আ.লীগের নৌকা জুটছে কার ভাগ্যে?

136

সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি মাসেই এ আসনে উপ-নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের মনোনয়ন পেতে তৎপর কমপক্ষে নয়জন।এরমধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, প্রয়াত সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান এবং বিএনএফ সভাপতি ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ আছেন আলোচনায়।
ইসি সূত্র জানায়, চলতি মাসেই চট্টগ্রাম-৮ আসনের তফসিল ঘোষণা হবে। ইতোমধ্যে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এ আসনে নির্বাচন হবে। জানা যায়, মহানগরীর কয়েকটি ওয়ার্ড ও বোয়ালখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসন। এ আসনে মনোনয়ন নিয়ে প্রতিবারই নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার বাড়ি এ আসনের হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছে কম। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে জাসদ একাংশের সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৭ নভেম্বর বাদলের মৃত্যু হলে এ আসনে প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা।
এরমধ্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, সহ-সভাপতি এসএম আবুল কালাম, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম, নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, তাঁর ভাই নুরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুল হক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান। এছাড়া প্রয়াত সংসদ সদস্যের স্ত্রী সেলিনা খান ও ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বোয়ালখালী-চান্দগাঁও এলাকার ভোটাররা জানান, প্রয়াত সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের মধ্যে যে কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন।
জানা যায়, গত জাতীয় নির্বাচনেও এ আসন থেকে বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। বাদল শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় স্ত্রী সেলিনা খানও মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন। পরে স্বামী বাদলের মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন মঈন উদ্দিন খান বাদল। নির্বাচনের পরপরই কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু না হলে ডিসেম্বরে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন বাদল।
বাদলের অনুসারীরা জানান, ‘প্রয়াত সাংসদের স্ত্রী মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেই তার আত্মা শান্তি পাবে। একইসাথে কালুরঘাট সেতু নিয়ে প্রয়াত সাংসদের যে স্বপ্ন ছিল তাও বাস্তবায়িত হবে।’
প্রয়াত সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার স্বামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি প্রার্থী হতে চাই। যেদিন প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে এসেছেন সেদিন আমি কথা বলেছি। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। নেত্রী সত্যিকার যোগ্য মনে করলে আমাকেই মনোনয়ন দিবেন। আল্লাহ ও নেত্রী ছাড়া কারো সাথে মনোনয়ন নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি আওয়ামী লীগের ব্যানারেই নির্বাচন করতে চাই। জাসদ কিংবা কোন জোট থেকে নির্বাচন করতে চাই না।’
অন্যদিকে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখনো সংসদ সদস্য হতে পারেননি। গত নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। এবার উপ-নির্বাচনে এ আসনে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে চান তিনি। সেখানে তার অনুসারীরা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় এবার মনোনয়ন পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি তিনি। গত ১৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। এ সাক্ষাতের পর থেকে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা উৎফুল্ল। নেতাকর্মীরা জানান, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবার যদি মনোনয়ন না পান তাহলে প্রধানমন্ত্রী আরো বড় পুরস্কার দিবেন প্রবীণ এই নেতাকে।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মনোনয়ন বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রোগী দেখতে গেছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বোয়ালখালী-চান্দগাঁওয়ে মহাজোটের শরীক হিসেবেই বাদল ভাইকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। আমার দল বিএনএফও মহাজোটের শরীক দল। আমার বাড়িও বোয়ালখালী। সে হিসেবে শরীক দল হিসেবে আমিও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। সম্প্রতি মহাজোটের এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় মহাজোটের শীর্ষ নেতারা আসনটি মহাজোটের শরীক হিসেবে আমাকে দেয়ার কথা তুলেন। নেত্রীর কাছেও সে তথ্য গেছে। এখন নেত্রী যেভাবেই চাইবেন সেভাবেই হবে।’