আরও কয়েকটি শহরে কারফিউ সম্প্রসারণ

38

ইস্টার সানডে’তে বোমা হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের খোঁজে তল্লাশি অভিযানের মধ্যে শুক্রবার বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ স¤প্রসারণ করেছে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় শহর কালমুনাই, চাভালাকাদে এবং সামাণথুরাইতে প্রতিদিন রাত আটটা ৪৫ মিনিট থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত কারফিউ কার্যকর থাকবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব শহরে তল্লাশি অভিযানে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলির পর কারফিউ-এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ২১ এপ্রিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় ৩৫৯ জনের প্রাণহানির খবর বলে আসছিল শ্রীলঙ্কা। ২৫ এপ্রিল লঙ্কান সরকার দাবি করে গণনার ভুল ও নিহতের পরিচয় উদঘাটনের জটিলতায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। রবিবারের হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ২৫৩ জন বলে এদিন জানায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ভয়াবহ এই সিরিজ বোমা হামলার পর সন্দেহভাজনদের খোঁজে তল্লাশি জোরালো করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও হামলার।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সামানথুরাই শহরের একটি বাড়ি থেকে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের ইউনিফর্ম, ১৫০ স্টিক বিস্ফোরক জেল, এক লাখ বল বিয়ারিং এবং একটি ড্রোন ক্যামেরা উদ্ধার করেছে। কাছের শহর কালমুনাইতে তিনটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। শহরের সাইন্দা-মারুদু এলাকায় নিরাপত্তা অভিযানের সময় গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
রবিবারের হামলার জন্য স্থানীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে)-কে দায়ী করছে শ্রীলঙ্কা। তবে গোষ্ঠীটি হামলার দায় অস্বীকার করেছে। হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। তবে হামলাকারীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীটির সম্পৃক্ততার প্রমাণ নিশ্চিত হয়নি। আইএস সম্পৃক্ত একটি বার্তা সংস্থা হামলাকারীদের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে এসব হামলাকারীদের আইএসের কালোপতাকার সামনে দাঁড়ানো দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, আরও হামলা চালানোর মতো কোনও ‘স্লিপার সেল’ থেকে থাকলে তা নির্মূল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দেশজুড়ে বড় ধরণের তল্লাশি অভিযানের ঘোষণা দেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি করা হবে। প্রতিটি বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দাদের তালিকা নিশ্চিত করা হবে যাতে করে কোনও অপরিচিত ব্যক্তি কোথাও বসবাস করতে না পারে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টান ও মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু। উভয় স¤প্রদায়ের জনসংখ্যা দশ শতাংশেরও কম। গত রবিবারের হামলার পর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের রবিবারের সাপ্তাহিক প্রার্থনা বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। মুসলমানদের শুক্রবারের নামাজও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শুক্রবার দেশের কয়েকটি মসজিদে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।