অ আ ক খ’র গল্প

237

সার রাত ঘুম নেই দীপা, নীপার।
কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদ মিনার যাবে। অ আ ক খ ফেষ্টুনে লিখতে হবে। রঙ, তুলি ইশকুল থেকে ফেরার পথে এনেছে।
ভাত খাওয়ার পরে লিখতে শুরু করেছে। এখনও শেষ হয়নি।
দীপার হাতের লেখা সুন্দর নয়। নীপার সুন্দর। অনেক পোষ্টার নষ্ট করছে দীপা। নীপা রেগে বলে,
– দীপা তুই পারবি না। আমি লিখি।
দু’জনে পিঠাপিঠি। সবমসময় ঝগড়া হয়। এক সঙ্গে ইশকুলে যায়।
পাশাপাশি বসে পড়ে। তারপরেও রাগ,ঝগড়া। ওরা বোন হলেও বন্ধুর মতো।
আজ কোনও রাগ নেই। তবে ঐ পোষ্টারের লেখা অসুন্দরের জন্য রাগ।
দীপা না করে না। রঙতুলি নীপাকে দেয়।
নীপা লিখতে শুরু করে।
পাড়ার সবাই লেখার দায়িত্ব দিয়েছে ওদের। নীপা লেখার ফাঁকে ঘুমায়। ও একটু ঘুমপাগল। অ আ রঙ তুলিতে ভেসে যায়। তখনই দীপা রাগে। নীপাকে ডাকে না। ভোর হতে দেরী নেই। এখনও লেখার অনেক বাকী। আমার ভাষা তোমার ভাষা বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা। অ আ ক মায়ের ভাষা। আরো কত কি?
এবার দীপা লিখতে শুরু করে। লেখা সুন্দর হয়না। অক্ষরগুলো ভালো হয়না। কেমন খাপছাড়া! একটু পরে নীপার ঘুম ভাঙে। ঘুমচোখে বড়ো গলায় বলে,
– দীপা চল চল শহীদ মিনারে যাবো। অনেক দেরী হলো তাই না!
হঠাৎ দেখে দীপা পোষ্টারে লিখছে। মনে মনে বলে,ওমা সে কী! আমি পোষ্টারে লিখেছি, আবার দীপা লিখছে! ব্যাপার কি? দীপাকে বলে,
– কি লিখছিস? আমি লিখলাম না!
– তুইতো ঘুমাচ্ছিস। শেষ হয়নি লেখা। বাকীগুলো লিখছি। দীপা উত্তর দেয়।
– তোর হাতের লেখা সুন্দর নয়, বিচ্ছিরি। মানুষ হাসবে।
– হাসুক, পড়া গেলে হবে।
– কি যে বলিস দীপা! মা সবসময় বলে, যা করবি মনযোগী হয়ে করবি। যাতে সবাই প্রশংসা করে।
– ভোর হতে দেরী নেই, নীপা তুই কি বলছিস?
তখন মা আসে।
দু’জনকে জাগতে দেখে মা বলে, কি হলো এখনও পোষ্টার লেখা শেষ হয়নি? বন্ধুরা এসে পড়বে। দেখি কতটা বাকী। মা অবাক। এখনও অনেক বাকী। মা বলে, দে দে দীপা আমাকে দে।
মা একটুতেই সব পোষ্টার লেখে শেষ করে। মায়ের হাতের লেখা বইয়ের লেখার মত ঝকঝকে সুন্দর। দীপা,নীপা দু’জন ভীষণ খুশি। নীপা বলে, মা তোমার হাতের লেখা এতো সুন্দর!
দীপা বলে, মা সব পোষ্টার তুমি লিখলে খুব ভালো হতো। সবাই প্রশংসা করতো।
– নিজের কাজ নিজে করতে শিখ। স্বাবলম্বী হ‘। তাতে ভবিষ্যতে কোনও কাজে ঠেকবিনা। মা উত্তর দেয়।
দু’জনেই চুপ।
দীপা বলে, মা শহীদ মিনারের জন্য ফুলতো আনিনি। কখন নেবো।
– তোর বাবা এনেছে। সব ঠিক করে রেখেছি। ভাবতে হবেনা। তোরা এবার তৈরী হ’।
নীপা প্রশ্ন করে, মা পোষ্টারে অ আ ই উ লিখলে হয়না? ক খ লেখার কি প্রয়োজন?
– দেখ অ আ হচ্ছে বাংলা ভাষার প্রথম অক্ষর। স্বরবর্ণ হচ্ছে অ আ ই ঈ উ ও ঐ। ব্যঞ্জনবর্ণ ক খ গ ঘ। কথা বললে দু’টোর দরকার। একটা ছাড়া অন্যটা হয়না, তাই দু’টোই লিখতে হয়।
– ও তাই! নীপা বলে।
দূর থকে তখন ভেসে আসে আমার “ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি!”
গানের শব্দ শুনে নীপা আবারও প্রশ্ন, মা, আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি কেন বলে?
-বাংলা ভাষার জন্য জব্বার, রফিক, শফিক, সালাম, বরকত পশ্চিমাদের গুলিতে রক্ত দিয়েছিলো, তাই। সেইদিন থেকেই প্রতিবছর একুশে ফেব্রæয়ারি এলে সবাই শহীদ মিনারে যায়। ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। আরো একটি কথা মনে রাখবি,
অ আ ই ঈ ক খ গ ঘ দিয়ে একুশে ফেব্রæয়ারি গল্প।
পাশাপাশি বাসার লিজা, দীনা, শিখা,দেবী, চন্দনারা ছুটে আসে।
সবার একটি কথা দীপা, নীপা তাড়াতাড়ি চল। শহীদ মিনারে যাবো ফুল দিতে। দেরী হয়েছে অনেক।
দীপা বলে, তোরা একটি করে পোষ্টার নে। কেউ কেউ ফুল নে।
দীপাদের বাসা রাস্তার সাথে লাগানো।
প্রতিটি একুশে ফেব্রæয়ারি মিছিল বাসার সামনে দিয়ে যায়। সেই শহীদস্মৃতির অমর একুশে ফেব্রæয়ারি গান বেশী কানে বাজে।
দীপার মা এগিয়ে এসে বলে,আর দেরী নয়, সবাই বেরিয়ো পর।
একেক করে সারি বদ্ধে সবাই বেরিয়ে পড়ে।
সবার হাতে একুশে ফেব্রæয়ারির ফেষ্টুন, প্লেকার্ড,ফুল।
একুশে ফেব্রæয়ারির দীপাদের গাম্ভীর্যময় মিছিল দেখে দীপার মায়ের মুখে কি অমলিন হাসি!