আমরা কোনো দলের উপর নির্ভরশীল নই : অলি

39

আমাদের মুক্ত মঞ্চে কে আসলো, কে আসলোনা সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ আমরা কোনো দলের উপর নির্ভরশীল নই। গতকাল সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ একথা বলেন।
সদ্য আতœপ্রকাশ করা ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ সম্পর্কে তিনি বলেন, মুক্তি মঞ্চের কোনো নেতাকর্মী অরাজকতায় লিপ্ত হবে না। মারামারিতে লিপ্ত হবে না। তারা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে। আপনি আওয়ামী লীগ করতে পারেন, অন্য কোনো দল করতে পারেন কিন্তু চিন্তা করতে হবে দেশের অবস্থা কি? গণতন্ত্রপ্রেমী ও বাংলাদেশপ্রেমী সকল রাজনৈতিক দল, সকল নাগরিক, সামাজিক সংগঠন, সকল প্রবীণ ও তরুণদের প্রতি আমাদের আহবান, আপনারা আমাদের আন্দোলনে সামিল হোন।
কর্নেল অলি বলেন, জাতিকে মুক্ত করার জন্য নিজেদের সমর্পণ করতে চাই। আমরা যেদিন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, ওইদিন আপনাদের জন্য জীবন দিতে গিয়েছিলাম। গণতন্ত্র ও দেশের মানুষকে মুক্ত করতে দরকার হলে আবার জীবন দেব। আমরা বলছিনা, সরকারের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। অবশ্যই সরকারের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। তবে সেই দেশপ্রেম জনগণের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তারা ভুলের মধ্যে আছে। এ দেশপ্রেম যাতে জনগণের পক্ষে যায়, সেজন্য সরকারকে বোঝাতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক বড় ইস্যু থাকার পরেও সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি। কারণ অনেকে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং এসব সম্পদ রক্ষায় সরকারের হয়ে সুকৌশলে কাজ করেছেন। তারা মূলত সরকারের দালালি করছেন।
লিখিত বক্তব্যে অলি আহমদ বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। খালেদা জিয়া যদি কারাগার থেকে মুক্ত হন, একনায়কতন্ত্র থেকে যদি দেশ মুক্ত হয়, ‘দেন দ্য নেশন উইল বি ফ্রি’। বাংলাদেশপ্রেমী সকল রাজনৈতিক দল, সকল নাগরিকদের প্রতি আমার আহবান গণতন্ত্র মুক্তির জন্য আন্দোলনে সামিল হোন।
তিনি বলেন, বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিসর্জন দিব না। এবারের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, জনগণের অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য আন্দোলন হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সবাই দেশের দালাল হোন, কোনো ব্যক্তির দালালি করবেন না।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি চরম সংকটে। অবৈধ সংসদে উত্থাপিত বাজেট এর উদাহরণ। ভীতিকর সংকটময় এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ সরকারের দায়বদ্ধতা নেই। দেশে যত টাকা আছে তার ৪০ শতাংশ বাইরে চলে গেছে। এত বড় প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়ন করবে? এত ঋণ কিভাবে শোধ করবে?
গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’। ঐ দিনই জাতীয় মুক্তি মঞ্চ সরকারের কাছে ১৮টি দাবি তুলে ধরেন। আতœপ্রকাশের পর চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত সভায় পূর্বের ১৮টি দাবি আবার তুলে ধরা ধরেন অলি আহমদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শিমুলের পরিচালনায় সভায় বক্তব্যে রাখেন, জাগপা এর সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এড. সৈয়দ এহেসানুল হুদা, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এলডিপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল আলম তালুকদার, এলডিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক সাদাৎ হোসেন সেলিম, দক্ষিণ জেলা এলডিপি’র সভাপতি এড. কফিল উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক এমপি ইসমাইল হোসেন বেগল, মহনগর কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. ইলিয়াছ, দক্ষিণ জেলার কল্যাণ পার্টির সভাপতি এড. মোয়াজ্জেম হোসেন, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক এস. এম. নিজাম উদ্দিন হারুন, উত্তর জেলার সহ-সভাপতি ফজলুল কাদের, জাগপা মহানগরের সভাপতি আবু নাছের মো. আনাছ, রাঙামাটির এলচিনি এর সভাপতি দীপঙ্কর দেওয়ান, রাঙামাটির এলচিনি এর সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ দিদারুল আলম প্রমুখ।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা ২০ দলীয় জোটে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। ২০ দলীয় জোট আমাদের। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে আমাদের মতের পার্থক্য আছে। নির্বাচনের তিন মাস আগে থেকেই বিভেদ আছে। এলডিপি নয়টি আসন চেয়েছিল, পাননি। ৭ বছর বিএনপির সাথে ছিলাম। একটির বেশি আসন পাইনি। আইনের অপপ্রয়োগ ও ক‚টকৌশলের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া আজ জেলে। তখন আপনারা বলেছিলেন এটা আইনি সমস্যা। এখন বলছেন রাজনৈতিক। এটা দূরদর্শীতার অভাব। উনি আজ জেলে, আমরা যারা উনার রাজনৈতিক সহকর্মী তাদের কারণেই।