অনন্য দৃষ্টান্ত করোনাকালে স্বেচ্ছ্বাসেবী সংগঠনসমূহের মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাক

72

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব এবং সংক্রমণের ভয়াবহতা ও মৃত্যুর মিছিল সাধারণ মানুষের মননে ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে দেখা গেছে। উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ করা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করলে কোন কোন ক্ষেত্রে নিজের সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, পড়শী কেউ দাফন-কাফনের জন্য এগিয়ে আসছেনা। করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষ মা বা বাবাকে সন্তান,স্বামী বা স্ত্রী মিলে নির্জন জায়গায় ফেলে যাওয়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। আবার কেউ দাফন-কাফনের কাজ করলে তাকে সমাজে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গে নিয়ে চিকিৎসকদের দ্বারে দ্ধারে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা, শ্বাসকষ্টের রোগী যথাসময়ে অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যুরকূলে ঢলে পড়ার অহরহ ঘটনার খবর আমাদের নিদ্রাছুটি নিয়েছে বহুদিন গত হয়েছে হয়ত। চারদিকে অন্ধকার। আশার আলো কখন যে ফুটবে তাও হিসাবে মেলা ভার। এমন এক অমানবিক ও অন্ধকার সময়গুলোতে আলোর প্রদ্বীপ হাতে নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায় বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। তারা মানবতার ফেরীওয়ালা হয়ে নিজেদের জীবনবাজি রেখে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির লাশ যেইহোক ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে শেষ বিদায়ের সব আয়োজন সুসম্পন্ন করে চলছে। দৈনিব পূর্বদেশ তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আজকের এ প্রয়াস। সম্প্রতি দৈনিক পূর্বদেশসহ জাতীয় ও স্থানীয় সবকটি সহযোগী সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক সংস্থা আঞ্জুমান-এ রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নয়া ট্রাস্টের অঙ্গসংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ গত ১২ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৪০টিসহ দেশব্যাপী ১৮৩টি লাশ দাফন করেছে। সংগঠনটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সূত্রে জানা গেছে তারা গত ১৩ এপ্রিল পটিয়ার এক প্রতিবন্ধী শিশুর কাফন-দাফনের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের সুচনা করেন। এখন চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি লাশ দাফন করছেন। সেই হিসাব ধরলে এ কয়দিনে আরো শতাধিক লাশ তারা দাফন-কাফন করেছে। যা প্রশংসার দাবি রাখে। সবচেয়ে বড় প্রশংসনীয় উদ্যোগ হচ্ছে ধর্মীয় এ সংস্থাটির একটি চৌকস দল গত রবিবার রাঙ্গুনীয়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিকাশ বড়–য়ার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সুসন্ন করতে সহযোগিতা করা। সংস্থাটির সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পাঁচ শতাধিক প্রশিক্ষিত কর্মী দাফন-কাফনসহ করোনা রোগীদের সহযোগিতা দিচ্ছেন লাশ-দাফন-কাফন ও শেষ কৃত্যের পাশাপাশি তারা ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহসহ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, টেলিমেডিসিন সার্ভিস চালু করেছে। আমরা মনে করি সংস্থাটির কার্যক্রম যেহেতু সারা দেশে বিস্তৃত,তাই তাদের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা করা হলে এ কার্যক্রম আরো গতি পাবে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলমের ব্যক্তি উদ্যোগে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, আইসোলেসন সেন্টার ও অক্সিজেন সার্ভিসসহ অসহায় গরিব ও দুঃস্থদের পাশে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সারাদিন নগরসেবার কার্যক্রম শেষ করে গভীর রাতে বাড়ি ফিরে আবারও মোবাইল নিয়ে বসে পড়েন মেয়র। মোবাইলে ম্যাসেঞ্জার দেখে দেখে নগরবাসী যারা প্রকাশ্যে চাইতে পারেন না, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাঠিয়ে দেন। এরকম প্রায় ২৮ হাজার পরিবারকে তিনি এ যাবৎ সহযোগিতা করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। আমরা মেয়র মহোদয়ের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করি। আশাকরি, নগর পিতা হিসাবে তিনি প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে তাঁর এ প্রসারিত অনুদানের হাত অব্যাহত রাখবেন। নগরীর ১৩ তরুণের বড় আকারের আইসোলেসন সেন্টারের উদ্যোগ চট্টগ্রামবাসী হিসাবে আমরা গর্ববোধ করি। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ধনীরা কি করছেন তা বড় কথা নয়; ছোটরা যে আমাদের পথ দেখাতে সক্ষম এটিই আমাদের জন্য বড় অর্জন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জেনেছি, ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে ইকরামুল মুসলেমিন, অন্তিম যাত্রার সাথী, শেষ বিদায়, পাথওয়ে, নিষ্টা, মারকাজুল ইসলাম ও মানাহিল নামক বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন লাশ দাফন-কাফন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আমরা প্রত্যেকের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানায় এবং আশা করি করোনা ভাইরাসের সর্বশেস সময় পর্যন্ত সংস্থাগুলো তাদের কায়ক্রম অব্যাহত রাখবে।