এবার লবণ নিয়ে

75

পেঁয়াজের পর চালের দাম বৃদ্ধির মধ্যে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার যে কথা ছড়িয়েছে, সে গুজবে কাউকে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার বলেছে, দেশের চাহিদার ছয় গুণ বেশি লবণ মজুদ আছে। লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে সোমবার সন্ধ্যার পর সিলেট, হবিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, নেত্রকোনা জেলায় গুজব ছড়ায় এবং তাতে লবণ কেনার হিড়িক শুরু হওয়ায় দাম যায় বেড়ে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গুজবে কান না দিতে দেশবাসীর প্রতি আহব্বান জানায়।
এতে বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সঙ্কট রয়েছে মর্মে গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। লবণের মজুদের কোনো সঙ্কট নেই জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা কম-বেশি ১ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকট হবার প্রশ্নই ওঠে না।
মজুদ লবণের মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন রয়েছে জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মওসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে, বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লবণ সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি ‘কন্ট্রোল রুম’ খুলেছে।
লবণ সংক্রান্ত বিষয়ে সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর- ০২-৯৫৭৩৫০৫ এবং ০১৭১৫-২২৩৯৪৯।
গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় নেত্রকোনায় তিন ব্যবসায়ীর অর্থদন্ড হয়েছে, হবিগঞ্জে সাজা দেওয়া হয়েছে চারজনকে। ঠাকুরগাঁও ও গোপারগঞ্জে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
এসব স্থানে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ ব্যাপক হারে লবণ কিনতে শুরু করলে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায় এবং এক পর্যায়ে অধিকাংশ দোকানে লবণ ফুরিয়ে যায়। খবর বিডিনিউজ-বাংলানিউজ ও বাংলা ট্রিবিউনের
নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, গুজব ছড়ানোর পর চরাঞ্চলের সহজ সরল মানুষ হুড়াহুড়ি করে লবণ কিনতে ভিড় জমায় বিভিন্ন দোকানে। কেউ কেউ ৫ কেজি, কেউ কেউ ২০ কেজি করে লবণ কিনছিলেন।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে লবণের কেজি ২০০ টাকা হয়ে যাবে। এতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ায় মঙ্গলবার দুপুরের আগে ডিলার ও অনেক পাইকারির ব্যবসায়ীর গুদাম শূন্য হয়ে যায়।
পাইকারি ব্যবসায়ী গনেশ সাহা বলেন, সকাল থেকেই আমাদের দোকানে লবণ কিনতে সাধারণ মানুষ ও খুচরা বিক্রেতারা ভিড় করে। দুপুর ১২টার মধ্যে আমাদের সমস্ত লবণ বিক্রি হয়ে যায়।।
কোটালীপাড়ায় লবণ কিনতে আসা এক ভ্যানচালক বলেন, গতকাল (সোমবার) রাতে ঢাকা থেকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে বলেছে, লবণের কেজি ২০০ টাকা হবে।
এই অবস্থায় খুচরা বিক্রেতাদের একজনের কাছে এক কেজি-২ কেজির বেশি লবণ বিক্রি করতে মানা করা হয়েছে বলে জানান কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহসিন উদ্দিন।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, কিছুদিন আগে একটি মহল সিন্ডিকেট তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছিল। এখন তারাই আবার লবণের দাম বৃদ্ধির জন্য গুজব ছড়াচ্ছে।
লবণ তদারকিতে কন্ট্রোল রুম :
দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুত আছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষিদের কাছে ৪ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মজুত রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার তথ্য অধিদফতর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, লবণ সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে ইতোমধ্যে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যার নং: ০২-৯৫৭৩৫০৫ ও ০১৭১৫২২৩৯৪৯।
লবণ বিষয়ে যেকোনও তথ্যের জন্য কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলোতে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তথ্য বিবরণীতে আরও বলা হয়, সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুত রয়েছে। পাশাপাশি এ মাস (নভেম্বর) থেকে লবণের উৎপাদন মওসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে। দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে লবণের মজুত আছে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের কোনও ঘাটতি হওয়ার কথা নেই।
তথ্য বিবরণীতে আরও বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
লবণ নিয়ে কারসাজিকারীদের জেল-জরিমানার নির্দেশ :
লবণের দাম বাড়ালে অসাধু ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা দিতে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। লবণের কোনো সংকট নেই। আমার নির্দেশ আপনারা বাজার মনিটর করেন। লবণ নিয়ে কারসাজি করলে জেল দেওয়ার প্রয়োজন হলে দেন, যাকে জরিমানা করার দরকার করেন। বাজারের দামটা ঠিক রাখেন।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেঁয়াজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লবণের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লবণের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা অবাস্তব সুযোগ নিচ্ছে, শুধু একটা গুজব ছড়িয়ে। এ বিষয়ে আমি খবর নিয়েছি। লবণ চাষিদের সুবিধার্থে সরকার আমদানি বন্ধ রেখেছে। তারপরেও লবণের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। প্রতি মাসে আমাদের ভোজ্য লবণের চাহিদা থাকে কম-বেশি এক লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের কোনো সংকট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে মর্মে গুজব রটনা করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
এছাড়া সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে।