এরশাদের নেতৃত্বে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি

32

নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ না দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
নির্বাচনের আগে পরে নানা নাটকীয়তার মধ্যে গতকাল শুক্রবার জাতীয় পার্টির প্রেস উইং থেকে এরশাদের স্বাক্ষরে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পদাধিকার বলে’ তিনিই হবেন জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি দলের সভাপতি এবং প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা।
ছোট ভাই পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের উপ-নেতার দায়িত্ব দিয়েছেন এরশাদ। তবে এরশাদের স্ত্রী দশম সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের ভূমিকা এবার কি হবে- সে বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু জানানো হয়নি।
দশম সংসদে একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থেকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ আখ্যা পাওয়া জাতীয় পার্টির কোনো সংসদ সদস্য এবার মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন না বলে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এসেছে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। খবর বিডিনিউজের
বিএনপি ও শরিকরা দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ৩৪ টি আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় বসে। দলের কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হন বিরোধী দলীয় নেতা। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি থেকে একজনকে মন্ত্রী এবং দু’জনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে তিনি করে নেন নিজের ‘বিশেষ দূত’।
পরস্পরবিরোধী ওই অবস্থানের কারণে সংসদের মেয়াদের পুরোটা সময় সমালোচনায় বিদ্ধ হয় জাতীয় পার্টি। এরশাদের কথাতেও এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ পায় বিভিন্ন সময়ে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৯ টি আসন পায়। আর তাদের জোটসঙ্গীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২০ টি এবং শরিক অন্য দলগুলো আটটি আসন পায়। অন্যদিকে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে সাতটি আসন পাওয়ায় তাদের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায়।
গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ফলাফল আসার পর থেকেই নতুন বিরোধী দল নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতারা সিদ্ধান্ত জানানোর আগে জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলছিলেন। জাতীয় পার্টি এবারও সরকারের অংশীদার হবে কি না- সেই প্রশ্নে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের দু’দিন আগেও বলেছিলেন, ‘সম্ভাবনার কথা বলা যায় না। সব রকম সম্ভাবনাই আছে। জাতীয় পার্টি সংসদে যাওয়ার পর কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন, এ নিয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আমরা এটা নিয়ে পরে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করব’।
কথা ছিল, বুধবার একাদশ সংসদের এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল বৈঠক করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু দলের ২২ জন এমপির মধ্যে রওশন ও কাদেরসহ ২১ জন শপথ নিলেও এরশাদ সংসদ ভবনেই যাননি। সংসদীয় দলের নেতা কে হবেন সেই সিদ্ধান্তও নিতে পারেননি জাতীয় পার্টির নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা।
সংসদ ভবনে ওই বৈঠক শেষে জি এম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সামনে পার্টির একটি মিটিং আছে, সেখানে বসে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকার বা বিরোধী দল কোথাও থাকতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক ছাড়াই শুক্রবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন এরশাদ, যিনি ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের কারণে বহু আগেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ আখ্যা পেয়েছেন।