৫৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পের ৩৯ শতাংশ অগ্রগতি

36

তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫৬৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির প্রায় ৩৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ে নতুন করে বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে প্রায় ৩০ হাজারের অধিক গ্রাহক।
জানা গেছে, ১৩ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা প্রায় ১৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত। সদর উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সুবিধা থাকলেও প্রত্যন্ত এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত। ব্যয়বহুল সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে একটি অংশের মানুষ আলোকায়ন সুবিধা পেয়ে আসলেও এবার নতুন করে বিদ্যুৎ সুবিধা সৃষ্টিসহ পুরাতন সরবরাহ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এজন্য ‘তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটন ও শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। বর্তমানে পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রায় ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। তবে সরবরাহ লাইনের ধারণক্ষমতা প্রায় ৯৯ মেগাওয়াট। বাৎসরিক চাহিদা বৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে পার্বত্য জেলাগুলোতে প্রায় পৌনে দুই লাখ গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৭৯ মেগাওয়াট।
বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটিতে তিন পার্বত্য জেলায় ৩৩ কেভি সক্ষমতার ২৫২ কিলোমিটার, ১১ কেভি সক্ষমতার ৪৬৭ কিলোমিটার, ১১কেভি/৪৪০ ভোল্টের ২৩১ কিলোমিটার এবং ৪৪০ ভোল্টের ৩৬০ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া ৩৩ কেভি’র ৮২ কিলোমিটার, ১১ কেভি’র ৮৭ কিলোমিটার,১১কেভি/৪৪০ ভোল্টের ৮৬ কিলোমিটার এবং ৪৪০ ভোল্টের ৯১ কিলোমিটার পুরোনো লাইন নবায়ন (সংস্কার) করা হবে। এসব লাইনে ১৭৭টি থ্রি-ফেইজ ট্রান্সফরমার ও ১৪৭টি সিঙ্গেল-ফেইজ ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩৩/১১ কেভি’র ১২টি উপকেন্দ্র (সাব-স্টেশন) নির্মাণ করা হবে। ৩৩/১১ কেভি’র পুরোনো ৪টি উপকেন্দ্রের ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটির শুকরছড়ি ও খাগড়াছড়ির ঠাকুরছড়ায় গ্রিড উপকেন্দ্র সংলগ্ন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে চুক্তি সই হয়েছে। এসব উপকেন্দ্রের নকশা অনুমোদন পরবর্তী নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। ট্রান্সফরমার স্থাপন কাজের জরীপ সম্পন্ন হয়েছে। ৩৩ কেভি’র ২৫২ কিলোমিটার নতুন ও ৮২ কিলোমিটার পুনর্বাসন লাইন নির্মাণ কাজের নকশা অনুমোদন এবং ১১ কেভি ৬০ কিলোমিটার নতুন ও ৭০ কিলোমিটার পুনর্বাসন লাইন স্থাপন কাজের জরিপ শেষ হয়েছে।
পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন পূর্বদেশকে জানান, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, উৎপাদিত বিদ্যুৎ সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নতুন নতুন প্রকল্পও বাস্তবায়ন হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেরও উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষদের বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলের যেসব এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ যায়নি, সেসব এলাকায় এখন বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হবে। এতে ওইসব এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠবে। এজন্য তিন পার্বত্য জেলায় ৫৬৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পটির প্রায় ৩৯ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আশা করছি, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলেও আরো ৩০ হাজার নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসবে।’