অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার

68

রেবা বড়ুয়া

‘মেয়েরা যে এখনও পিছিয়ে আছে তার কারণ তাদের পেছনে রাখা হয়েছে। নারীরা এখন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে তারা আর পিছিয়ে থাকবে না এবং
সংগ্রাম যতই কঠিন ও বিপদসঙ্কুুল হোক না কেন,
ভাইদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তাঁরাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি আমার বোনেরা আর নিজেদের দুর্বল ভাববেন না।
এই আশা নিয়ে আমি আজ আত্মদানে অগ্রসর হলাম।’
— প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার
বাঙালির ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম জীবন আতœাহুতি দেওয়া নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার। আজ ‘২৪ সেপ্টেম্বর আঅœাহুতি দিবসে’ তাঁর প্রতি রইল অফুরাণ ভালোবাসা। তাঁর ছোট বেলার নাম ‘রাণী’। জন্ম: ৫ মে ১৯১১ সালে পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে। পিতা : জগবন্ধু ওয়াদ্দাদার, মাতা : প্রতিভা ওয়াদ্দাদার। শিক্ষা জীবন শুরু ১৯২৪ সালে চট্টগ্রাম শহরের ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে। যখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তখন থেকেই বিপ্লবী মন্ত্রণালাভ করতে থাকেন। উক্ত বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯২৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৯ সালে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে আই এ পাস করেন ও মেয়েদের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। এইচএসসি পাসের পর বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে ১৯২৯ সালে তিনি ভর্তি হলেন কলিকাতার বেতুন কলেজে। সেখানে ছাত্রী নিবাসে থাকাকালে কিছুদিনের মধ্যে যোগাযোগ হল বিপ্লবীদলের চট্টগ্রাম শাখার সদস্যদের সাথে। ওই বিপ্লবীদের মাধ্যমে মাস্টারদা নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন প্রীতিলতার কাছে। সেই নির্দেশ মতো কলকাতায় গড়ে তুললেন এক বিপ্লবীচক্র। অল্প সময়ের মধ্যেই এই বিপ্লবীচক্রে অনেক মেয়ে এসে যোগ দিলেন।
কলকাতার এক গোপন কারখানায় বিপ্লবীদের আয়োজনে বোমার খোল তৈরি হয়,চট্টগ্রাম থেকে নির্দেশ আসে সে বোমার খোল সরবরাহ করার। পূজার ছুটিতে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, সরোজিনী পাল, নলিনী পাল ও কুমুদিনী রক্ষিত অনেকগুলো বোমার খোল নিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছেন।বোমার খোলগুলো বিপ্লবীরা তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যান।এই সূত্রেই বিপ্লবী অন্বিকা চক্রবর্তী ও নির্মল সেনের সাথে তাঁদের পরিচয়। প্রীতিলতা চট্টগ্রাম থেকে পুনরায় চলে গেলেন কলকাতাস্থ বেতুন কলেজে। বিপ্লবীদলের সৈনিক রামকৃষ্ণ বিশ্বাস। তিনি ধরা পড়েন ব্রিটিশ সৈন্যের হাতে। তাঁকে আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছোট বোন পরিচয়ে প্রীতিলতা কারাগারে একে-একে চল্লিশবার দেখা করেছেন। ফলে তাঁর মধ্যে এক নতুন বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে। মৃত্যুপথযাত্রী এই দেশপ্রেমিকের সাহচর্য প্রীতির জীবনাদর্শকে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে দিয়েছে। তখন থেকে প্রীতিলতা মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হন। বিএ পরীক্ষা দেবে না-দেবে না ভেবেও পরীক্ষায় বসলেন তিনি। পরীক্ষা শেষও করলেন অবশেষে। ১৯৩১ সালে বি এ পাশও করলেন। তারপর চলে এলেন চট্টগ্রাম। তারপর বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র ধলঘাট গ্রামের গোপন ঘাঁটিতে সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথে প্রীতিলতার সাক্ষাত ঘটে ১৯৩২ সালের ১৩ জুন। সাথী হল ভোলা, আসল নাম অপূর্ব। সে মাস্টারদার একনিষ্ঠ ভক্ত ও সক্রিয় কর্মী। শহর থেকে অপূর্ব-এর সাথে ছুটে চলেছেন গন্তব্যের দিকে। তাঁদের গন্তব্যস্থল সাবিত্রী দেবীর বাড়ি। ঐ বাড়িতে মাস্টারদা আর নির্মলদা অপেক্ষা করবেন। সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় তাঁরা পৌঁছে গেলেন মাস্টারদার আস্থানায়। সাবিত্রী দেবীর দোতলা বাড়ি। মাটির দেয়াল। তাঁরা ভিতরে প্রবেশ করলে স্নেহলতা অভ্যর্থনা জানালো। মাস্টারদা ও নির্র্মলদা ছাদে আছেন। সাবিত্রী দেবী দরজার দিকে ফিরে বললেন, এসো। প্রীতিলতা চললেন তাঁর পিছনে। ছাদে যাওয়ার সিঁড়ির কাছে এসে বললেন, উপরে যাও। উপরে উঠতেই নেতাদ্বয় চোখ তুলে দেখলেন। প্রীতি প্রস্তরখোদিত মূর্তির মতো দন্ডায়মান। কথা বললেন মাস্টারদা, এসো। দু’জনই বসেছেন ভেতরে পাটিতে। মাস্টারদার পিঠ দেয়ালে হেলান দেয়া। মাস্টারদা সোজা হয়ে বসে হাঁটু ভাজ করলেন। নির্মলদা পাটির শূন্য কোণে ইঙ্গিত করে বললেন-বস।
প্রীতি ধীরে-ধীরে পাটিতে হাঁটু পেতে হাত বাড়ালেন মাস্টারদার পায়ের দিকে। মাস্টারদার প্রতিরোধ ভঙ্গির হাত এল প্রীতির হাতের সামনে। মাস্টারদার গম্ভীর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে যাদুময় শব্দ, প্রীতি এখন স্কুল-শিক্ষক নন, বিপ্লবী। বিপ্লবীদের প্রণাম করতেও নেই, নিতেও নেই, বিপ্লবীরা প্রণাম করে শুধু মা-মাটি ও মাতৃভূমিকে। তুমিও বিপ্লবী, তাই তুমিও এ নীতি মেনে চলবে। আমি যেমন এদেশের সন্তান তুমিও। তুমি-আমি, আমরা কেউ পৃথক নই,একটি মাত্র পরিচয় ‘বিপ্লবী’, দেশমাতৃকার সেবক।
এ সময় সিঁড়িতে দ্রুত পদচারণার শব্দ। তাঁদের দৃষ্টি লাফিয়ে পড়ে সিঁড়ির মুখে। অপূর্ব লাফিয়ে আসে উপরে। উচ্চারণ করে একটি মাত্র শব্দ ‘পুলিশ’। মুহূর্তে লাফিয়ে ওঠেন মাস্টারদা ও নির্মলদা। ভোজবাজীর ভেলকির মতোই রিভলবার এসে পড়ে ওদের হাতে। মাস্টারদা প্রীতির উদ্দেশ্যে নির্দেশ বাক্য ছোড়েন, নিচে চলে যাও, ওদের আত্মীয় পরিচয় দিও। যাও তাড়াতাড়ি।
প্রীতি থাকতে চাইলেন। ‘না’ বলে গর্জন করলেন মাস্টারদা। প্রীতি লাফ দিলেন সিঁড়ির দিকে। রিভলবার হাতে সিঁড়ির গোড়ায় চলে এল ক্যাপ্টেন ক্যামারণ। তার পিছনে পিছনে ঢুকল অনেক ব্রিটিশ সৈনিক। ক্যামরণ দ্রæত উঠছে সিঁড়ি বেয়ে। পৌঁছে গেছে মাঝামাঝি। নির্মলদা সিঁড়ির মাথায়। গুড়ুম …এক ঝলক আগুন বেরুল নির্মলদার রিভলবার থেকে। ক্যামারণ ও গুলি ছোড়ে। আবার উপরের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে অগ্নিবর্ষণ হয়, গুড়ুম-গুড়ুম প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে বাড়ি কাঁপতে থাকে। ক্যামারণ হঠাৎ ছিটকে পড়ে নিচে। একটু হাত পা নেড়ে স্তব্ধ হল ক্যাম্যারুনের দেহ। গোলাগুলির শব্দ থেমে গেল। মাঝ সিঁড়ি থেকে লাফিয়ে পড়লেন মাস্টারদা। অপূর্ব সেন তাঁর পাশে। রিভলবারের ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে প্রীতিকে নির্দেশ দেন, অপূর্বের সাথে যাও।
