১৫ দিনে সড়কে ২৭৩ জনের মৃত্যু

9

মহামারিকালের ঈদ যাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের ছয় বছরের চেয়ে বেড়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল শুক্রবার সমিতি সংবাদ সম্মেলনে জানায়, কোরবানি ঈদের আগে ও পরের ১৫ দিনে দেশের সড়ক ও মহাসড়কে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন।
করোনা ভাইরাস মহামারিকালে দ্বিতীয় কোরবানি ঈদের সময় কঠোর লকডাউন শিথিল থাকলে আট দিন গণপরিবহন চলাচল করে।
অন্যদিকে ঈদের পরদিন থেকে আবার কঠোর লকডাউন শুরু হলে গত সাত দিনে বিধি-নিষেধের মধ্যেও বিভিন্ন ভাবে অনেকেই ঢাকায় ফিরেছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন।
সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মত এবারও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে জানান তিনি। মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক এবং অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এর আগে ২৬ জুলাই সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে ঈদ-উল আযহা ঘিরে ১১ দিনে মোট ১৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০৭ জনের প্রাণহানি ও ৩৮৯ জন আহত হয়েছেন বলে তুলে ধরা হয়।
গতকাল শুক্রবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও স্বল্পসময়ের জন্য গণপরিবহন চালু করায় সড়কে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যান বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে একসাথে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে বিগত ৬ বছরের তুলনায় এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহাণি দুটোই বেড়েছে’।
তবে সংবাদ সম্মেলনে আগের ঈদের সময়ের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান জানানো হয়নি।
সড়ক, রেল ও নৌ পথে মোট দুর্ঘটনা আরও বেড়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ১৪ জুলাই থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ৪৪৭ জন আহত হয়েছে।
‘এই সময়ে রেলপথে ৯টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত এবং ২১ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা মিলেছে’।
সড়ক, রেল ও নৌ পথে মোট ২৬২টি দুর্ঘটনায় ২৯৫ জন নিহত ও ৪৮৮ জন আহত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার পর ২৫ জুলাই থেকে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহাণি কমতে থাকে’।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, বরাবরের মত এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ৮৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬.২৫ শতাংশ, নিহতের ৩৪.০৬ শতাংশ এবং আহতের ১৩.১৯ শতাংশ প্রায়। এই সময়ে সড়কে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৮৭ জন চালক, ৫৩ জন পথচারী, ২৭ জন নারী, ১৭ জন শিশু, ৯ জন শিক্ষার্থী, ৯ জন শিক্ষক, ১৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ২ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। খবর বিডিনিউজের
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘বিগত ঈদগুলোতে সরকারের নানা মহলের তৎপরতা থাকায় দুর্ঘটনার লাগাম কিছুটা টেনে ধরা সক্ষম হলেও লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে বেড়েছে’।
তার অভিযোগ, ‘সরকার সড়কের অবকাঠামোর উন্নয়নে যতটা মনযোগী সড়ক নিরাপত্তায় ততটা উদাসীন। বিগত একযুগে ধারাবাহিকভাবে সড়ক নিরাপত্তায় নানা প্রতিশ্রুতি, নানা চমকপ্রদ বক্তব্য, নানা আশ্বাস, নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনকিছুই যেন বাস্তবায়নে আলোর মুখ দেখে না। এরই মধ্যে বাস্তবায়নের আগেই সড়ক আইন আরও দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানো কঠিন হয়ে পড়েছে’।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।