উত্তর চট্টগ্রামের ৫, পার্বত্য ২৫ উপজেলায় ভোট আজ

78

উত্তর চট্টগ্রামের সাতটি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা হলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সকল পদের প্রার্থীরা জয়ী হওয়ায় রাউজান ও মিরসরাইয়ে ভোট হচ্ছে না। নির্বাচন হতে যাওয়া পাঁচ উপজেলার মধ্যে ফটিকছড়ি ছাড়া বাকিগুলোতে ভোটের উত্তাপ নেই। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে না। যে কারণে ভোটারদের আগ্রহে শুরু থেকেই ভাটা পড়ে। তবে উত্তাপ জিইয়ে রয়েছে ফটিকছড়িতে। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে বিদ্রোহী প্রার্থীর জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। নির্বাচনকে ঘিরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা থাকায় ফটিকছড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে নির্বাচন কমিশন।
উত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ২৫টি উপজেলায় আজ ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সকাল থেকেই নির্ধারিত সময়ে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ৪৯৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে প্রত্যেকটিতে আট থেকে দশজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। প্রতি তিন ইউনিয়নে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। এছাড়াও নির্বাচনে বিচারকার্য চালাতে জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন পাঁচজন। তবে ফটিকছড়িতে সকল পদে নির্বাচন হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি ফোর্স রাখা হয়েছে।’
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, স›দ্বীপ, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও সীতাকুন্ডের ৪৯৫টি কেন্দ্রের তিন হাজার ৪৪১টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব কেন্দ্রে সাত লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৫৬ পুরুষ ও ছয় লক্ষ ৯৫ হাজার ৬৬৬ নারী ভোটার মিলিয়ে মোট ১৪ লক্ষ ৩২ হাজার ১২২ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যারা : ফটিকছড়িতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরী (নৌকা), এসএম আবু তৈয়ব (আনারস) ও মো. আবছার উদ্দিন (লাঙ্গল) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইসমাঈল মজুমদার (উড়োজাহাজ), বিশ্বজিৎ রাহা (টিউবওয়েল), মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ চৌধুরী (বই), রতন কান্তি চৌধুরী (চশমা) ও সৈয়দ জাহেদ উল্লাহ কুরাইশী (তালা), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেবুন নাহার (প্রজাপতি), রাজিয়া মাসুদ (পদ্মফুল) ও শারমীন আকতার (কলস) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
রাঙ্গুনিয়ায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (তালা), মো. আকতার হোসেন (মোমবাতি), মো. ফয়জুল ইসলাম (উড়োজাহাজ), মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন তালুকদার (টিয়াপাখি), সন্দ্বীপে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেবুন নেছা (কলসি), মোছাম্মৎ ফরিদা বেগম (হাঁস), মোছাম্মৎ লুৎফুন্নাহার (ফুটবল), সীতাকুন্ডে ভাইস চেয়ারম্যান পদে গোলাম মহিউদ্দিন (উড়োজাহাজ), মো. ইউনুচ (মাইক), মো. মনিরুল ইসলাম (টিউবওয়েল), মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সাবেরী (তালা), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নাহার নীল (ফুটবল), জয়নাব বিবি (পদ্মফুল), রহিমা আক্তার ডলি (কলস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, হাটহাজারীতে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে উদয় কুমার সেন (তালা), এমএ খালেদ চৌধুরী (বাল্ব), এসএম জহির উদ্দিন চৌধুরী (চশমা), কাজী মো. আলা উদ্দিন (চেয়ার), মো. নুরুল আলম (মাইক), মোহাম্মদ কলিম (বই), মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন (উড়োজাহাজ), সৈয়দ মোস্তফা আলম (টিউবওয়েল), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোক্তার বেগম (কলসি) ও সাজেদা বেগম (হাঁস) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিনাভোটে জয়ী নয় প্রার্থী : সন্দ্বীপে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাস্টার শাহজাহান, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান মো. মাঈন উদ্দীন, মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মো. জসীম উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. আলাউদ্দিন ও ইসমত আরা, সীতাকুন্ডে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত এসএম আল মামুন, হাটহাজারীতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত এসএম রাশেদুল আলম, রাঙ্গুনিয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খলিলুর রহমান চৌধুরী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ারা বেগম বিনাভোটে নির্বাচিত হচ্ছেন।
