৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ

13

ঢাকা প্রতিনিধি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়কার সীমানাই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। নতুন প্রশাসনিক এলাকা (উপজেলা, ওয়ার্ড) সৃষ্টি হওয়ায় শুধু ছয়টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এসেছে। তবে তাতে কোনো আসনের বর্তমান সীমানার পরিবর্তন হয়নি। শুধু নতুন প্রশাসনিক এলাকার নাম যুক্ত হয়েছে।
গতকাল রোববার প্রকাশিত এ খসড়া নিয়ে ১৯ মার্চ পযন্ত দাবি ও আপত্তি জমা দেওয়ার সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
খসড়ায় যে ছয়টি আসনে সামান্য পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হলো ময়মনসিংহ-৪, মাদারীপুর-৩, সুনামগঞ্জ-১, সিলেট-১,সিলেট-৩ এবং কক্সবাজার-৩। ইসি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এই খসড়া নিয়ে কোনো দাবি-আপত্তি থাকলে তা আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। শুনানির মাধ্যমে এসব দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে।
ইসি বলছে, সর্বশেষ জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেতে আরও বছরখানেক অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তার আগে করতে হবে আগামী সংসদ নির্বাচন। এ কারণে প্রশাসনিক সুবিধা ও ভৌগোলিক অখন্ডতাকে গুরুত্ব দিয়ে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন অন্তত ৬০টি আসনে জনসংখ্যার ভারসাম্য (জনসংখ্যার তারতম্য ২৫ শতাংশের চেয়ে বেশি বা কম) ছিল না। জনশুমারির খসড়া অনুযায়ী এবার ৭০টির বেশি আসনে এই ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ইসির ওপর একধরনের রাজনৈতিক চাপ থাকে। সেটি এবং সীমানা নিয়ে বিতর্ক এড়াতেই কমিশন মূলত আগের সীমানা বহাল রেখেই খসড়া প্রকাশ করেছে।
ইসি আলমগীর বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। কালকের (আগামীকাল) মধ্যে গেজেট হয়ে যাবে। এখানে নতুন কিছুই নেই। ২০১৮ সালে যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেটাই অক্ষুণœ আছে। শুধু প্রশাসনিক কারণে নামের পরিবর্তন হয়েছে অথবা প্রশাসনিক বিভক্তি যেগুলো হয়েছে, সেগুলো পুরনো নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম দিয়ে করা হয়েছে। কোনো পরিবর্তন নেই। সম্ভবত ছয়টা এ ধরনের হতে পারে। কমিশন অনুমোদন করেছে। এখন এটি গেজেট করবেন সচিব।
তিনি বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে আরও বছরখানেক সময় লাগবে। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তাই আমরা অপেক্ষা করতে পারছি না। তারা খসড়া যেটা দিয়েছে সেটা আমলে নিয়েছি। তবে প্রশাসনিক অখÐতা এবং ভৌগলিক বিষয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।
ময়মনসিংহ-৩ আসনটি এখন ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নিয়ে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা এবং সদর উপজেলা নিয়ে এই আসন গঠিত হবে। মূলত, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নতুন সৃজিত হওয়ায় এই পরিবর্তন। তবে তাতে বর্তমান সীমানার কোনো পরিবর্তন হবে না।
কালকিনি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নিয়ে ডাসার উপজেলা গঠিত হওয়ায় মাদারীপুর-৩ আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন এই আসনটি কালকিনি উপজেলা এবং মাদারীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে। সীমানা একই থাকলেও খসড়া অনুযায়ী আসনটি হবে কালকিনি উপজেলা, ডাসার উপজেলা ও সদরের পাঁচটি ইউপি নিয়ে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট-১ ও সিলেট-৩ আসনে পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তাতে সীমানার পরিবর্তন হবে না। আগে যে এলাকা উপজেলার অধীন ছিল, এখন সেটি সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর কক্সবাজার-৩ আসনে কক্সবাজার সদর উপজেলা ভেঙে নতুন ঈদগাঁও উপজেলা করায় এই আসনে সদর ও রামুর সঙ্গে ঈদগাঁও উপজেলা নামটি যুক্ত হবে। তবে সীমানার কোনো পরিবর্তন হবে না।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনটি এখন জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে শান্তিগঞ্জ। এটি খসড়ায় যুক্ত হচ্ছে। তবে ইসির খসড়ায় এই উপজেলার নাম লেখা হয়েছে শান্তিনগর।
ধর্মপাশা উপজেলা ভেঙে মধ্যনগর উপজেলা গঠিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ-১ আসনে এই নামটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এতে এই আসনের সীমানার পরিবর্তন আসছে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যা হিসাবে প্রতি আসনে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ভোটার। আর জনসংখ্যার হিসাবে যদি আসনের সীমানা করি তাহলে দেখা যাবে যে কোনো কোনো জেলায় একটা আসন হবে। আবার কোনো কোনো জেলা থেকে আসন কেটে এনে অন্য জেলায় দিতে হবে। যেমন ঢাকায় যদি পাঁচ লাখ ৫০ হাজারের ভিত্তিতে দিই, তাহলে আরও ১০টা আসন বাড়াতে হবে। গাজীপুরে পাঁচটা, চট্টগ্রামে দুইটা, খুলনায় মনে হয় দুইটা বাড়াতে হয়, রাজশাহীতে বাড়াতে হয়। এভাবে যদি সব শহরে চলে আসে আসন, তাহলে অন্য জেলায় তো আসন হারাবে। এজন্যই প্রশাসনিক ও ভৌগলিক অখÐতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আইনেও তাই বলা হয়েছে।