অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে

30

বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি’টি কত যে সুদুরপ্রসারী ভুমিকা পালন করছে তা হয়ত করোনা ভাইরানের মত বৈশ্বিক মহামারী প্রাদুর্ভাব না হলে সহজে এর গুরুত্ব অনুভব করা যেতনা। দীর্ঘ ৬ মাস অতিক্রম হতে চলছে বাংলাদেশে এ মহামারীর তান্ডব। এরসাথে দেশেও শিক্ষা কার্যক্রমও থমকে গেছে বলা যায়। বাণিজ্যিক ও সরকারি অফিস আদালত ইতোমধে স্বাভাবিক হতে চললেও ভাইরাসটির সংক্রমণ এখনও াব্যাহত থাকায় সেই কখন নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে তাও বলা যাচ্ছে না। এরমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় টেলিভিশন ও বেতারে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। কিন্তু এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা কতটুকু অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। বিশেষকরে, এ সুযোগ গ্রহণের জন্য টেলিভিশন, স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধার প্রয়োজন, যা দেশের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থীর নেই বললেই চলে। ফলে সরকারের নেয়া এ পদক্ষেপ সুফল বয়ে আনবে কিনা-যথেষ্ট সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে উপরোক্ত বিষয়গুলো শিক্ষা উপকরণের অংশ হিসাবে বিবেচনা করে তৃণমুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেন এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে-সেই জন্য এসব উপকরণের সুলভ মুর‌্য নিদৃারণ করা জরুরি। আর ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ করা যায় কিনা বিবেচনা করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে জেনেছি, বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে ‘নামমাত্র’ মূল্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ প্রদানের সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এ পদক্ষেপ করোনা মহামারীর এই বিশেষ সময়ে উচ্চশিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করি। জানা গেছে, টেলিটক কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে ১০০ টাকা রিচার্জের বিনিময়ে এ সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে। এর ফলে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ লাখ শিক্ষার্থী নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের এ সুবিধা পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও থাকবেন এ সুবিধার আওতায়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা জুম অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এজন্য তাদের টেলিটকের নেটওয়ার্কের আওতায় থাকতে হবে।
বস্তুত অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বিকল্প পন্থা হিসেবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও। গত ২৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু বাজারদরে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কিনে ক্লাস করা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই সম্ভব নয়। বিষয়টি অনুধাবন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের চেষ্টা চালান। অবশেষে তার এ চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে; এজন্য তিনি ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তবে আমরা মনে করি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদেরও ক্রমান্বয়ে এ সুবিধার আওতায় আনা উচিত। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে তাদেরও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বস্তুত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সব স্তরের শিক্ষাই।
আরও একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা দরকার। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে সারা দেশে উন্নত ইন্টারনেট অবকাঠামো থাকা জরুরি। অথচ দেশের অনেক স্থানে ইন্টারনেটের গতি কম। কোনো কোনো স্থানে ইন্টারনেটের সংযোগ থাকে না। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করতে হলে এসব দুর্বলতা দ্রæত নিরসনের পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া অনেক শিক্ষক ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ নেই। ল্যাপটপের বিকল্প হিসেবে স্মার্টফোনে ক্লাস করা যেতে পারে; তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোনও নেই। সেক্ষেত্রে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষায় পিছিয়ে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আমরা চাই, ‘নামমাত্র’ মূল্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের সুবিধা সবাই পাক, কেউ যেন এ থেকে বঞ্চিত না হয়।