পরিবর্তন আসছে শিক্ষা প্রশাসনে

36

শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। সার্বিক ব্যবস্থা গতিশীল ও কার্যকর করতে এই পরিবর্তন চান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, অধিদফতর, দফতরসহ ও বিভিন্ন উইং প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
বৈঠকে সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের ইঙ্গিত ছাড়াও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ ও ভর্তি ফিসহ অতিরিক্ত ফিস আদায় বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকের পর মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কারিকুলাম পরিবর্ধন, শিক্ষা প্রশাসন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার ইঙ্গিত দিয়েছেন দুই মন্ত্রী’।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে গুরুত্বের সঙ্গে। জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল বলেন, ‘গত ১০ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন শিক্ষায় হয়েছে। আজ আমরা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিন্যাস জানলাম। প্রশাসনিক বোঝাপড়া হয়েছে বৈঠকে। আমাদের ইমিডিয়েট ইস্যুগুলো নিয়েও আলোচনা করেছি’। শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন আনা হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবর্তন কেন? আমাদের যে সাফল্য রয়েছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই’।
প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে উপমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা খাতে সব সময় ঝুঁকি থাকবে, প্রতিদিন নতুন ঝুঁকি তৈরি হবে। স¤প্রতি ভারতেও প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস হয়ে গেছে। এটা (প্রশ্নফাঁস রোধ) অ্যাডহক বেসিসে করতে হবে। সুতরাং আমরা মনে করি আমাদের রেসপন্সিভ থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ, আর নিয়মিত মনিটরিং থাকতে হবে। পাবলিক পরীক্ষাসহ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকি রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিভাবে ওভারকাম করা যায়’।
কি কি ঝুঁকি রয়েছে তা জানতে চাইলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্ট নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হয়, এটা গণমাধ্যমে ডিসক্লোজ করা অফিসিয়াল সিক্রেসি অমান্য করা হবে। তাছাড়া আমরা ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করলাম, কিভাবে মোবাবিলা করবো তা গণমাধ্যমে জানিয়ে দিলে ঝুঁকি মোকাবিলা করা যাবে না, ঝুঁকি থেকেই যাবে’।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি ফি, এসএসসি ও এইচএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী। কোচিং বাণিজ্য হলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনকে। কিভাবে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা যায় সে ব্যাপারে পলিসি নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কোচিং বন্ধের বিষয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া যাবে, তা নয়। তবে কোচিং নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। সব শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক ক্যাপাসিটি এক থাকে না। কেউ এক্সট্রা সাপোর্ট চায়। কিন্তু যেটা দেওয়ার কথা সেটা না করে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেউ চালায়, তা হলে তা মেনে নেওয়া যায় না’।
বিগত সময়ে ভর্তি পরীক্ষা ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায় করার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত ফি নিলে আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। অতিরিক্ত ফি নিলে জনগণের জন্য বিব্রত পরিস্থিতি। এটা আমাদের আঘাত করে। আমাদের কেউ অসুবিধার মধ্যে ফেলে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো’। বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কি কি কাজ করি, কয়টি বিভাগ রয়েছে, বিভাগগুলো কি রোল প্লে করে, কোন উইংয়ের কি কাজ- এসব বিষয়ে মন্ত্রী, উপমন্ত্রীকে বিস্তারিত ওয়াকিবহাল করেছি’।
গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ১১ টায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অধিদফতর, পরিদফতর, বিভিন্ন উইংয়ের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন দুই মন্ত্রী। বৈঠক শেষ হয় বেলা পৌনে ২ টায়।