আবাহনীর দ্বিতীয় শিরোপা নাকি তেরেঙ্গানুর প্রথম?

15

স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী ও মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসির মধ্যকার রোমাঞ্চকর ফাইনাল দিয়ে আজ পর্দা নামছে সাড়াজাগানো শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরের। ফাইনালিস্ট দুই দলেরই একই মন্ত্র, আক্রমণে ধসিয়ে দাও প্রতিপক্ষের রক্ষণ। দুদলই খেলে নিজেদের মাঝমাঠ থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করে, উভয়ের শক্তিই দারুন গতিময় সব ফরোয়ার্ড। টুর্নামেন্টের সেই দুই সেরা দল এবার শিরোপায় হাত দিতে মহারণের অপেক্ষায়। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
নিজ নিজ গ্রুপ থেকে দুদলই সেমিফাইনালে উঠেছে সেরা হয়ে। নকআউটেও দুদলের খেলায় বয়েছে গোলবন্যা। প্রথম সেমিতে ভারতের ক্লাব শ্রী গোকুলম কেরালা এফসিকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে টুর্নামেন্টের স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। পরের সেমিতে ভারতেরই আরেক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহনবাগানকে দাঁড়াতেই দেয়নি তেরেঙ্গানু। ব্রিটিশ অধিনায়ক লি টাকের হ্যাটট্রিকে হারিয়েছে ৪-২ গোলে।দারুণ ফুটবল খেলে প্রত্যাশিতভাবেই ফাইনালে চট্টগ্রাম। স্বাগতিক দলের ফাইনাল দেখতে তাই টিকিটের জন্য হাহাকার। ৩০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামের প্রতি কোণা যে ভরপুর থাকবে বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্বাগতিক কোচ মারুফুল নিজেদের ‘ফেভারিট’ দাবি করে বললেন, নিজের কিংবা দলকে কোনো চাপে রাখতে চান না তিনি।
‘আমার দলটার প্রতি আমার অনেক আত্মবিশ্বাস। হয়তো একটা ম্যাচে আমরা সেভাবে ভালো খেলিনি। কিন্তু প্রতি ম্যাচেই দলটা ক্রমান্বয়ে উন্নতি করছে। ফাইনালেও করবে এবং আমার সেই আত্মবিশ্বাস আছে।’
একইভাবে কোনো চাপ না নিয়ে নিজের শিষ্যদের উপভোগ করার মন্ত্র দিচ্ছেন তেরেঙ্গানু কোচ নাফুজি বিন জেইন। নিজেদের ইতিহাসে প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের এককদম কাছে থাকা দলটির কোচ বললেন, ‘আমি চাই আমার খেলোয়াড়রা খেলাটাকে উপভোগ করুক। আমার দল এখনো টুর্নামেন্টের আন্ডারডগ। ওরা (চট্টগ্রাম আবাহনী) টুর্নামেন্টের স্বাগতিক, নিজেদের দর্শকদের সামনে খেলবে। তারাই ফেভারিট। আমি শুধু সামনেই তাকাতে চাই।’
আবাহনী-তেরেঙ্গানু, দুদলই খেলে আক্রমণাত্মক ফুটবল। মাঝমাঠ থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উঠে যায় আক্রমণে। একই ধরন হলেও ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে স্পট-কিক। বিশেষ করে এই জায়গায় বেশ এগিয়ে তেরেঙ্গানু। দলটির অধিনায়ক লি টাক আছেন দারুণ ফর্মে। জীবনে প্রথমবার টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন। দুই হ্যাটট্রিকের মধ্যে পাঁচটি গোল এসেছে স্পট-কিক থেকে। বাংলাদেশের ফুটবলে এক মৌসুম খেলে যাওয়া ব্রিটিশ লি টাকের দিকেই তাকিয়ে থাকবে তেরেঙ্গানু। দলটির আক্রমণ শাণিত হয় তাকে ঘিরেই।
লি টাককে ‘উঁচু’ মানের ফুটবলার আখ্যা দিয়ে তাকে আটকাতে বিশেষ কৌশলও সাজিয়ে রেখেছেন মারুফুল। সেক্ষেত্রে তার তুরুপের তাস হতে পারেন হোল্ডিং মিডফিল্ডার মানিক হোসেন মোল্লা।
মানিকের কাজ হবে উপরিভাগে বলের যোগান দেয়া। একইসঙ্গে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ছয় গোল করা লি টাককেও অকার্যকর করে রাখা। তা করতে পারলে আক্রমণে বল পাবেন না ব্রুনো সুজুকি-শফিক বিন ইসমাঈলের মতো গতিময় ফরোয়ার্ডরা।
তেরেঙ্গানুর মতো চট্টগ্রামও আক্রমণে যায় চার ফুটবলারের সমন্বয়ে। নীচ থেকে জামালের সঙ্গে আক্রমণে উঠে যান দিদিয়ের, নীচে খেলেন চিনেদু ম্যাথিউ। এই তিনের কল্যাণে বল পান মন্টেনেগ্রোর ফরোয়ার্ড রতকোভিচ লুকা। তেরেঙ্গানু কোচের নজর এই চারের দিকেই। তাই গতানুগতিক ফুটবল এড়িয়ে বৈচিত্র্যময় খেলার কথা জানালেন মারুফুল।
কৌশল যেমনই হোক দারুণ এক ফাইনাল যে হবে সেব্যাপারে নিশ্চিত দুদলের কোচই। একদিকে চট্টগ্রামের চাওয়া প্রথম মৌসুমের মতো শিরোপাটা নিজেদের ঘরে রেখে দেয়া। অন্যদিকে উপভোগের মন্ত্র বিলানো তেরেঙ্গানুর স্বপ্ন দেশের বাইরে নিজেদের প্রথম শিরোপা জয়।