ঈদের আগেই দুর্ভোগের মুক্তি

90

এ সময়ে নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পোর্ট কানেক্টিং ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোড। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে জাইকার ১৫০ কোটি টাকা অর্থায়নে এ দুটি সড়কের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন নগরবাসীর চরম দুর্ভোগের কারণে সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ৩০ তারিখ। এ সময়ের মধ্যে সড়কের একপাশ চালু করে জনদুর্ভোগ লাঘব করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সিটি কর্পোরেশন। আসন্ন ঈদের আগেই সড়কের একপাশ কার্পেটিং শেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
আগামীকাল থেকে প্রথম লেয়ারের কার্পেটিং শুরু হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সড়ক দুটি চালু করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। শনিবার থেকে প্রথম ধাপের কার্পেটিং শুরু হবে। চলতি মাসের শেষে সড়কের এক পাশের কার্পেটিং শেষ হবে। তখন এ অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। অন্যপাশের কার্পেটিং শেষ করে দ্বিতীয় ধাপের কার্পেটিং করতে করতে হয়ত বর্ষা চলে আসবে। তবে প্রথম লেয়ারের কার্পেটিং শেষ হলে আগের রাতে বৃষ্টি হলেও কার্পেটিং করা যাবে। তাই চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রথম ধাপের কার্পেটিং শেষ করা। আশা করি আমরা সেটা জুনের আগেই শেষ করতে পারবো। সৌন্দর্যবর্ধনসহ পুরো কাজ শেষ করতে মেয়াদের চেয়ে অতিরিক্ত সময় লাগবে। তাছাড়া এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির চেয়ারম্যান। বন্দরে আমদানি-রপ্তানিকৃত মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য ট্রাক, কভার্ড ভ্যান, ট্রেইলার, লরিসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে পোর্ট কানেক্টিং রোড। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্দরমুখী এই সড়কটি ব্যবহার করে সারা দেশে জরুরি পণ্য সরবরাহের কাজ করা হয়। চট্টগ্রাম ইপিজেডে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিকের সিংহভাগই পোর্ট কানেক্টিং সড়ক ব্যবহার করেন। ফলে সড়কটি সবসময় ব্যস্ত থাকে। সড়কে বৃষ্টির সময় সৃষ্টি হয় খানাখন্দ, পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে সড়কটি থাকে ধূলিময়। এমন প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্যে নিয়মিত চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যানবাহনে পণ্য আনা- নেওয়ার কাজ চলে দুর্ভোগের মধ্যে।
গত বর্ষায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত অনেকবার সংস্কার করা হয়েছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সৃষ্ট এ জনদুর্ভোগ লাঘবে দেড় বছর আগে সড়ক দুইটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু কাজ চলাকালীন সময়ে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সিটি কর্পোরেশনকে। মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও প্রতীকী প্রতিবাদের মত সামাজিক আন্দোলনও হয়েছে। এমন দুরবস্থা থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সময় পেলেই ঝটিকা পরিদর্শনে যান সড়ক দুইটিতে। আবার মাসে অন্তত একবার হলেও ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সাথে বসছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে পূর্বদেশকে বলেছেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমরা চেষ্টা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে। কিন্তু পুরো প্রকল্পটি শেষ করতে হয়ত আরও মাস-দুয়েক সময় লাগবে। তবে ঈদের আগে সড়কের এক অংশে প্রথম ধাপের কার্পেটিং শেষ হবে। তখন যান চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করা হবে। আবার বাকি অংশে কার্পেটিং শেষ হলে অন্যপাশে দ্বিতীয় ধাপের কার্পেটিং চলবে। আশা করছি, আসন্ন ঈদের আগেই মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে জাইকা। আর প্রত্যক্ষভাবে মনিটরিংও করছে তারা। সুতারাং এখানে কাজের হেরফের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাজ চলাকালীন যাতায়াতে হয়ত নগরবাসীর কষ্ট হচ্ছে। তবে কাজ শেষ হলে সুফলটাও নগরবাসী ভোগ করবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে ২০ নভেম্বরে উদ্বোধন হয়েছে সড়ক দুটির উন্নয়ন ও সমপ্রসারণের জন্য গৃহীত এ প্রকল্পটির কাজ। প্রকল্পের আওতায় নিমতলা থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কটি সমপ্রসারণ ও উন্নয়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে সড়কটির প্রশস্ততা ১২০ ফুট হলেও কার্পেটিং আছে ৪৮ ফুটে। এখন পুরোটাই কার্পেটিং করা হবে। কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব বর্তমানের দুই ইঞ্চির স্থলে করা হবে ৯ ইঞ্চি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোড়ে ৬ ইঞ্চি। দুই পাশে তৈরি করা হবে আড়াই মিটার প্রশস্ত আরসিসি ড্রেন। পরে ৩ মিটার প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। এছাড়া এক্সেস রোডের দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার। এটির প্রস্থ ও কার্পেটিংও পোর্ট কানেক্টিং সড়কের মতো একই পরিমাপে করা হচ্ছে।