কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সব স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর হোক

135

বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলীতে যে সমস্ত স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সমুদ্র তীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সরকারকে নীতিমালা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন করে কাউকে যাতে সমুদ্র তীরে লিজ না দেয়া হয়, সে বিষয়ে সরকারকে নজর রাখতে হবে। এই স্থাপনাগুলো ১৯৯৯ সালের পর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত লিজ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দেন।
সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায়টি গত সোমবার সুপ্রিমকোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। রায়ের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ রায় একটি মাইলফলক, অবশ্যই তা বাস্তবায়ন করা হবে। এ রায় মানা না হলে, সরকার আদালত অবমাননার মামলা করবে। সুপ্রিমকোর্টের এই রায়ের ফলে ঝিলংজা মৌজায় গড়ে ওঠা ২০টিরও বেশি থ্রি-স্টার ও ৫ স্টার মানের হোটেল এবং ছোট বড় অনেক মোটেল ভেঙে ফেলতে হবে। ১৯৯৯ সালে সৈকতের লাবণী থেকে কলাতলী পর্যন্ত এলাকা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। সেই গেজেট অমান্য করে লিজ দেয়ায় এই নিয়ে হাইকোর্টে করা পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানির পর হাইকোটের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ের রিভিউয়ে এই রায় দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালের পর নেয়া হোটেল সাইমন, সি গালসহ বড় বড় বেশ কিছু হোটেলের লিজ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কক্সবাজার ঝিলংজা মৌজার সমুদ্র সৈকতে লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত এলাকায় হোটেল মোটেলসহ অবৈধ সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে সহমত পোষণ করে আমরা এ রায়কে অবশ্যই মাইলফলক বলব। দেশের জন্য, দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন শিল্প রক্ষায় এ রায় অবশ্যই অবিলম্বে কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
আমরা জানি, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ সৈকতের সৌন্দর্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা ও পর্যটকবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই উদ্যোগ পুরোপুরি কার্যকর করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে শুধু সুগন্ধা ও লাবনী পয়েন্ট-এর অবৈধ স্থাপনা ও লিজ নিয়ে গড়ে তোলা বড় বড় স্থাপনাগুলোর জন্য। স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ চালালেও রাজনৈতিক প্রভাবপ্রতিপত্তির কারণে তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ফলে এ পর্যটন এলাকার কলাতলীর সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা-লাবনী পয়েন্টে চলছে হরদম দখলবাজি। সরকারি শত কোটি টাকার জমির ওপর প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠছে অবৈধ স্থাপনা। দিনে যেমন-তেমন গভীর রাতেও চলে দখলের মহোৎসব। প্রশাসন কোনো মতেই দমাতে পারছে না শক্তিশালী দখলবাজদের। সূত্রমতে, কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তার উত্তর পাশে রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে দখলবাজ সিন্ডিকেটের সারিবদ্ধ হরেক রকমের অবৈধ দোকান। যেখানে রয়েছে শুঁটকি, রেস্টুরেন্ট, ফিশ ফ্রাই, ওষুধের ফার্মেসি, ট্যুরিজম অফিসসহ নানা পেশার দোকান।
সূত্র জানায়, সরকারি মূল্যবান জমি দখলের জন্য প্রশাসন ম্যানেজ ও মামলা, হামলাসহ নানা কৌশল চালিয়ে বহাল তবিয়তে টিকে আছে অবৈধ দখলদাররা। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, সুগন্ধা পয়েন্টের এ অবৈধ স্থাপনার সিংহভাগ ৯ দফায় উচ্ছেদ করে উদ্ধার সরকারি জমিতে তারকাটা দেয়াসহ ৯০টি নারকেল গাছের চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিছু দিন যেতে না যেতেই তারকাঁটা, নারকেল গাছ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া সাইনবোর্ড তুলে নিয়ে যায় প্রভাবশালী দখলদার মহল।
কক্সবাজার স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের এ রায়, সরকারি জমি দখল করে অবৈধ দোকান নির্মাণকারী ও লিজ নিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করে যারা সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ ধ্বংস করে চলছে অচিরই তাদের উচ্ছেদ করা হবে। আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এ রায় কার্যকর করা হলে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহও বৃদ্ধি পাবে।