২০ এর কম বয়সীরা গাড়ির কন্ডাক্টর হতে পারবে না

27

মনিরুল ইসলাম মুন্না

বাস, মিনিবাস কিংবা লেগুনার কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার হতে পারবে না ২০ বছরের কম বয়সীরা। এমন নিয়ম রেখে ‘সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২’ করেছে সরকার। সম্প্রতি ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে। গতকাল রবিবার সড়ক পরিবহন বিধিমালা প্রকাশের খবর পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হবে কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত অন্য কোনো কর্মচারী। আর কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স মঞ্জুরের শর্তে বলা হয়েছে, বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
কন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা পঞ্চম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং সুপারভাইজারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণের ৩০ দিন আগে নির্ধারিত ফরমে নবায়নের জন্য লাইসেন্স ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পর আবেদন করলে মূল ‘ফি’র সঙ্গে প্রতি বছর বা এর অংশের জন্য বার্ষিক ‘ফি’র শতকরা ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত ‘ফি’ দিতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গণপরিবহন চালানো অনুমতিপত্র (পিটিএ) এবং কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স থাকতে হবে। নিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট ফরম অনুযায়ী নিয়োগপত্র এবং পরিচয়পত্র দিতে হবে। উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তিপত্র হতে হবে। গণপরিবহনে চালক, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডোপ টেস্ট সনদ থাকতে হবে।
পরিবহনের চালক, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারকে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬’ অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন ও আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। নির্ধারিত কর্মঘণ্টা (একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি নয়, কমপক্ষে আধাঘণ্টা বিশ্রাম দিয়ে আবার তিন ঘণ্টা অর্থাৎ একদিনে আট ঘণ্টার বেশি নয় এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি নয়) অনুযায়ী গণপরিবহনে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিধিমালাটি চূড়ান্ত হয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। দীর্ঘ চার বছর পর এবার তা প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা যায়, সড়ক পরিবহন আইন পাস হয় ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। ৮ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকরের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু আইন পাসের পর চার বছরেও বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এর শতভাগ প্রয়োগ আটকে ছিল।
নিরাপদ সড়ক চাই’ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজিব পূর্বদেশকে বলেন, নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের জন্য আইনের কার্যকর ভ‚মিকা থাকা দরকার। বিধিমালা না থাকায় এত দিন আইন অকার্যকর ছিল। চার বছরে বিধিমালার কাজ শেষ করতে পারায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এটি আরও আগে প্রকাশ করা দরকার ছিল। পরিবহন মালিকদের কারণে সরকার এত দিনেও আইন বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে এখন থেকে যাতে সড়ক আইন শতভাগ বাস্তবায়ন করে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিধিমালাটি প্রকাশ করার ফলে এখন থেকে সড়ক পরিবহন আইন সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করা যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. শফিকুজ্জামান ভূঞা।
তিনি পূর্বদেশকে বলেন, এতদিন ধরে আইনের বিধিমালা প্রকাশ না হওয়াতে আংশিক আইন প্রয়োগ করা হতো। তবে এখন থেকে সম্পূর্ণরূপে আইন প্রয়োগ করতে পারবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন আইনের মোট ১২৬টি ধারার মধ্যে ২৯টি ধারায় পরিবর্তন এনে সংশোধিত আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। পরে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নিতে গত ২০২১ সালের মে মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খসড়া তোলা হয়েছিল। এরপর ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার।