অনুমোদনের দ্বারপ্রান্তে ‘বড়’ দুই প্রকল্প

128

দশদিন আগে প্রি একনেক সভায় অনুমোদিত হয় ২২৯ কোটি ব্যয়ে আইকনিক ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ‘নগর ভবন’ প্রকল্পের। এবার ২ হাজার ৫শ কোটি টাকার ‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়ক’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই প্রকল্প দুইটি চূড়ান্ত অনুমোদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে দলীয় মনোনয় না পেয়ে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়লেও নগরবাসীর জন্য এ দুইটি ‘বড় প্রকল্প’ অনুমোদন করিয়ে যেতে চান তিনি। পূর্বদেশের কাছে এমন মনোবাসনার কথা ব্যক্ত করেছেন মেয়র নাছির।
গতকাল বিকালে সাড়ে তিনটায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পর্যালোচনা সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। তবে প্রকল্পটি ৩ হাজার ১শ কোটি প্রস্তাব করা হলে, ৭টি প্রস্তাবিত কসাইখানা
বাদ দিয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প ব্যয় রাখার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। তাছাড়া মেয়রের অনুরোধে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান ‘বিশেষ ছাড়’ দেয়ায় শুধু ভূমি অধিগ্রহণ খাতেই সাশ্রয় হচ্ছে ১২শ কোটি টাকা। ২৫৮ গন্ডা ভূমি চসিককে দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দীন।
প্রকল্পটির প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত মোড়গুলো হয়ে উঠেছে মৃত্যুফাঁদ। বেপরোয়া যান চলাচল ও মানুষের অসচেতনায় ঘটছে নিয়মিত দুর্ঘটনা। ভোগান্তি ও দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে মোড়গুলোতে ওভারব্রিজ নির্মাণই সমাধান বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাই নগরীর ৩৮টি মোড়ে ওভারব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এছাড়াও ৬শ মিটার ওভারপাস রাস্তা করা হবে। নগরীর এয়ারপোর্ট রোড়কে ৪ লেনে উন্নীতকরণসহ অন্যান্য রোড় সম্প্রসারণে সম্প্রতি হাতে প্রায় ৩ হাজার দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্পে এসব অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় সীমা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা। প্রকল্পের অধীনে ৬৮৯ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রাস্তার সম্প্রসারণ করা হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৯৬ কোটি ৮৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। একই সাথে ৩৮টি ওভারব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রকল্পটির অধীনে আরও ১২টি ব্রিজ নির্মাণ, ২২টি কালভার্ট, ৬শ মিটার ওভার পাস, ৮টি রাউন্ড এবাউট, শেখ রাসেল পার্কের বিনোদন সুবিধাসহ উন্নয়ন করা হবে।
এদিকে প্রকল্পের স্ট্রাকচার বাবদ ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা, ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি ও প্রাইস কনটিনজেন্সি ধরা হয়েছে মোট প্রকল্পে ব্যয়ের ১ শতাংশ করে। অন্যদিকে প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। এদিকে ডিপিপিতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্ক বলা হয়েছে, এয়ারপোর্ট রোড সম্পসারণ ও বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন, নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা,স্লটার হাউজ নির্মাণের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়ন, পার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে শিশুবান্ধব পর্যটনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে পথচারী নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকরণ, নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ। প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পর এর রক্ষণাবেক্ষণে প্রথম বছরে ব্যয় হবে দুই কোটি টাকা, যা সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বাজেট থেকে নির্বাহ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, পরিকল্পিত নগরী গড়ার লক্ষ্যে এসব প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম। আর যে কদিন আছি, তারমধ্যে অন্তত নগর ভবন ও এ প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার আশা করছি। নগরবাসী জন্য এসবই হবে আমার রেখে যাওয়া স্মৃতি।
তিনি আরও বলেন, বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম গতিশীল করা এবং বিমানবন্দর ব্যবহারকারী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার যাত্রীসাধারণের জন্য এ সড়ক চার লেনে উন্নীত করা সময়ের দাবি ছিল। শাহ আমানত বিমানবন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার। বাইরে থেকে কেউ বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করার সময় একটি নেতিবাচক মাইন্ডসেট তৈরি হয়ে যায়। এ সড়ক দিয়ে দুটি গাড়ি পাস করতে পারে না। চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং আরও হবে। ফলে বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। সেই পরিকল্পনায় বিমানবন্দর সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন। তাই আমরা সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হতে নিয়েছে আরও আগে।
ওভারব্রিজের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে মানুষ ওভারব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহী ছিল না। তখন মানুষও কম ছিল, ওভারব্রিজের প্রয়োজনীয়তাও কম ছিল। এখন জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে ৩৮টি মোড় নির্মাণ করা হবে। তাও এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলে নগরজীবনে গতি আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন মেয়র।