প্রীতি ছুটলেন অপূর্বের সাথে। মাস্টারদা লাফিয়ে চলে এলেন তাঁদের পাশে অন্ধকারে। হঠাৎ গুড়–ম শব্দে প্রীতির পাশ থেকে অপূর্বের দেহটা পড়ে গেল। মাস্টারদার হাতের টানে প্রীতি ছিটকে চলে গেলেন অনেক দূরে। মাস্টারদাও প্রীতির পাশে লাফিয়ে নেমেছেন। কিন্তু কোন শব্দ বা কথাবার্তা নেই। ধুপ-ধাপ পা ফেলে এগিয়ে আসছে পুলিশ। শ্বাস নেয়ার জন্য নাক উপরে রেখেছে শুধু। দু’মিনিট পর আগুনের আলোয়-আলোকিত হল চারিদিক। দাউ-দাউ করে জ্বলছে আগুন, জ্বলছে সাবিত্রী দেবীর বাড়িটি। ক্যামারুন হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে সশস্ত্র ব্রিটিশ বাহিনী। রূপকথার কল্প-কাহিনীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে ধলঘাট যুদ্ধের খবর। পত্র-পত্রিকাতেও ঘটনার বিবরণ এক নয়। ঘটনাস্থলে দু’জনের মৃতদেহ পড়ে আছে। একজনের দেহ শনাক্ত হয়েছে, নাম নির্মল সেন। দ্বিতীয় জনের দেহ শনাক্ত হয়নি। সাবিত্রী দেবী ও তাঁর ছেলে মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। পুলিশ ওই বাড়িতে চারজন সন্ত্রাসীর সন্ধান পেয়েছিল। চারজনের একজন মেয়ে। দু’জন সন্ত্রাসীকে পুলিশ গুলি করে মারতে বাধ্য হয়েছে। মেয়েটিকে সাথে নিয়ে এক সন্ত্রাসী পালিয়ে যায়। ও দু’জনকে ধরার জন্য পুলিশ তল্লাশী চালাচ্ছে ও দু’জনের সংবাদ দিতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে।
১৯৩২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কাট্টলীর ঘাঁটি থেকে মাস্টারদার আহবান এল প্রীতিলতার কাছে। তিনি ছুটে গেলেন ঘাঁটিতে। দাঁড়ালেন তাঁর মুখোমুখি। তিনি দৃপ্ত উচ্চারণে বললেনÑ বালেশ্বর থেকে জালালাবাদ আর কালারপুল, দেশপ্রেমিক তরুণ-প্রাণ দেশের জন্য আত্মবলিদান করেছে, তাদের রক্তে দেশের মাটিসিক্ত। আজ বাঙলার ঘরে ঘরে মায়েরা, বোনেরা, কন্যারাও মেতেছে স্বদেশপ্রেমের মহা-মরণ খেলায়। আমি চাই, ঝাঁসীর রাণী আর নাটোরের রাণীর মতোই ইতিহাস। শঠ, প্রবঞ্চক, নিপীড়ক ব্রিটিশ জানুক, জানুক বিশ্বজগত, আমার বাংলার মেয়েরা ও মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সৈনিক।
মাস্টারদার কণ্ঠ থামল একটুখানি। তিনি পায়চারি করলেন দু’সেকেন্ড। দাঁড়িয়ে চোখ তুললেন প্রীতির চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন-২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩২, পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে। তার নেত্তত্বে থাকবে তুমি, চট্টগ্রামের রাণী- অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার। এই অমোঘ নির্দেশ ঘোষণা করে মাস্টারদা স্থানান্তরে চলে গেলেন। প্রীতি পাষাণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন অনেকক্ষণ। প্রীতির সমগ্র সত্বায় প্রতিধ্বনি হচ্ছে একটি বাক্যের, চট্টলার রাণী অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার’। যাত্রার পূর্বে মাস্টারদা সাথীদের সঙ্গে প্রীতির পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রীতির পুরুষ-বেশ-পোশাক-পরিচ্ছদ নিরীক্ষণ করলেন। তিনি কঠিন চোখে প্রীতির সাথী বিপ্লবীদের পোশাকও দেখলেন। তারপর উচ্চারণ করলেন, শান্তি চক্রবতী, কালী দে, প্রফুল্ল দাস, সুশীল দে ও মহেন্দ্র চৌধুরী, এই পাঁচজন তোমার সহযোদ্ধা। প্রীতির প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, এ হচ্ছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার। আজকের যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। কারো মুখে কোন কথা নেই, নেই শ্বাস ফেলার মতও শব্দ। সবাই স্ট্যাচুর মতো দন্ডায়মান, মরণ যুদ্ধের সংকল্প দৃঢ় আবার ক্লাবের পশ্চিম দিকে-মাস্টারদার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও জোরালো কণ্ঠ ধ্বনিত হল । ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দশটা যখন হবে একটা টর্চের আলো পড়বে তোমাদের দিকে। সে আলোর সংকেত দেখাবে ক্লাবের বাবুর্চি মনসুরুল করিম। সেও মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক। আলোর সংকেত পেলেই তোমরা ছুটে যাবে। ছড়িয়ে পড়বে দিকে-দিকে, চারিদিক থেকে আক্রমণ চালাবে। তোমরা সফল হও। নির্দেশ দিয়ে মাস্টারদা সাগর তীরের অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন। প্রীতির নেতৃত্বে বিপ্লবীরা পায়ে হেঁটে পৌছলেন নির্দিষ্ট জায়গায়। অপেক্ষা করছেন ক্লাবের বাবুর্চি মনসুরের কাছ থেকে আলোর সংকেতের জন্য। আলোর সংকেত পাওয়া গেল। প্রীতিলতা ‘চার্জ’ নির্দেশ ঘোষণা করলেন। বিপ্লবীরা লাফ দিয়ে দিয়ে পৌঁছে গেলেন শত্রæর খুব কাছে। গুলিবর্ষণ, বোমা নিক্ষেপ দ্রুত চলছে। উন্মত্ত বল নাচ থমকে দিয়ে জেগে ওঠে মরণ চিৎকার। সে চিৎকারও স্তব্ধ করে দিলেন বোমা আর বুলেটের ঘা মেরে। সফল আক্রমণ শেষে প্রীতি হুইসেল বাজিয়ে সহযোদ্ধাদের প্রত্যাবর্তন নির্দেশ ঘোষণা করলেন। যুদ্ধ শেষ, বিপ্লব সফল। সাথীরা মার্চ করছে। প্রীতিলতা পেছনে। ঘাঁটিতে পৌঁছতে সময় খুব লাগবে না তাঁদের। জয়ের আনন্দ সবার মধ্যে। হঠাৎ পাশ থেকে একটা গুলি ছুটে এল, বিদ্ধ হল প্রীতির বুকের ডান দিকে। প্রীতিলতা বুকে হাত চেপে দৌঁড়াতে প্রাণপন চেষ্টা করেও পারলেন না,ধূলোয় লুটিয়ে পড়লেন। রক্তে-রঞ্জিত হলো চারপাশ। কিছুক্ষণ পর সংজ্ঞা ফিরে আসে প্রীতির। ফাঁসির দড়ি গলায় পরতে জন্ম নয় তাঁর। তিনি বিপ্লবী কন্যা-অগ্নিকন্যা ! ইংরেজের শক্তি নেই তাঁকে কারাগারে বন্দি করার। চিরমুক্তির পাথেয় প্রীতির কাছে গচ্ছিত পটাসিয়াম সায়েনাইট। হ্যাঁ, পকেটেই আছে। পুলিশ-মিলিটারী-গোয়েন্দা খুব সাবধানে এগিয়ে আসছে প্রীতির দিকে। তাদের হাতের রাইফেলের মুখে সুতীক্ষè বেয়নেট। একটি শক্তিশালী টর্চের আলোয়-আলোকিত প্রীতির চারিদিক। প্রীতির মুখে হাসির ঝলকানি। প্রীতি হাসতে-হাসতে উচ্চারণ করলেন জননী-জন্মভূমি! আমার বন্ধন-মুক্তির দিন এগিয়ে আসছে। তখন ঘড়ির কাঁটা ২৩ শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পেরিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২। পটাসিয়াম সায়েনাইট মুখে দিলেন অর্থাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। চিরতরে-চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন অগ্নিকন্যা-বীরকন্যা খ্যাত প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার।
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার সে অগ্নিযুগের ফল্গুধারার মত একটি নাম। যিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের আহবানে দেশমাতৃকার বুক থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করার লক্ষ্যে অমিত সাহসে গেরিলা সংগ্রামে অংশ নিয়ে নিজের জীবন আত্মাহুতি দিয়েছেন,তাঁর এ আত্মবলীদানের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ বেনিয়াদের হাত থেকে মুক্ত হলো ভারতবাসী। শৌর্যময়ী,মেধাবী,উন্নতশির বীরকন্যা প্রীতিলতাকে নিয়ে-তাঁর এ শ্রমনিষ্ঠ কাজটি স্বদেশপ্রেমী, ইতিহাসমনস্ক মানুষের কাছে সমাদৃত হয়ে থাকবে। মাতৃভ‚মির জন্য তাঁর এ আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম বাংলার স্বাধীনতাপ্রিয়, মুক্তিকামী মানুষেরা নতচিত্তে যুগ-যুগ ধরে স্মরণ করবে। আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার একটি অবিস্মরণীয় নাম। যে নাম বাঙালি জাতির ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার ট্রাস্টের ট্রাস্টি