারণার কথা সর্বজনবিদিত। রাজধানী ঢাকায় নবাব সলিমুল্লাহর বংশধর পরিচয়ে প্রতারণামূলক কর্মকাÐ চালাতে গিয়ে ধরা পড়েছে এক ভুয়া নবাব, যার প্রকৃত নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। এরকম অসংখ্য প্রতারক সারা দেশে তাদের জাল বিস্তার করছে। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে স¤প্রতি কয়েক দফায় বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিককেও গ্রেফতার করেছে সিআইডি। আশার কথা সম্প্রতি আইনশৃঙ্খরা বাহিনী আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে উল্টো জাল ফেলেছে। ভার্চুয়াল অপরাধের শিকার নারীদের সেবায় চালু করা হয়েছে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামক ফেসবুক পেজ। এর পাশাপাশি ই-মেইলসহ হটলাইন চালু করেছে পুলিশ সদর দফতর; যার মাধ্যমে সাইবার স্পেসে সংঘটিত নারীর প্রতি হয়রানির অভিযোগ গ্রহণের পাশাপাশি পরামর্শ ও আইনি সহায়তা দেয়া হবে। প্রতারকরা সারা দেশে এতটাই সক্রিয় রয়েছে যে, সাধারণ মানুষ সতর্ক না থাকলে তাদের প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা প্রতারণার শিকার হবেন, তাদের উচিত পরামর্শ ও সহায়তা নেয়ার ব্যাপারে তৎপর হওয়া। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রতারকদের দমনে আরও সক্রিয় হবে, এটাই প্রত্যাশিত।