ভোটকেন্দ্র ও ভোটার : সন্দ্বীপে ৭৯ ভোটকেন্দ্রের ৪১৩টি কক্ষে ভোট দিবেন দুই লক্ষ দুই হাজার ৬৯৫ ভোটার। এরমধ্যে এক লক্ষ ৫২৩ পুরুষ ও এক লক্ষ দুই হাজার ১৭২ জন নারী ভোটার। হাটহাজারীতে ১০৬টি ভোটকেন্দ্রের ৬৯৪টি কক্ষে ভোট দিবেন তিন লক্ষ আট হাজার ৪৭ জন ভোটার। এরমধ্যে এক লক্ষ ৫৮ হাজার ৫১৬ জন পুরুষ ও এক লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৩১ জন নারী ভোটার। রাঙ্গুনিয়ায় ৮৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫৯০টি কক্ষে ভোট দিবেন দুই লক্ষ ৫৩ হাজার ২৩৬ ভোটার। এরমধ্যে এক লক্ষ ৩১ হাজার ২৩৬ পুরুষ ও এক লক্ষ ২২ হাজার নারী ভোটার। ফটিকছড়িতে ১৩৬টি ভোটকেন্দ্রের এক হাজার ১৩টি কক্ষে ভোট দিবেন তিন লক্ষ ৭৬ হাজার ৫৮৬ ভোটার। এরমধ্যে এক লক্ষ ৯১ হাজার ৬৯৫ পুরুষ ও এক লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৯১ নারী ভোটার। সীতাকুন্ডের ৮৬টি ভোটকেন্দ্রের ৭৩১টি কক্ষে ভোট দিবেন দুই লক্ষ ৯১ হাজার ৫৫৮ ভোটার। এরমধ্যে এক লক্ষ ৫৪ হাজার ৪৮৬ পুরুষ ও এক লক্ষ ৩৭ হাজার ৭২জন নারী ভোটার।
আমাদের ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়িতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আনারস প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব। এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও দুই প্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. আবছার উদ্দিনও ভোটের মাঠে সরব আছেন। রাস্তাঘাট, অলিগলি প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদেও লড়ছেন পাঁচজন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দ্বিতীয় ধাপে তিন পদে নির্বাচন হতে যাওয়া একমাত্র উপজেলা ফটিকছড়ি।
পার্বত্য চট্টগ্রামেও ভোট : উত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা ছাড়াও পাবর্ত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের ২৫ উপজেলা ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় ভোটগ্রহণে সেনাবাহিনী থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসি। ইতিমধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।
রাঙামাটির ১০ উপজেলা :
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, নানান শঙ্কা আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই আজ (সোমবার) রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ১০ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। ২য় ধাপের এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাঙামাটির এই ১০ উপজেলার মোট ২০৮ কেন্দ্রে সকাল ৮ টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলবে টানা বিকাল ৪ টা পর্যন্ত। তবে ইতোমধ্যে কাপ্তাইয়ে মো. মফিজুল হক এবং লংগদুতে আবদুল বারেক সরকার বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় এই দু’টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ হবে না। রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম শফি কামাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে জেলার সবক’টি উপজেলায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১০ উপজেলায় দুইজন রিটার্নিং অফিসার দায়িত্বে রয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রেগুলোতে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। নির্বাচনে ১০ উপজেলায় ২০৮ কেন্দ্রের মধ্যে দূর্গম এলাকায় পড়া ২১ টি কেন্দ্রে ব্যালট, বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম ও জনবল আনা-নেয়া করা হচ্ছে হেলিকপ্টারযোগে। গতকাল রবিবার প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামসহ প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। ১০ উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ১৮ হাজার।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, জেলার সবক’টি উপজেলা পরিষদে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কেউ কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি বা কারচুপির আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে কোনো ছাড় নেই। প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সদরসহ জেলার বাকি ৮ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৯ প্রার্থী। ৩০ জন ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ), মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ২৬ জনও এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বান্দরবানের ৭ উপজেলা :
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে উপজেলা নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার সাতটি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার সকাল থেকে ৭টি উপজেলার ১৭৬টি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্স, সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত থেকে এসব সরঞ্জাম প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে হস্তান্তর করেন।
এদিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, উপজেলার নির্বাচনী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।সাতটি উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ১৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যন পদে ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি আরও জানান, সাতটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৬টি।